সন্ন্যাস নেওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো মোহ-মায়া বিসর্জন দিয়ে ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা। স্বাভাবিক ভাবেই সংসারের মায়া ত্যাগ করতে পারলেই মানুষ সন্ন্যাসের পথে পা বাড়ানোর কথা ভাবে। একবার সন্ন্যাসী হয়ে গেলে তাঁরা আর সংসারে ফিরে আসেন না। কিন্তু এই নিয়মের ব্যতিক্রমও ঘটেছে সাম্প্রতিক এক ঘটনায়। দীর্ঘ ২৪ বছর সন্ন্যাস জীবন কাটানোর পর, বিয়ে করেছেন এক সন্ন্যাসিনী। তাও আবার তাঁরই মতো অন্য এক সন্ন্যাসীকে। কীভাবে সম্ভব হল এমন কাণ্ড? আসুন, শুনে নিই।
প্রায় ২৪ বছর আগে গৃহত্যাগী হয়েছিলেন ঈশ্বর সাধনার উদ্দেশ্য নিয়ে। সন্ন্যাস গ্রহণ করে পুরোদস্তুর সংযমী জীবন কাটিয়েছেন জনৈক সন্ন্যাসিনী। কিন্তু আচমকা এক ঘটনায় সম্পূর্ণ বদলে যায় তাঁর জীবন। ঈশ্বরের বদলে হঠাৎ দেখা হওয়া এক গৃহত্যাগী সন্ন্যাসীকেই তিনি দিয়ে ফেলেন মনের ঘরের চাবিকাঠি। কিছুদিনের মধ্যেই পরস্পরকে ভালোবেসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁরা।
আরও শুনুন: বয়স গড়িয়ে এসেছিল ভালবাসা, বৃদ্ধার ৩৪ লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট ‘প্রেমিকের’
ঘটনার দুই প্রধান চরিত্র হলেন মেরি এলিজাবেথ এবং রবার্ট। যদিও দুজনের নামের সঙ্গে নির্দিষ্ট উপাধি ছিল। যা সন্ন্যাস গ্রহণের পর তাঁরা পেয়েছিলেন। কিন্তু আচমকা এক ঘটনায় তাঁদের সেই পরিচয় বদলেছে। এঁরা দুজনেই মার্কিন মুলুকের বাসিন্দা। দুজনেই সে দেশের দুই বিখ্যাত কনভেন্টে ঈশ্বর সাধনায় নিয়োজিত ছিলেন। বিশেষত এলিজাবেথ নাকি প্রায় ২৪ বছর ধরে কঠোর সন্ন্যাস জীবন যাপন করেছেন। জানা গিয়েছে, তিনি নাকি বাইরের জগতের সঙ্গে কোন যোগাযোগই রাখতেন না। সারাদিন নিজের ছোট্ট ঘরে বসে ঈশ্বর চিন্তায় ব্যস্ত থাকতেন। হঠাৎ একদিন তাঁদের মঠে আসেন রবার্ট নামে এক সন্ন্যাসী। যিনি সেই সময় অক্সফোর্ডের এক চার্চের খ্রিস্টান ভিক্ষু ছিলেন। তাঁর আসার খবর পেয়ে এলিজাবেথের মঠাধ্যক্ষ নির্দেশ দেন অতিথির আপ্যায়নে যেন কোনও ত্রুটি না থাকে। এলিজাবেথ সাধারণত এইসব দায়িত্ব কাঁধে নিতেন না। কিন্তু বিশেষ কারণে সেইসময় রবার্টের আপ্যায়নের জন্য মঠে আর কেউ ছিলেন না। অগত্যা এলিজাবেথের কাঁধেই সব দায়িত্ব এসে পড়ে। গল্পের শুরু এখান থেকে। খাওয়া-দাওয়ার সূত্রে প্রথমে বেশ খানিকটা সময় এক ঘরে কাটান এলিজাবেথ ও রবার্ট। তারপর নানান গল্পকথার মাঝে তাঁদের মঠের পরিবেশ রবার্টকে ঘুরিয়ে দেখান এলিজাবেথ। এরইমাঝে আচমকা রবার্টের হাতে ছোঁয়া লাগে এলিজাবেথের। আর তারপরেই নাকি অদ্ভুত এক শিহরন খেলে যায় সন্ন্যাসিনীর শরীরে। পরবর্তীকালে নিজেই সেকথা স্বীকার করেন তিনি। এবং এও জানান সেদিন রবার্টের মনেও এমন শিহরন জন্মেছিল কিনা তা নিয়ে বেশ আশঙ্কায় ছিলেন তিনি। কিছুদিন পর দেখা যায় তাঁর আশঙ্কাই সত্যি। মঠ থেকে ঘুরে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই এলিজাবেথকে চিঠি পাঠিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন রবার্ট। যা দেখার পর রীতিমতো ঘাবড়ে যান এলিজাবেথ। প্রথমত সন্ন্যাস জীবনের নিয়ম অনুযায়ী এভাবে বিয়ে করার কোনও অধিকার তাঁর নেই। দ্বিতীয়ত তিনি কিছুতেই বুঝতে পারেন না, যে মাত্র কয়েকদিনের আলাপেই তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব কীভাবে দিলেন রবার্ট। স্বাভাবিক ভাবেই চিঠির কোনও উত্তর পাঠাননি এলিজাবেথ।
আরও শুনুন: কমবয়সি মেয়েদের সঙ্গে প্রেমের ঝোঁক, পুরুষদের প্রবণতাকে তুলোধোনা মিয়া খালিফার
কিন্তু এখানেই ঘটনার শেষ নয়। এরপর মাঝেমধ্যেই আশেপাশে রবার্টের ধর্মীয় সভা থাকলে লুকিয়ে লুকিয়ে তা দেখতে যেতেন এলিজাবেথ। এভাবেই বেশ কয়েকবার তাঁর বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়ে পড়েন এলিজাবেথ। তিনি বুঝতে পারেন, সেই প্রথম ছোঁয়াতেই তাঁরা একে অপরের প্রেমে পড়েছিলেন। কিন্তু মঠের নিয়ম ভেঙে বিয়ে করার সাহস তাঁর ছিল না। তাই নিজের প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নেই রাতের অন্ধকারে মঠ ছেড়ে চলে যান এলিজাবেথ। কোথায় যাবেন সে বিষয়ে আগেই ঠিক করে দিয়েছিলেন রবার্ট। তাঁর ভরসাতেই এমন দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন এলিজাবেথ। যদিও এই কাজ মোটেও সহজ ছিল না। তবু সমস্ত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে অবশেষে একে অপরের সঙ্গে মিলিত হন তাঁরা। দুজনেই নতুন করে জীবন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। নিজেদের যাবতীয় পরিচয় ছেড়ে তাঁরা চলেও যান অন্য দেশে। সেখানেই বিয়ে করে সুখে শান্তিতে জীবন শুরু করেন রবার্ট ও এলিজাবেথ। তারপর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। এতদিন নানা আশঙ্কায় সর্বসমক্ষে তাঁদের প্রেম-কাহিনির কথা তাঁরা বলেননি। কিন্তু তাঁদের এই গল্প নেটদুনিয়ায় প্রকাশ পেতেই ব্যাপক ভাবে সমর্থন জানিয়েছেন নেটিজেনরা। যা দেখার পর তৃপ্ত হয়েছেন এই দম্পতিও।