আফ্রিকার জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিল চার বছরের এক খুদে। প্রায় ছদিন ধরে তার কোনও খোঁজও পায়নি কেউ। সবাই ধরেই নিয়েছিল জঙ্গলের হিংস্র জন্তুদের হাতেই প্রাণ গেছে ওই খুদের। কিন্তু সবাইকে অবাক করে ১১ মাইল পথ পেরিয়ে সে ফিরে এসেছিল নিজের বাড়িতে। কেমন ছিল তার সেই দুঃসাহসিক কাহিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সবাই ধরেই নিয়েছিল, কোনও বন্য জন্তুর আক্রমণে নির্ঘাত প্রাণ গিয়েছে তার। কারণ কোনও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পক্ষেই বিনা অস্ত্রে আফ্রিকার ঘন জঙ্গলে রাত কাটানো অসম্ভব ব্যাপার। সেখানে এই খুদের বয়স ছিল মাত্র চার। একাধিক দিন ধরে নিখোঁজ থাকা শিশুটি বাড়ি ফিরবে, এমন আশা করেননি কেউই। কিন্তু সবার ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দীর্ঘ ছ’দিন পর বাড়ি ফিরেছিল এই খুদে যোদ্ধা।
আরও শুনুন: মাছির উপদ্রবে বাপের বাড়ি চলে যান এই গ্রামের বউরা, চিন্তায় অবিবাহিত যুবকরাও
ঘটনার কেন্দ্রস্থল আফ্রিকার আসা নামে এক গ্রাম। জীবনধারণের প্রয়োজনেই পশুপালন করেন সেখানকার বাসিন্দারা। আর পশুচারণের জন্যই জঙ্গলে গিয়েছিল ওই খুদে। অবশ্য তার সঙ্গে ছিল তার দাদারাও। কিন্তু ফেরার সময় এক ভয়ঙ্কর ঝড়ের মুখে পড়ে তারা। সেই ঝড়েই বড়দের থেকে আলাদা হয়ে যায় শিশুটি। শিশুটির হারিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রামের প্রধান বনদপ্তরে খবর পাঠান। শুরু হয় শিশুটির খোঁজ। কিন্তু যথাসম্ভব খুঁজেও শিশুটির কোনও হদিশ মেলেনি। আফ্রিকার গ্রামবাসীদের পক্ষে অনুমান করে নেওয়া কঠিন নয় যে ওই জঙ্গলের ভয়ানক পরিবেশে কারও পক্ষেই বেশিদিন বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। বিশেষত কোনও শিশুর পক্ষে তো নয়ই। এমনকি যে দলগুলি ওই খুদেকে খুঁজতে জঙ্গলে ঢুকেছিল, সেই মানুষেরাও মাঝেমধ্যে দিক হারিয়ে ফেলছিলেন। একসময় সকলেই তাকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেন।
আরও শুনুন: দুই সন্তানের একজন হিন্দু অন্যজন মুসলিম, মহিলার শেষকৃত্যে বাধল জোর বিবাদ
এদিকে আকাশপথে শিশুটির খোঁজ শুরু করেছিলেন রোয়ান কার্ট হার্টলে নামে এক পাইলট। কিন্তু ঘন জঙ্গলের মধ্যে তল্লাশি চালানো দলটিকে অনুসরণ করা সহজ নয়। তাই পাইলটের নির্দেশে নিজেদের শনাক্ত করার জন্য অভিযানের দলটি সাদা কাপড় সঙ্গে রেখেছিল। আকাশ থেকে সেই কাপড় দেখেই তাঁদের অবস্থান বুঝে নিচ্ছিলেন পাইলট। শিশুটি হারিয়ে যাওয়ার পাঁচ রাত পেরোনোর পর অভিযানের দলটি কিছু পায়ের ছাপ খুঁজে পায় জঙ্গলের মধ্যে। একইসঙ্গে তাঁরা দেখেন জঙ্গলের ওই নির্দিষ্ট এলাকায় বৃষ্টির জল জমে আছে। তার থেকেই তাঁরা অনুমান করেন, এই অঞ্চলেই শিশুটি থাকতে পারে। কারণ এখানে থাকলেই সে জল খেতে পারবে। বাস্তবে সেটাই হয়। একটু খুঁজতেই তাঁরা শিশুটিকে দেখতে পান। । ছ’দিন ধরে প্রায় কিছুই না খেয়ে শিশুটির অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। তার সারা গায়ে বিভিন্ন পোকামাকড়ের কামড়ের দাগও দেখা যাচ্ছিল। তবুও সে যে প্রাণে বেঁচে গিয়েছে, এই ঘটনাকেই প্রায় অলৌকিক বলে মনে করছেন সবাই।
দলটিকে অনুসরণ করে সেখানে প্লেন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন রোয়ান নামে ওই পাইলটও। শেষ পর্যন্ত জীবিত অবস্থাতেই গ্রামে ফিরে আসে শিশুটি। জানা গিয়েছে, এই উদ্ধারকে স্মরণীয় করে রাখতেই তার বন্ধুরা নতুন নামকরণ করেছে তার। পাইলট, এই নামের মধ্যে দিয়েই ওই উদ্ধারকারী পাইলটকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে সকলে।