গর্ভধারণ যেমন মহিলারাই করেন, গর্ভনিরোধক পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়ার দায়ও মহিলারই। দেশের অধিকাংশ পুরুষের বিশ্বাস এখনও এমনটাই। আবার মহিলারা গর্ভনিরোধক বড়ি খেলে তাঁদের খানিক বাঁকা চোখেই দেখে পুরুষ। জাতীয় স্তরের স্বাস্থ্য সমীক্ষায় উঠে এল একের পর এক চমপ্রদ তথ্য। আসুন শুনে নিই।
জনসংখ্যার নিরিখে পৃথিবীতে প্রথম সারির দেশ ভারতবর্ষ। একপ্রকার বাধ্য হয়েই এদেশের সরকার বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গর্ভনিরোধের ক্ষেত্রে যেমন মহিলাদের নিজস্ব কিছু পদ্ধতি আছে, তেমন পুরুষরাও সমান ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারেন এ প্রক্রিয়ায়। তবে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা বলছে, এই ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের অংশগ্রহণের হারই বেশি। কেননা এখনও এক তৃতীয়াংশ পুরুষ মনে করেন, গর্ভনিরোধ আদতে মহিলাদেরই বিষয়। এ নিয়ে পুরুষদের মাথা ঘামানোর তেমন কিছু নেই। আবার যে মহিলারা গর্ভনিরোধক বড়ি খান, তাঁদের প্রতিও খুব একটা ভাল মনোভাব থাকে না পুরুষের।
আরও শুনুন: স্নানের সময়ই মাথায় আসে সৃষ্টিশীল ভাবনা! কারণটা কী?
জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে এসেছে এই ধরনের চমপ্রদ কিছু তথ্য। জানা যাচ্ছে, অন্তত ২০ শতাং পুরুষ বিশ্বাস করেন যে, যে-মহিলারা গর্ভনিরোধক বড়ি খান তাঁদের যৌনজীবনে একাধিক সঙ্গী আছে বা বহু সঙ্গী থাকার সম্ভাবনা আছে। এইরকম ধারণা সত্ত্বেও গর্ভনিরোধের পদ্ধতি নিয়ে সচেতনতা অবশ্য বেড়েছে। বিবাহিত পুরুষ ও মহিলাদের ৯৯ শতাংশই অন্তত যে কোনও এক ধরনের গর্ভনিরোধ পদ্ধতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তবে এক্ষেত্রেও মহিলারাই এগিয়ে এসেছন বেশি। সমীক্ষা বলছে, বিগত কয়েক বছরে প্রায় ৩৮ শতাংশ বিবাহিতা স্টেরিলাইজেশন পদ্ধতির মাধম্যে পাকাপাকি গর্ভনিরোধের পথ বেছে নিয়েছেন। তাই জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটিকেই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন গবেষকরা। কন্ডোম ব্যবহার এবং গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার হার যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে। আবার গর্ভনিরোধক ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে অবিবাহিতা অথচ যৌনসংসর্গে অভ্যস্ত মহিলাদের মধ্যেও। এক্ষেত্রে আবার কন্ডোম ব্যবহারের প্রবণতাই বেশি, অন্তত ২৭ শতাংশ ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিরই আশ্রয় নেওয়া হয়। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি মহিলাদের উপর সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ২০১৫-১৬’র তুলনায় ২০১৯-২০২১’-এ বেড়েছে গর্ভনিরোধক পদ্ধতির ব্যবহার। অর্থাৎ বেড়েছে সচেতনতা। ৫৪ শতাংশ থেকে এই হার বেড়ে হয়েছে ৬৭ শতাংশ।
আরও শুনুন: কন্ডোম, লিপস্টিক বা চকোলেট, সবই নাকি আমিষ! জানেন কি?
এই সচেতনতার নিরিখে অনেকটাই এগিয়ে বাংলা। একইসঙ্গে রয়েছে হিমাচল প্রদেশ ও ওড়িশা। তিনটি রাজ্যেই গর্ভনিরোধক পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়ার হার প্রায় ৭৪ শতাংশ। তার ঠিক পরেই ৫৬ শতাংশ হার নিয়ে রয়েছে বিহার। তবে এই প্রবণতা সবথেকে কম মেঘালয়ে। জাতীয় স্তরের এই সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য দেখে বিশেষজ্ঞদের মত, স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির কারণেই এই সচেতনতার প্রসার মানুষের মনে। যদি এই সুবিধা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, তবে এই হার আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে, যা সহায়ক হবে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও।