মাত্র এক পয়সার বিনিময়ে চিঠি পাঠানোর সুযোগ করে দিয়েছিল ডাকঘর। আর সেখান থেকেই এল ক্রিসমাস কার্ড পাঠানোর ভাবনা। যা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেল বড়দিনের উৎসবের সঙ্গে। আসুন, শুনে নেওয়া যাক ক্রিসমাস কার্ডের গোড়ার গল্প।
আজকে যে বড়দিনের উৎসবে শামিল হতে পার্ক স্ট্রিট আর বো ব্যারাকে ভিড় জমাই আমরা, প্রথমদিকে খাস বিলেতেও সে উৎসবের এত রমরমা ছিল না মোটেই। তখনও যিশুর জন্মদিনটি নিতান্ত ধর্মীয় উৎসবের মতো করেই পালন করা হত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, নাগরিক জীবনের বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সেই উৎসবই এক পারিবারিক এবং সামাজিক উৎসবের চেহারা নিল। এদিক নাগরিক সভ্যতা মানেই মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে আরও, কাজের জন্যই বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গাতেও যেতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে উপনিবেশ স্থাপনের জেরে অনেক সাহেবই তখন দেশছাড়া। কিন্তু পরিবার ছাড়া কি আর উৎসব জমে? বন্ধুবান্ধব, পরিবার পরিজন থেকে দূরে থাকা মানুষগুলোর কাছে সেই পরিবারের ছোঁয়া এনে দিয়েছিল ক্রিসমাস কার্ড।
আরও শুনুন: ‘মা-বাবার জন্য টাকা চাই’, দুঃখের দিন ঘোচাতে সান্তা ক্লজকে চিঠি ৮ বছরের খুদের
কেন শুরু হয়েছিল এই ধরনের কার্ড? সেও আরেক গল্প।
আসলে সেই সময় বিলেতে মাত্র এক পয়সায় চিঠি পাঠানোর একটি বিশেষ সুবিধা চালু করেছিল পোস্ট অফিস। সেটা ১৮৪০ সালের কথা। এর আগে পর্যন্ত চিঠির ওজন আর গন্তব্যের দূরত্ব হিসেব করে ডাকমাশুল ধার্য করা হত। বড়লোকেরা ছাড়া খুব একটা কেউ ডাকে চিঠি পাঠাতেন না। এই অবস্থায় হেনরি কোল নামে এক সরকারি অফিসার পরিকল্পনা করেন, বিলেতের এক পয়সা, অর্থাৎ এক পেনি দিয়েই একটি পোস্টকার্ড পাঠানো যাবে। সাধারণ মানুষকে চিঠি পাঠানোর উপায় করে দিল এই ‘পেনি পোস্ট’। কিন্তু তারপরেও ডাকঘরের লাভের খাতায় তেমন তারতম্য দেখা গেল না। তাই নতুন কিছু ভাবতে বসলেন ওই আধিকারিক। বন্ধু জন হর্সলি, যিনি পেশায় ছিলেন ছবি-আঁকিয়ে, তাঁর সঙ্গে অনেক আলাপ আলোচনার পর সিদ্ধান্তে আসা গেল, সুন্দর ছবি দিয়ে একটি পোস্টকার্ড বানানো যাক। পোস্টকার্ডের মতো এক পেনি ব্যয় করেই সেই কার্ড পাঠানো যাবে। কোনও উৎসবে দূর থেকে শুভেচ্ছা জানাতে এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে? বড়দিন ততদিনে জনপ্রিয় উৎসবের চেহারা নিয়েছে, আর সেই উপলক্ষেই প্রবাসী আত্মীয়-বন্ধুদের উৎসবের আমেজ দিতে এই কার্ড বেছে নিলেন অনেক মানুষই। আজকের ডিজিটাল যুগে হয়তো এর গুরুত্ব বোঝা যাবে না, কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকার সেই দিনগুলিতে উৎসবপ্রিয় মানুষের কাছে বড়দিনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল ক্রিসমাস কার্ড।