‘কিতনে আদমি থে’ – এই কণ্ঠ শুনলে আর কাউকে বলে দিতে হয় না যে, ইনি হলেন গব্বর সিং। অর্থাৎ আমজাদ খান। সেই আমজাদ খানই কিনা এই কণ্ঠের কারণে বাদ পড়ছিলেন ‘শোলে’ থেকে! অবাক হচ্ছেন! আসুন, তাহলে গোটা গল্পটা শুনেই ফেলি।
চিত্রনাট্য লিখতে বসেছেন সেলিম খান এবং জাভেদ আখতার। বেশ নতুন ধরনের একটা গল্প লেখার কাজ চলছে। বেশ খানিকটা লেখার কাজ ততক্ষণে শেষ হয়েছে। দুজনেই বেশ উপভোগ করছেন। এরপর চিত্রনাট্যে আসবে আর একটা বিশেষ চরিত্র, নাম গব্বর। যথাসময়ে সে এল। দুই লেখক তাঁদের কল্পনা দিয়ে গড়ে তুললেন গব্বরকে। জাভেদ আখতার পরে বলেছিলেন, তাঁর জীবনে লেখা চরিত্রদের মধ্যে যাদের নির্মাণ করতে গিয়ে তিনি মজা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে গব্বর অন্যতম।
আরও শুনুন: কোনও পোশাকই পছন্দ নয় পরিচালকের, শেষমেশ জ্যাকির গেঞ্জি পরেই শুটিং উর্মিলার
লেখার কাজ তো হল। কিন্তু এরকম একটা চরিত্র পর্দায় ফুটিয়ে তুলবেন কে? ঠিক হল, ড্যানি ডেনজংপা এই ভিলেন চরিত্রে রূপদান করবেন। প্রাথমিক কথাবার্তাও হয়েছিল, কিন্তু একটা সমস্যা দেখা দিল। যে সময় শ্যুটিং হওয়ার কথা, তখন ড্যানির অন্য একটা ছবিতে কাজ করার পাকা কথা দেওয়া আছে। তা তিনি ফেলতে পারছেন না। ফলে গব্বরের চরিত্র থেকে সরে দাঁড়াতে হল তাঁকে। এবার কোন অভিনেতাকে নেওয়া হবে? শুরু হল খোঁজ। জাভেদ আখতারের মনে পড়ল, অনেকদিন আগে দিল্লিতে নাটক দেখতে গিয়ে জনৈক অভিনেতাকে তাঁর খুব ভাল লেগেছিল। নাম, আমজাদ খান। সেলিম খানের সঙ্গে কথা বলে তাঁরই খোঁজখবর শুরু করলেন। পাওয়াও গেল সেই অভিনেতাকে। তিনি চরিত্রে অভিনয় করতে এক কথায় রাজি।
আরও শুনুন: জ্বরে পুড়ছে গা, ছিলেন ঋতুমতী… তবু বৃষ্টি ভিজে রোম্যান্টিক গানে অভিনয় রবিনার
কিন্তু আবার বাধল সমস্যা। আমজাদ খানের কন্ঠস্বর যে একেবারেই অন্যরকম! এই স্বর নিয়ে কি গব্বরের চরিত্রে রূপদান সম্ভব? ছবির সঙ্গে জড়িত লোকজনরা বলাবলি শুরু করলেন। গব্বর চরিত্রের জন্য যে ঠিক লোককে নেওয়া হচ্ছে না সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত। খানিকটা দমে গেলেন সেলিম-জাভেদ। তাঁদের রেকমেন্ডশেনের দরুন ছবির ক্ষতি হোক, এমনটা তিনি চান না। অতএব তাঁরা পরিচালক রমেশ সিপ্পিকে জানিয়ে দিলেন, আমজাদের বদলে গব্বরের চরিত্রে অন্য কাউকে নিতে। আমজাদ খান ততক্ষণে বুঝে গিয়েছেন, এ ছবি আর তাঁর করা হচ্ছে না। হতাশ হলেন তরুণ অভিনেতা। কিন্তু একজন যে প্রথম থেকেই তাঁর পাশে আছেন, তা তখনও তিনি জানতেন না। তিনি পরিচালক রমেশ সিপ্পি। পরবর্তীকালে যিনি জানিয়েছিলেন, আমজাদ খানকে প্রথমদিন দেখেই তিনি বুঝেছিলেন, গব্বর যদি কেউ হতে পারে, তবে এই যুবকই পারবে। ফলত যে যাই বলুন না কেন, এমনকী লেখকরা সরে গেলেও, রমেশ সিপ্পি নিজের সিদ্ধান্তে অচল থাকলেন। শেষমেশ গব্বর হলেন আমজাদ খানই।
আরও শুনুন: বিপাকে পর্ন তারকা! ‘নকল’ বন্দুক দেখে শুটিংয়ে হানা ‘আসল’ পুলিশের
আজ মনে হয়, ভাগ্যিস রমেশ সিপ্পি নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরেননি! নইলে কি এরকম গব্বর পেত হিন্দি সিনেমা! দিন বদলে যায়, কিন্তু গব্বরের জনপ্রিয়তা বদলায় না। হিন্দি সিনেমার দর্শকমাত্র তাই চোখ বুজলেই এখনও শুনতে পান গব্বরের সেই অমর কণ্ঠস্বর।