বলিউড মানেই যেন এক স্বপ্নের দুনিয়া। যেখানে কোনও ভুলের অস্তিত্ব নেই, কিংবা ভুল হলেও শেষমেশ সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে ঠিকই। কিন্তু সেই বলিউডেরই একাধিক সিনেমার দৃশ্যে যে বড় বড় ভুল রয়ে গিয়েছে, জানেন কি সে কথা? আসুন, তাহলে শুনেই নিন।
‘রা-ওয়ান’ ছবির কথা মনে আছে? এ ছবিতে দক্ষিণ ভারতীয় হিন্দুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন বলিউডের বাদশা শাহরুখ খান। কিন্তু মৃত্যুর পর দেখা যায় কফিনে শোয়ানো তাঁর মৃতদেহ। খ্রিস্টধর্মের নীতি মেনে শেষকৃত্য হয় তাঁর। এদিকে তারপরেই দেখা যায়, নদীর জলে চিতাভস্ম ভাসিয়ে দিচ্ছেন ওই চরিত্রের স্ত্রী, তথা করিনা কাপুর খান।
আরও শুনুন: কখনোই পিতৃহারা হবে না সন্তানেরা, ৮ পুরুষের থেকে ১১ সন্তান লাভের পর মন্তব্য তরুণীর
এমন বড়সড় অসংগতি? আজ্ঞে হ্যাঁ। এই একটিমাত্র নয়। বলিউডের একাধিক ছবিতেই রয়ে গিয়েছে এই জাতীয় গোলমাল, যা দেখলে অবাক হতে হয়। যেমন ধরুন, হৃতিক রোশন, প্রীতি জিন্টা, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত সুপারহিরো মুভি ‘কৃষ’-এর কথাই। এই ছবিতে দেখা যায়, দু’বছর ধরে সিঙ্গাপুরে রয়েছে রোহিত, এদিকে সেই সময়েই সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়ছে তার স্ত্রী। গল্পের কার্যক্রম অনুসরণ করলে ধরে নিতে হয় দশ মাস নয়, দু’বছর ধরেই অন্তঃসত্ত্বা ছিল প্রীতি অভিনীত চরিত্রটি।
আরও শুনুন: কোনও পোশাকই পছন্দ নয় পরিচালকের, শেষমেশ জ্যাকির গেঞ্জি পরেই শুটিং উর্মিলার
হালের ‘প্যার কা পঞ্চনামা’ ছবিতে তিন বন্ধু ধাবায় এসে পৌঁছেছিল মোটরবাইকে চড়ে। কিন্তু ফেরার সময় বাইকটি যে কোন ম্যাজিকে জিপে পরিণত হয়, তা জানার কোনও উপায় নেই। কিংবা ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’-তে বাইক আরোহী ক্যাটরিনা কাইফকে মনে করুন দেখি। যখন হৃতিক, ফারহান, অভয় দেওলেরা বিদায় নিচ্ছেন, দুই বান্ধবীর কথোপকথনের সময় ক্যাটরিনার পরনে গোলাপি ট্যাংক টপ। আর সেই পোশাকেই হুড়মুড়িয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে যায় লায়লা, প্রিয় মানুষটিকে একবার ছুঁয়ে আসার জন্য। অথচ বাইকটি আন্ডারপাস পেরোনোর পরই দেখা যায় নায়িকার পরনে উঠে এসেছে লাল ফ্রিল দেওয়া অন্য একটি জামা। ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে আবার আরেকরকম গোলমাল। বিয়ের বর সুহাস প্রথম থেকেই মণ্ডপের মধ্যে ছিল। কিন্তু করিনা আর শরমন জোশি বিয়ের মণ্ডপে বসে পড়ার পর সে যে কী করে মূল তোরণ দিয়ে প্রবেশ করে, কে জানে!
আরও শুনুন: বিপাকে পর্ন তারকা! ‘নকল’ বন্দুক দেখে শুটিংয়ে হানা ‘আসল’ পুলিশের
কেবল কন্টিনিউইটির গোলমাল নয়, তথ্যের গোলযোগও দেখা গিয়েছে বলিউডের একাধিক সিনেমায়। আমির খানের ব্লকবাস্টার ছবি ‘লগান’-এর প্রেক্ষাপট ১৮৯২ সাল। সিনেমার সেই বিখ্যাত ক্রিকেট খেলাটিতে দেখা যায়, এখনকার মতোই প্রতি ওভারে ছ’বলে খেলা হচ্ছে। কিন্তু জানেন কি, সেই সময়ে এক ওভারে ৫ বল করার নিয়ম জারি ছিল ইংল্যান্ডে?
‘ভাগ মিলখা ভাগ’ সিনেমাতেও ১৯৫০ সালের পটভূমিতে দাঁড়িয়ে ‘নানহা মুন্না রহি হুঁ’ গেয়ে ওঠেন ফারহান আখতার। যে গানটি, তথা ‘সন অফ ইন্ডিয়া’ সিনেমা মুক্তিই পেয়েছিল তার এক যুগ পরে, ১৯৬২ সালে।
‘পিকে’ সিনেমায় সঞ্জয় দত্ত ১২২৯০ নম্বরের যে ট্রেনে চড়ে দিল্লি এসে পৌঁছান, সেই নম্বরের দুরন্ত এক্সপ্রেস আসলে মুম্বই ও নাগপুরের মধ্যে চলে। এমনকি ট্রেনের গায়ে মুম্বই-এর রেলস্টেশন কল্যাণ-এর নামও দিব্যি পড়া গিয়েছে এই ছবিতে।
বলিউডের এহেন ছোট বড় অসংগতির তালিকা শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু এইসব অসংগতি যেমন বক্স অফিসে কোনও ছাপ ফেলেনি, তেমনই একটুও কমাতে পারেনি ভক্তদের আবেগ আর ভালবাসার জোয়ারকে। প্রিয় নায়কের কথার অনুসরণ করে অনুরাগীরা মেনেই নিয়েছেন, বড়ি বড়ি দেশোঁ মে অ্যায়সি ছোটি ছোটি বাতেঁ হোতি রহতি হ্যায়। বলিউড নিজেই যে একটা গোটা দেশ হয়ে উঠেছে কবে, সে কথা তাঁদের চেয়ে ভাল আর কে-ই বা জানে!