তিনি ‘কিং অফ রোম্যান্স’। অথচ তাঁর চরিত্রদের জন্য নাকি প্রেমের সিনেমা চলে না। তাহলে? রোম্যান্টিক সিনেমা নিয়ে আলাদা মত আছে খোদ শাহরুখ খানের। কী ভাবনা তাঁর?
ভালবাসার মন্ত্র কী? ১৯৯০-এর দশকের পরবর্তী যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলবেন, ‘পলট…পলট…পলট’। এই একটা শব্দের উচ্চারণেই যেন শূন্যের ভিতর ওঠে ঢেউ। আর পর্দায় কিংবা পর্দার বাইরেও, সে ঢেউ তোলার কাণ্ডারি একজনই। তিনি শাহরুখ খান। বলিউডের প্রেমের কাহিনি আর শাহরুখ যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছেন। রাহুল থেকে রাজ- তাঁর অভিনীতি চরিত্ররা যেন আধুনিক প্রেমের পদাবলিতে মিথ হয়ে উঠেছে। অথচ সেই শাহরুখই মনে করেন, শুধু রাহুল বা রাজের জন্য প্রেমের সিনেমা সফল হয় না।
আরও শুনুন: কোনও পোশাকই পছন্দ নয় পরিচালকের, শেষমেশ জ্যাকির গেঞ্জি পরেই শুটিং উর্মিলার
শাহরুখ কেরিয়ারের গোড়ায় অবশ্য রোম্যান্টিক চরিত্রে তেমন অভিনয় করেননি। বরং নায়কসুলভ নয়, এমন চরিত্রই বেছেছিলেন। অভিনেতা হিসাবে গোটা কেরিয়ারে তিনি বহু চরিত্রে রূপদান করেছেন, যা শুধুমাত্র প্রেমিক নয়। তবু, ‘দিলবালে দুলহনিয়া লে জায়েঙ্গে’ বা ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর মতো ছবিগুলো এতটাই সাফল্য পেয়েছে যে হিন্দি সিনেমার রোম্যান্টিক হিরোদের তালিকায় শাহরুখ দিনে দিনে উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছেন। শুধু বাণিজ্যসফল নয়, আধুনিক মন-মেজাজ-মর্জি বুঝেই প্রজন্মের আবেগকে ছুঁতে পেরেছিল এই ছবিগুলি। ফলত শাহরুখ হয়ে উঠলেন অদ্বিতীয় রোম্যান্সের রাজা। পরবর্তীতে পরিচালকরাও তাঁর এই ইমেজের উপর ভরসা রেখেছেন। ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ থেকে ‘বীরজারা’ কিংবা ‘কাল হো না হ’ হয়ে ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ পর্যন্ত পর্দায় তাঁর রোম্যান্টিক জার্নি অফুরান। রোম্যান্টিক নায়কের চরিত্রকেও তিনি ক্রমে ক্রমে অন্য মাত্রা দিয়েছেন। গত তিন দশক ধরে যুবক-যুবতীর মনে প্রেম বলতেই যেন অবধারিত এসেছে শাহরুখের ছবি। এমনটাই ম্যাজিক তাঁর। যুবতীরা চেয়েছেন জীবনে শাহরুখের মতো একজন প্রেমিক। আর যুবকরা চেয়েছে জীবনে শাহরুখের মতো প্রেমিক হয়ে উঠতে। মজা করে যদিও শাহরুখ বলেন, তাঁর মতো প্রেমিক কেউ হয়ে উঠতে পারেন না। তবে তিনি এ-ও বিশ্বাস করেন যে, শুধু রাজ-রাহুলের মতো চরিত্রদের জন্য প্রেমের গল্প সফল হয় না।
আরও শুনুন: জ্বরে পুড়ছে গা, ছিলেন ঋতুমতী… তবু বৃষ্টি ভিজে রোম্যান্টিক গানে অভিনয় রবিনার
তাহলে কী মনে করেন শাহরুখ? সুপারস্টারের মতে, একটা প্রেমের গল্প তখনই সফল হয়, যখন তা মহিলাদের অনুভূতি বা ইমোশনকে গুরুত্ব দেয় অর্থাৎ ‘এমপাওয়ার’ করে। কথাটি যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। ভারতবর্ষের এই পুরুষপ্রধান সমাজে, বহু যুগ হল নারী তাঁর আবেগকে হয় লুকিয়ে রেখেছে, নয় লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছে। একরকম সামাজিক জগদ্দলের চাপে নারীর আবেগ-অনুভূতি অনেক সময়ই চাপা পড়ে গিয়েছে। কাঙ্ক্ষিত গুরুত্ব বা মর্যাদা পায়নি। ঠিক সেই জায়গাটিই চিহ্নিত করতে চান শাহরুখ। বলেন, শুধু ‘উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট’-এর কথা তিনি বলছেন না। বলছেন, নারীর ইমোশনের এমপাওয়ারমেন্টের কথা। ব্যাপারটা কীরকম? নায়ক খোলসা করে জানান, ধরা যাক, প্রিয় পুরুষের জন্য করবা-চওথ ব্রত করেছেন কোনও মহিলা। পুরুষটিও পালটা সেই ব্রত করলেন। এর মানে এই নয় যে, মেয়েটি খালি পেটে থাকছে বলে পুরুষটিও খালি পেটে থাকছে। কিন্তু এই যে মেয়েটির আবেগকে গুরুত্ব বা মর্যাদা দিচ্ছে তাঁর পুরুষটি, সেটাই বাড়তি কিছু মাত্রা যোগ করে। আর তাই তাঁর বিশ্বাস, রোম্যান্টিক পুরুষ চরিত্রদের জন্য পর্দায় প্রেমের সিনেমা হিল্লোল তোলে না। বরং সেই চরিত্ররা যখন নারীর অনুভূতিকে মর্যাদা দেয়, তখনই সফল হয়ে ওঠে সার্থক প্রেমের কাহিনি।
আরও শুনুন: জীবিত ব্যক্তি হিন্দু, মৃত্যুর পর পালটে গেল ধর্ম! শুনে নিন বলিউডের ‘ভুল’-এর গল্প
এমন করে যিনি ভাবতে পারেন, তিনিই তো হতে পারেন কয়েক প্রজন্মের স্বপ্নের প্রেমিক। অভিনয় তো আছেই, শাহরুখ যেন তাঁর ভাবনাতেও বুঝিয়ে দেন, কেন তাঁকে বলা হয় ‘কিং অফ দ্য রোম্যান্স’।