অটোর স্টিয়ারিং-এ হাত মাঝবয়সি এক মহিলার। খুব একটা চেনা দৃশ্য নয়। লোকজন অবাকও হতেন। তবু এই কাজটিই করে চলেছেন জ্যোতি বার্মা। লক্ষ্য একটাই। নিজের ছেলেকে সেনা অফিসার বানাবেন। কিন্তু কেন উপার্জনের এমন কঠিন পথ বেছে নিতে হল তাঁকে? আসুন শুনে নিই তাঁর গল্প।
একমাত্র সন্তানকে বড় করে তুলতে হবে। স্বপ্ন, ছেলে একদিন সেনা অফিসার হবে। আর সেই লক্ষ্য পূরণেই জীবনে কঠিন সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছেন মধ্য প্রদেশের জ্যোতি বর্মা। অটো চালিয়েই উপার্জনের রাস্তা বেছেছেন তিনি।
আরও শুনুন: নগ্ন হয়ে ঘোরাই শখ, নির্জন বাগানের খোঁজ করছেন ৮৬ বছরের বৃদ্ধ
জীবন যে সংগ্রামের, সে কথা জ্যোতি জানেন। তবে জীবনটা অনেক কঠিন হয়ে যায়, যখন স্বামী ছেড়ে যান জ্যোতিকে। জ্যতির সন্তানের বয়স তখন বছর দেড়েক। প্রাথমিক ভাবে মনে হয়েছিল, সব স্বপ্ন বোধহয় থমকে গেল। কিন্তু হাল ছাড়েননি জ্যোতি। মানসিক ভাবে নিজেকে আসন্ন লড়াইয়ের জন্য তৈরি করেন। জীবীকার সন্ধানে প্রথমে বাড়ি বাড়ি গৃহসহায়িকার কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু তাতে আবার হল আর এক বিপদ! স্কুলে তাঁর ছেলেকে এ নিয়ে নানা মশকরার শুনতে হতো। একসময় সে কাজ তাই ছেড়ে দেন জ্যোতি। তখনই ঠিক করেন অটোচালক হবেন।
কিন্তু একজন মহিলা হয়ে অটো চালানো সহজ কথা নয়। কেননা এ পেশাতেই পুরুষদেরই আধিপত্য। তাতে অবশ্য দমে যাননি জ্যোতি। অটো চালানো শিখে তো নিলেন। কিন্তু অটো পাবেন কী করে? নিজের যেটুকু যা সঞ্চয় ছিল এবার তাতেই হাত পড়ল। গয়নার বিনিময়ে কিনলেন অটো। কিন্তু রাস্তায় নেমে পড়লেন সমস্যায়। এক তো যাত্রীদের কেউ কেউ এই নিয়ে মজা করতেন! মহিলা অটোচালককে মেনে নিতে পারতেন না তাঁরা। অন্যদিকে অন্য অটো চালকরাও তাঁকে সহ্য করতে পারতেন না। অনেক সময়, নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে দাঁড়াতে পর্যন্ত দিতেন না। তবে এই সব প্রতিকূলতাকে হেলায় হারিয়েছেন তিনি। লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন একটাই লক্ষ্যে। ছেলেকে আর্মি অফিসার করে তুলতে যত কষ্টই সহ্য করতে হোক না কেন, তার জন্য তিনি ছিলেন তৈরি।
আরও শুনুন: ছোট্টবেলার প্রেমিকা ক্যানসারে মৃত্যুপথযাত্রী, গোটা হাসপাতাল সাজিয়ে বিয়ের আয়োজন যুবকের
দেখতে দেখতে অনেকগুলো দিন পেরিয়েছে। জ্যোতি এখন নিয়মিত অটো চালান। তাঁর ১১ বছরের ছেলে পড়াশোনা করছে মন দিয়ে। মায়ের স্বপ্নপূরণ তার জীবনের লক্ষ্য। আর তাঁর এই লড়াই দেখে যাত্রীরা এখন বলছেন, বহু মহিলার কাছেই অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারেন জ্যোতি বর্মা।