বিয়েতে যৌতুক হিসেবে গাড়ি উপহার পেয়েছেন পাত্র। সেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে ভুলেই গিয়েছেন যে, তিনি গাড়ি চালাতে জানেন না। নতুন গাড়ির চাবি হাতে পেয়েই উদ্যত হলেন টেস্ট ড্রাইভ করার জন্য। কিন্তু তার পরিণত যে এত ভয়ঙ্কর হবে সেকথা ভাবতেও পারেননি তিনি। কী ঘটেছে আসলে? আসুন, শুনে নিই।
কয়েকদিনের মধ্যেই এক হয়ে যাবে চারহাত। তার আগে যৌতুক হিসেবে পাত্রের হাতে নতুন গাড়ির চাবি তুলে দিয়েছেন পাত্রীর বাবা। কিন্তু পাত্র যে চার চাকা গাড়ি চালাতেই জানেন না সে কথা বোধহয় তিনি জানতেন না। গাড়ির চাবি হাতে পেয়েই আনন্দে আত্মহারা হয়ে টেস্ট ড্রাইভে গেলেন পাত্র। তখন সেখানেই দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। হঠাৎই গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সোজা ধাক্কা মারে সেই সদস্যদের। যার ফলে দশ বছরের এক কিশোরী-সহ গুরুতর জখম হন ৫ জন। এবং তাঁদের মধ্যে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পাত্রের কাকিমার।
আরও শুনুন: ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’, ইংরেজদের এই অপমানের বদলা নিতেই জন্ম তাজ হোটেলের
ঘটনার কেন্দ্রস্থল যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ। সেখানকার অকবরপুরের বাসিন্দা অরুণ কুমার পেশায় একজন মিলিটারি পুলিশ। পেশার সূত্রে উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর থাকতেন এই যুবক। বিয়ে উপলক্ষ্যেই নিজের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। বিয়ের আগে অনুষ্ঠিত ‘তিলক’ পর্বের দিন গাড়ির চাবি হবু জামাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় গাড়ির চাবি। উত্তরপ্রদেশ-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও যৌতুক দেওয়া চালু প্রথা। মোটা অঙ্কের টাকা থেকে আরম্ভ করে গয়না, গাড়ি সব কিছুই যৌতুক হিসেবে পাত্রকে উপহার দেওয়ার চল রয়েছে। এক্ষত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যৌতুক হিসেবে পাত্রকে নতুন চার চাকা গাড়ি দিয়েছিলেন পাত্রীর বাবা। কিন্তু পাত্র অরুণ কুমার গাড়ি চালানোর কিছুই জানতেন না। এদিকে চার চাকা গাড়ি উপহার হিসেবে পেয়েছেন, তাই কাউকে নিজের সেই অপারগতার কথা বলতেও পারছেন না। আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে বসেন গাড়িতে। ঠিক করেন নতুন গাড়ি নিজেই একবার চালিয়ে দেখবেন। সেই সময় আশেপাশে তাঁর পরিবারের সদস্যরাই ঘোরাফেরা করছিল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে গেলেই শুরু হয় বিপত্তি। কী করবেন বুঝতে না পেরে ব্রেকের বদলে এক্সলেটরে চাপ দিয়ে ফেলেন অরুণ। ফলত নিমেষের মধ্যে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সামনে থাকা পরিবারের ৫ সদস্যকে সজোরে ধাক্কা মারে সেই গাড়ি। যাঁদের মধ্যে দশ বছরের এক কিশোরী-সহ অরুণের নিজের কাকিমাও ছিলেন। বাকিরা গুরুতর ভাবে জখম হলেও ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান অরুণের কাকিমা সরলা দেবী। জখম হওয়া বাকি সদস্যরা হাসপাতালে ভরতি রয়েছেন।
আরও শুনুন: পর্ন দেখলেই জরিমানা নয় হাজতবাস! ফোনে আপনার কাছেও কি এসেছে হুমকি?
এরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ। পুলিশ সূত্রেই খবর মেলে, কোনও গাড়িই চালাতে জানতেন না অরুণ। তার পরেও উৎসাহের বশে গাড়ি চালানোর ঝুঁকি নিয়ে ফেলেন। আর তাতেই দুর্ঘটনা ঘটে। স্টেশন হাউস অফিসার রণবিজয় সিংহ জানান, তাঁরা ইতিমধ্যেই অভিযুক্তকে হেফাজতে নিয়েছেন। সঠিকভাবে অভিযোগ হাতে পেলেই অরুণের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করা হবে। অপ্রত্যাশিত এই ঘটনায় আচমকাই উৎসবের আনন্দে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।