বিয়ে করতে বসেছেন। টোপর মাথায় বিয়ের পিঁড়িতে, অথচ বর নাকি টাকা গুনতেই জানেন না। পরীক্ষা করে দেখা গেল, মিথ্যে গুজব নয়; সত্যিই বর ন্যূনতম হিসাবটুকুও জানেন না। আর তা জানার পর বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিলেন কনে। অন্য অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও বিয়ে ভেঙে দিলেন তিনি। আসুন শুনে নিই সেই ঘটনা।
দুজন মানুষ একরকম হন না কিছুতেই। তবু দুজন মানুষ যখন বিয়ের মতো সম্পর্কের বাঁধনে বাঁধা পড়েন, তখন যতটা সম্ভব পরস্পরকে চিনে নেওয়ার চেষ্টা করেন। জেনে নেন একে অন্যের পছন্দ-অপছন্দ। যাঁর সঙ্গে সম্পর্কে বাঁধা পড়া, তাঁর মানসিকতার সঙ্গে যদি একেবারেই মিল না হয়, তবে ভবিষ্যতে সমস্যা শুধু বাড়েই। অথচ সামাজিক ভয় বা চাপের কারণে অনেকেই ঠিক হয়ে যাওয়া বিয়ে ভাঙার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সেই নিরিখেই বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিলেন উত্তরপ্রদেশের বছর একুশের এক তরুণী। পাত্র টাকা গুনতে জানেন না, বিয়ের আসরে বসে এ কথা জানতে পারেন তিনি। আর তা জেনে সেই আসরে বসেই বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
আরও শুনুন: অঙ্ক কষলে তবেই মিলবে ফোন নম্বর, অঙ্কের শিক্ষক চেয়ে অভিনব বিজ্ঞাপন স্কুলে
সাজানো-গোছানো বিয়ের আসর। যেমনটা সচরাচর দেখা যায়, এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। বরযাত্রীরা এসে গিয়েছেন। চারিদিকে হইচই। আনন্দের পরিবেশ সর্বত্র। এর মধ্যেই কেমন যেন অস্বস্তিতে ছিলেন একজন। তিনি পুরুতঠাকুর। অর্থাৎ চার হাত এক করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে। পাত্রের আচার-আচরণ দেখে তাঁর মনে হচ্ছিল, পাত্রের মানসিক অবস্থা ভাল নয়। অবশ্য পেশাদারিত্ব দেখিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান সেরে তিনি চলে যেতেই পারতেন। কিন্তু এভাবে বিয়ে দিতে মনের সায় পাচ্ছিলেন না তিনি। তাঁর সন্দেহের কথা তিনি জানান পাত্রীর পরিবারের সদস্যদের। পুরোহিতের এই সন্দেহকে গুরুত্বই দেন তাঁরা। একটা ছোট্ট পরীক্ষা করা হয়। অবশ্য সেটা যে পরীক্ষা, তার আভাস আগেভাগে দেওয়া হয়নি। গোটা তিরিশেক দশ টাকার নোট গুনতে দেওয়া পাত্রকে। আর দেখা যায়, তিনি তা কিছুতেই করে উঠতে পারছেন না। বোঝা যায়, এই সাধারণ হিসাব করার মতোও অবস্থায় নেই পাত্র। কথা কানে ওঠে পাত্রীর। আর প্রায় তখনই এই বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিয়ের আসর ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি।
আরও শুনুন: ৫৭ সন্তানের ‘জনক’, তবু বিয়ের পাত্রী পেতে নাজেহাল বাস্তবের ‘ভিকি ডোনার’
পাত্রীর পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, এক পরিচিত ব্যক্তির সূত্রেই এই বিয়ে ঠিক হয়। পুরোটাই বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। পাত্রের মানসিক পরিস্থিতি অন্যরকম হতেই পারে, তার জন্য যদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তা করানো যেতে পারত। কিন্তু সে কথা সম্পূর্ণ গোপন করা হয়েছে তাঁদের কাছে। আর তা জানার পরেই তরুণী বিয়েতে নারাজ হয়েছেন। তাঁর সিদ্ধান্ত জানার পর পাত্রপক্ষের তরফে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেন অনেকেই। কিন্তু তরুণী তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। সম্পর্ক শুরুর ক্ষেত্রেই যে জটিলতা দেখা দিয়েছে, তার ফল যে ভাল হবে না তা বোধহয় বুঝেছিলেন ওই তরুণী। আর তাই বিয়ে ভাঙার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন তিনি। আগুপিছু না ভেবে বিয়ের মতো বাঁধনে জড়িয়ে পড়া আর পবর্তীকালে সমস্যার শিকার হওয়ার ঘটনা কম নয়। সেদিক থেকে বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে ব্যতিক্রমী নজিরই গড়লেন উত্তরপ্রদেশের এই তরুণী।