আর এস এস, বিজেপির রাজনৈতিক আদর্শের মোকাবিলা করতেই ভারত-জোড়ো-যাত্রায় নেমেছেন রাহুল গান্ধী, আর এই যুদ্ধে তিনি ফিরে গেলেন ভারতযুদ্ধ অর্থাৎ মহাভারতে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে কৌরবদের সঙ্গে তুলনা করলেন। কোন কোন অনুষঙ্গে রাহুলের মুখে ফিরে এল মহাভারতের কথা? আসুন শুনে নিই।
যা নেই ভারতে, তা নেই ভারতে- সেই চিরন্তন কথাটিই আবার মনে করিয়ে দিলেন রাহুল গান্ধী। মহাভারতের সময় বদলায়, কিন্তু প্রাসঙ্গিকতা যে বদলায় না, আজকের ভারতের নিরিখে উদাহরণ তুলে ধরে ধরে সেই ব্যাখ্যা করলেন তিনি। আর তাঁর বিচারে আরএসএস হল একুশ শতকের কৌরব।
আরও শুনুন: ‘নারীশক্তিই এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশকে’, নারীদের ভারত-জোড়ো-যাত্রায় আত্মবিশ্বাসী কংগ্রেস
রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা এই মুহূর্তে হরিয়ানায়। কেবলমাত্র মহিলারাই যাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, এমন দৃশ্যেরও সাক্ষী থেকেছে দেশবাসী। যা নিয়ে রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী কংগ্রেস। দলের আশা, নারীশক্তিই ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই হরিইয়ানার মাটিতে দাঁড়িয়েই এবার রাহুল ফিরিয়ে আনলেন মহাভারত প্রসঙ্গ। এই মাটিতেই হয়েছিল ভারতযুদ্ধ। অতএব মহাভারতের অনুষঙ্গেই আজকের ভারতবর্ষের সংকট তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ‘একুশ শতকের কৌরবদের কথা আমি আপনাদের বলছি। তাঁদের পরনে খাকি হাফ প্যান্ট, আর হাতে লাঠি। দেশের সবথেকে ধনী ২-৩ জন ব্যক্তি তাদের সমর্থনে পাশে দাঁড়িয়ে আছেন।’ স্পষ্টতই রাহুলের ইঙ্গিত ছিল স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতিই। আরও খোলসা করে তিনি বলেন, “পাণ্ডবরা কি কখনও গরিব মানুষদের বিপক্ষে কাজ করেছে? নোটবন্দি বা ভুল্ভাবে জিএসটি লাগু করেছে? করেনি।’ মহাভারতের সঙ্গে সমকালীন ভারতকে মিলিয়ে রাহুল আরও বলেন, “মানুষ হয়তো বুঝতে পারছে না, কিন্তু যুদ্ধটা এখনও একই আছে। একদিকে আছেন পাঁচ জন তপস্বী, অন্যদিকে একটা গোটা সংগঠন। পাণ্ডবদের পক্ষে সকল ধর্মের মানুষই ছিলেন। ঠিক যেমন এই যাত্রায়। এখানে কেউ কাউকে জিজ্ঞেস করে না যে, কে কোথা থেকে এসেছে, কোন ধর্মের। এই যাত্রা ভালোবাসার পরিসর। পাণ্ডবরাও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, ঘৃণার বাতাবরণে ভালবাসার কথাই বলেছিলেন।” মহাভারতের পর রাহুলের কথায় ফিরে আসে রামায়ণ অনুষঙ্গ। লক্ষ্য অবশ্য ছিল, আর এস এস-এর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানো। সংঘকে লক্ষ্য করে রাহুল বলেন, “ওঁরা কখনও ‘হর হর মহাদেও’ বলেন না। কেননা মহাদেব একজন তপস্বী ছিলেন। আবার ‘জয় সিয়া রাম’ থেকে ওঁরা সীতাকে বাদ দিয়েছেন। রামের সঙ্গে সঙ্গে ওঁরা সীতাকে সম্মান জানাতে পারেন না। ”
আরও শুনুন: ‘ঘৃণার ভূমিতে তৈরি অযোধ্যার রাম মন্দির’, বিতর্কিত মন্তব্য আরজেডি নেতার, প্রতিবাদে বিজেপি
রাহুলের এই রামায়ণ-মহাভারত প্রসঙ্গ টানা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ঘৃণা ও বিভেদের বিরুদ্ধে তিনি বার্তা দিতে চাইছেন। এদিকে তাঁর এই যাত্রাকে একরকম স্বাগতই জানিয়েছে খোদ আরএসএস। রাহুল ঘোষিত ভাবে যে মতাদর্শের বিরোধী। সেই প্রশংসার পরও তাঁর অবস্থান থেকে রাহুল যে সরেননি, তা এই কথায় আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন তিনি। পাশাপাশি ধর্মের নামে যখন বিভেদ দেশকে গ্রাস করেছে, তখন মহাকাব্যের অনুষঙ্গ ধরেই ধর্মের প্রকৃত অর্থ, অর্থাৎ ন্যায়ের সংজ্ঞা মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি। আর তাই আদর্শগত মোকাবিলায় তাঁর কথাতেও ফিরে এসেছে সেই কৌরব-পাণ্ডব প্রসঙ্গ-ই। তবে এই আধুনিক মহাভারতে এই দুই পক্ষের কে জয়ী হবে, সে উত্তর অবশ্য ভবিষ্যতের গর্ভেই তোলা আছে।