ইসলাম ধর্মাবলম্বী দেশ পাকিস্তান। আর সেখানেই আছে হিন্দুগুরু আদি শঙ্করাচার্যের স্মৃতি। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের ‘সারদাপীঠে’ থাকা আদি শঙ্করাচার্যের একটি আসন এখনও সযত্নে রক্ষা করে রেখেছেন সে-দেশের নাগরিকরা। ধর্ম-রাজনীতির ভেদাভেদ ভুলে সেই অঞ্চলের মন্দিরগুলিরও দেখভাল করেন তাঁরা।
দিগ্বিজয়ের চূড়ান্ত পর্বে আদি শঙ্করাচার্য পৌঁছেছিলেন প্রাচীন কাশ্মীরের সারদাপীঠ নামে এক হিন্দু তীর্থে। সেখানে অন্যান্য ধর্মের বিজ্ঞজনের সঙ্গে তর্কে জিতে হিন্দুধর্মকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন আদিগুরু। কিন্তু দেশভাগের পর এই পীঠস্থানটির জায়গা হয় পাকিস্তানের মানচিত্রে। ফলে হিন্দুদের পক্ষে সেটির রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এরকম পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন পাকিস্তানের নাগরিকরাই। ধর্ম পরিচয়ে তাঁরা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তবে ধর্ম কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি এক্ষেত্রে। দায়িত্ব নিয়ে হিন্দু ধর্মের এই পীঠস্থানকে রক্ষা করার পণ করেছেন তাঁরা।
আরও শুনুন: শুধু কোজাগরী পূর্ণিমাতেই নয়, ঘোর অমাবস্যা তিথিতেও হয় দেবী লক্ষ্মীর পুজো
কাশ্মীরের নিলাম ভ্যালির কাছে অবস্থিত এই সারদাপীঠে রয়েছে হিন্দু ধর্মের এক প্রাচীন দেবীর মন্দির। ইতিহাস অনুসারে, এর নির্মাণকাল অষ্টম শতাব্দী। এই মন্দির ছিল বিশ্বের অন্যতম পাঠচর্চা কেন্দ্র। এককালে বহু বিদেশি পর্যটক নাকি এখানে জ্ঞান আহরণের জন্য এসেছিলেন। তাই তৎকালীন ভারতে আগত বৌদ্ধ পর্যটকদের বিবরণগুলিতেও উল্লেখ পাওয়া যায় এই মন্দিরের। শুধু তাই নয়, স্থাপত্যকলার দিক থেকেও এক অনন্য কীর্তি এই মন্দির। শোনা যায়, এখানে আদি শঙ্করাচার্যের জন্য নির্মিত এক বিশেষ আসন রয়েছে। অন্য ধর্মের পণ্ডিতদের সঙ্গে তর্কযুদ্ধে শঙ্করাচার্যের জয় লাভের পর যা তৈরি করা হয়েছিল। তবে বর্তমানে হিন্দু ধর্মের ঐতিহাসিক এই স্মৃতি রক্ষা করছেন পাক মুলুকের মুসলমানরাই। তাঁদের মতে, হিন্দুদের কাছে যিনি ‘সারদা দেবী’, মুসলমান ঘরে তিনিই ‘সারদা মাই’। তাই নিজেদের মতো করেই এই ধর্মীয় স্থানের ঐতিহ্য বজায় রাখেন সে-দেশের ইসলাম ধর্মাবলম্বী নাগরিকরা।
আরও শুনুন: মা কালীর বিশেষ কয়েকটি রূপের পুজো করেন না গৃহস্থরা, নেপথ্যে শাস্ত্রের কোন কারণ?
ভারতবাসীর জন্য এই মন্দিরে যাওয়া মোটেও সহজ নয়। সীমারেখা আইনের জাঁতাকলে পড়ে যে কোনও সময় বর্ডার পার করে এই মন্দির চত্বরে পৌঁছে যেতে পারেন না ভারতীয়রা। তবে এই মন্দিরটিকে সর্বসাধারণের জন্য উণ্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য বারংবার চেষ্টা করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। সবটাই যে সফল হয়েছে এমন নয়। তবে শংকরাচার্যের স্মৃতি ধুলোয় মেশেনি। আদিগুরুকে সসম্ভ্রমেই স্মরণ করেন পাক নাগরিকরা। পাশাপাশি পাকিস্তানে আরও বেশ কয়েকটি হিন্দু মন্দির আছে, যেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন সে-দেশের মানুষরাই। ধর্ম পরিচয় কোনওভাবেই বাধা হয়নি ঐতিহ্য রক্ষায়।