সিনেমা জিতে নিয়েছে জাতীয় পুরস্কার। তাতে থাকার কথা স্বয়ং শাহরুখ খানের। তিনি নিজেকে তৈরিও করেছেন চরিত্রের জন্য। হঠাৎ নাকি তাঁকে বাদ দেওয়া হল মূল চরিত্র থেকে। ভাবছেন, এ-ও কি সম্ভব! হ্যাঁ সম্ভব। কিং খানের জীবনের ঝুলিতে আছে এরকম অবিশ্বাস্য গল্পও।
পর্দায় তিনি রোম্যান্সের কিং। বেতাজ বাদশা। একটা গোটা প্রজন্ম তাঁকে দেখেই চুলের স্টাইল থেকে জামাকাপড়ের ধরন, নকল করেছে সবই। যুবকরা তাঁর মতো করেই খুঁজে বেড়িয়েছে তাঁদের সিমরন-কে। ইমপ্রেস করতে চেষ্টা করেছে তাঁদের ‘কিরণ’ বা ‘শান্তিপ্রিয়া-কে। শিখেছে প্রেম করতে। অন্ততপক্ষে চেষ্টা যে করেনি এটুকু বোধহয় বলা যায় না। আর মেয়েরাও বোধহয় তাঁকে দেখেই স্বপ্ন দেখেছে এমনই কোনও প্রেমিকের, যে শাহরুখের মতোই দু-হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নেবে তাঁদের। তাঁর ভাষায় ‘আমিই শেষ সুপারস্টার’। জন্মদিন থেকে দিওয়ালি- তাঁর বাংলোর সামনে ভক্তদের থইথই ভিড়। শাহরুখ তাঁদের কাছে ইষ্টদেবতা, আইকন।
আরও শুনুন: অবহেলা নয়, গল্পের ছলেই বিরল রোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেছে বলিউড
এইসব ভালবাসা-আদর- আহ্লাদ-প্রেম-স্টারডম ইত্যাদি প্রভৃতি থেকে তিনি পপাত ধরণীতলে এসে পড়বেন যদি বলি, শাহরুখকে দিয়ে অভিনয় করানোর পর, একটি সিনেমা থেকে তাঁকে প্রায় বাদই দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
তাহলে গল্পটা খুলে বলা যাক।
সময়টা আটের দশকের শেষাশেষি। শাহরুখ তখন থিয়েটারে কাজ করছেন এবং সিনেমায় ও টিভিতে অভিনয়ের কাজ খুঁজছেন। হঠাৎ একটা সুযোগ এসে যায়। সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী অরুন্ধতী রায়ের লেখা গল্প থেকে সিনেমা তৈরি হবে। মূল চরিত্র না হলেও মোটামুটি বেশ খানিকটা সময় স্ক্রিনে দেখা যাওয়ার মতো একটা চরিত্র পেলেন শাহরুখ। চরিত্রের নাম ছিল ম্যানকাইন্ড (Mankind)। ডিরেক্টর প্রদীপ কৃষ্ণ সিনেমার সব চরিত্রদের নিয়ে ওয়ার্কশপও করালেন। ২৩-২৪-এর শাহরুখ তখন উত্তেজনায় ফুটছেন। ডিরেক্টরের থেকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো শিখছেন প্রথমবার ক্যামেরার সামনে অভিনয় করার সব কলাকৌশল। চরিত্রটার জন্য নিজের চুল-দাড়ি বড় করলেন। অভিনয়ের পক্ষে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ও সাবলীল দেখাচ্ছিল তাঁকে। একেবারে হিরো হওয়ার জন্যেই যেন তাঁর জন্ম। কিন্তু তখনও তো তিনি জানেন না, এই আত্মবিশ্বাসী ও হিরোসুলভ হাবভাবই তাঁর হিরো হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে! যাক গে। সেই শ্যুটিং তো শুরু হল। শ্যুটিং প্রায় যখন শেষের দিকে তখন অরুন্ধতী, সেদিনের শাহরুখকে এসে বলেছিলেন, ‘আসল ম্যানকাইন্ড চরিত্রে যাঁর কাজ করার কথা, তিনি চলে এসেছেন। আমরা তাঁকে নিয়েই সিনেমাটা করব। তোমায় আমরা অন্য একটা চরিত্র দিয়ে দেব।’ এই চরিত্রটা একেবারেই নগন্য। মাত্র দুবার স্ক্রিনে দেখা যাওয়ার কথা চরিত্রটাকে। স্বাভাবিকই হতাশ হয়েছিলেন সেই সময়ের শাহরুখ। তিনি চরিত্রটা করতে চাননি। কিন্তু অরুন্ধতী রায় বা ডিরেক্টর প্রদীপ কৃষ্ণের মুখের উপর সে-কথা বলতেও পারেননি। তিনি কী করলেন, পরদিন দাড়ি কেটে মাথা মুড়িয়ে সেটে ঢুকলেন। অরুন্ধতী তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করায় বললেন, ‘ম্যানকাইন্ডের জন্য ওই লুকটা ছিল এই গে চরিত্রটার জন্য এই লুক।’
এর অনেক পরে বলিউডে প্রায় রাজত্বই করেছেন শাহরুখ। শুধু হিরো নন, হিন্দি সিনেদুনিয়ার অন্যতম অভিনেতাও তিনি। এখন তাঁর ক্ষণিকের উপস্থিতিও সিনেমার টিকিট বিক্রি বাড়িয়ে দেয়। লাভ-ক্ষতির রসায়ন বদলে দেয় বক্স অফিসে। এমন একটা সময়ে খুব সঙ্গত কারণেই ডিরেক্টর প্রদীপ কৃষ্ণ এক ইন্টারভিউয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন যে, শাহরুখের জন্য কি তাঁর কাছে আর কোনও বড় রোল ছিল না? ডিরেক্টরও তাঁর উত্তরে সঙ্গত কারণ বলেছিলেন, ‘In Which Annie Gives It Those Ones’ – সিনেমাটা ছিল, যৌবনের বিভিন্ন দুর্বলতা ও অবুঝপনা নিয়ে তৈরি। আর সেখানে শাহরুখ তখন ভীষণই আত্মবিশ্বাসী। তাঁর মধ্যে হিরোসুলভ ভাবভঙ্গি জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু সিনেমাটায় সেরকম কোনোও চরিত্রের প্রয়োজন ছিল না। তাই নির্দ্বিধায় শাহরুখ খানকে ছেঁটেও সিনেমাটির জন্য এক জোড়া জাতীয় পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন অরুন্ধতী রায় ও ডিরেক্টর প্রদীপ কৃষ্ণ। হিরো হওয়ার জন্য তাঁকে মনের মণিকোঠায় তুলে রেখেছেন ভক্তরা। সেই হিরোর গেরোতেই যে ছবি থেকে প্রায় বাদ পড়তে হয়, এমন গল্পও আছে বলিউডের এই সুপারস্টারের ঝুলিতে।