কথায় বলে, চুলের মতো সূক্ষ্ম। কিন্তু চুলের দরুন কখনও কখনও রীতিমতো জটিলতারও সৃষ্টি হতে পারে। আর সে কথাই হাড়ে হাড়ে টের পেল এই কিশোরী ও তার পরিবার। কীভাবে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পেটে এত চুল জমেছে যে খাবার ঢোকার জন্য জায়গা নেই আর এক চুলও। আর সেই কারণেই দিনের পর দিন কিছুই খেতে পারছিল না এই কিশোরী। অবশেষে চিকিৎসকেরা খুঁজে পেলেন রোগের আসল কারণ। অস্ত্রোপচার চালিয়ে তার পেট থেকে প্রায় তিন কেজি চুলের একটি গোলা উদ্ধার করলেন তাঁরা। জানালেন, আসলে এক অদ্ভুত রোগের পাল্লায় পড়েই ঘটেছে এহেন ঘটনা। এহেন রোগের কথা শুনে হতবাক নেটিজেনরাও।
আরও শুনুন: ঠোঁটে ঠোঁট রেখে রেকর্ড, ৫৮ ঘণ্টার দীর্ঘতম চুম্বনে গিনেস বুকে নাম দম্পতির
কী ঘটেছে ঠিক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
জানা গিয়েছে, একাধিক দিন ধরে কিছুই খেতে পারছিল না চিনের ওই কিশোরী। এই সমস্যা নিয়ে শেষমেশ চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয় সে। তাকে হাসপাতালে ভরতি করিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে, মেয়েটির পাকস্থলী পুরোটাই চুলে ভরা। সেখানে খাবার ঢোকার মতো আর জায়গাই ছিল না, এমনটাই জানিয়েছেন তাঁরা। এমনকি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ক্ষুদ্রান্ত্রও। টানা দু’ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার চালিয়ে তার পেট থেকে সেই চুলের গোলা বার করা হয়, যার ওজন ছিল একটা আস্ত ইটের সমান। দেখা যায়, মোট তিন কেজি চুল খেয়ে ফেলেছিল ওই কিশোরী।
চিকিৎসকদের মতে, আসলে এমন কাণ্ড ঘটার জন্য দায়ী একটি মানসিক রোগ। ‘রাপুঞ্জেল সিনড্রোম’ নামের এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা এমন জিনিস খেয়ে ফেলেন, যা আদৌ খাবার নয়। এর মধ্যে যে কোনওরকম আবর্জনা, ছাই, ঘাসপাতা ইত্যাদি সবই থাকতে পারে। এই কিশোরীর ক্ষেত্রে তার খাদ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার নিজেরই মাথার চুল। নিজের মাথা থেকে মুঠো মুঠো চুল ছিঁড়ে খেয়ে ফেলত সে। যার জেরে তার মাথায় প্রায় টাক পড়ে যায়।
আরও শুনুন: মশার কামড়ে কোমায় আচ্ছন্ন, হল ৩০ বার অস্ত্রোপচার, ভয়াবহ অভিজ্ঞতা যুবকের
জানা গিয়েছে, কিশোরীর বাবা-মা কাজের সূত্রে অন্যত্র থাকেন। মেয়েটি দাদু-দিদার সঙ্গে থাকে। যাঁরা তার আচার-আচরণের অসংগতিগুলি সেভাবে খেয়াল করেননি। এই কিশোরীর প্রতি কেউ আরেকটু যত্নশীল হলে এই রোগ এড়ানো যেত বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। সূত্রের খবর, এই রোগটি বিরল হলেও যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩ শতাংশ মানুষের মধ্যে এই রোগের উপসর্গ দেখা যায়। তাই এ বিষয়ে সন্তানদের প্রতি মা-বাবার কর্তব্যের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।