নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও। রাজনৈতিক নেতাদের ভরসা না করে তাই নিজেই গ্রামে সেতু বানানোর উদ্যোগ নিলেন এই ব্যক্তি। তার জন্য বন্ধক দিলেন স্ত্রীর গয়নাও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বিগত দুই নির্বাচনের আগেই ভূরি ভূরি প্রতিশ্রুতি মিলেছিল। গ্রামের নদীটির উপরে সেতু তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাই, যাতে ওই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুগম হয়। কিন্তু সেইসব প্রতিশ্রুতির কোনোটিই এতদিনেও বাস্তবায়িত হয়নি। তাই নেতাদের ভরসায় না থেকে নিজের কাঁধেই সেই দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন রঞ্জিত নায়ক নামে এক যুবক। এমনকি ওই সেতু বানাবার জন্য নিজের স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিতেও তিনি পিছপা হননি। এমনটাই ঘটেছে ওড়িশার রায়গড়া জেলার গুঞ্জারামপাঞ্জারা গ্রামে।
আরও শুনুন: পাকিস্তানে নববধূকে গাধা উপহার স্বামীর, কারণ জেনে মুগ্ধ নেটিজেনরা
ওড়িশার ওই প্রত্যন্ত গ্রামে মাত্র শ-খানেক পরিবারের বাস। গ্রামে কোনও হাসপাতাল নেই। কেউ অসুস্থ হলে তাকে নিয়ে যেতে হয় পাশের জেলা কালাহান্ডির হাসপাতালে। এদিকে যাওয়ার পথে যে নদী পেরোতে হয়, তার উপরে কোনও সেতু নেই। নদীটি তেমন গভীর না হলেও তার স্রোত যথেষ্ট। পায়ে হেঁটে ওই নদী পেরোতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়, এমনকি কেউ কেউ ভেসে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনাও একেবারে বিরল নয়। তাই ওই নদীর উপর সেতু তৈরি হওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষা ছিল গ্রামবাসীদের। কিন্তু দু-দুটি নির্বাচনের পরেও সে কাজের কোনও উদ্যোগ না দেখে আর ধৈর্য রাখতে পারেননি রঞ্জিত। তাই চলতি বছরে নিজেই ওই সেতু বানাবার উদ্যোগ নেন তিনি।
২৬ বছর বয়সি ওই যুবক পেশায় ট্রাক ড্রাইভার। কংক্রিটের সেতু বানানোর মতো সম্বল তাঁর ছিল না। কিন্তু তাতে দমে যাননি তিনি। ঠিক করে ফেলেন, বাঁশ কাঠ এসব দিয়েই সেতু বানাবেন তিনি। এ কাজে রঞ্জিতকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন তাঁর বাবা কৈলাস নায়কও। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। কাজ শুরু করার পর দেখা যায়, যা পরিকল্পনা ছিল তার চেয়ে আরও বেশি কাঠ ও বাঁশের প্রয়োজন। ফলে খরচও বেড়ে যায় একধাক্কায়। এর জন্য রঞ্জিত প্রস্তুত ছিলেন না। কিন্তু তাঁরা পিছু হটেননি। গরিব পরিবারটির একমাত্র সম্বল ছিল যে সামান্য গয়নাগাঁটি, নিজের স্ত্রীর সেই গয়নাগুলিকেই ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বন্ধক দেন ওই যুবক। আর তারপরে ফের নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন তাঁরা। সম্প্রতি শেষ হয়েছে সেতু নির্মাণের কাজ। একটি মোটরবাইকের ভার বহন করতে সক্ষম ওই সেতু, এমনটাই দাবি ওই যুবকের।
আরও শুনুন: বেঁচে ফিরলেন ‘নিহত’ তরুণী, ঘটনায় হতবাক খুনের দায়ে জেলবন্দি আসামি
রঞ্জিতের এই কাজে গোটা গ্রামের যে প্রভূত উপকার হয়েছে, সে কথা স্বীকার করছেন গ্রামের সব বাসিন্দাই। যদিও জেলার প্রশাসনের তরফে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রশংসা বা সমালোচনা, কোনও কিছুরই তোয়াক্কা না করে নিজের কাজে মন দিয়েছেন ওই যুবক।