গোটা শহরটাই নাকি ভাসমান। তবু তাতে বসতি রয়েছে কয়েক লক্ষ মানুষের। স্কুল যাওয়া থেকে আরম্ভ করে যেকোনো কাজ, সবকিছুর ক্ষেত্রেই এই শহরের মূল পরিবহন ব্যবস্থা হল জলপথ। উহু ভেনিস নয়! তবে কী এই শহরের নাম? কোথায় রয়েছে এই শহর? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
মাকোকো, গোটা পৃথিবীর কাছেই এ এক অবাক বিস্ময়। কারণ আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এই অঞ্চল সম্পূর্ণভাবে ভাসমান। বর্তমানে যেখানে প্রায় ১৩ মিলিয়ন মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। বলাই বাহুল্য দেশের অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি হিসেবেও এই অঞ্চলকেই গণ্য করা হয়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই দেশের নানা প্রান্তের মানুষ কাজের সন্ধানে এখানে এসে ভিড় জমান।
আরও শুনুন: ‘নরকের দ্বার’ থেকে জীবিত ফেরেনি কোনও প্রাণী, কী রহস্য রয়েছে নেপথ্যে?
সাধরণভাবে ভাসমান শহরের নাম বললেই সকলের মাথায় আসে ইতালির ভেনিস শহরের কথা। কিন্তু ভেনিসের থেকে কয়েকগুণ বড় আরও এক ভাসমান শহর রয়েছে আফ্রিকায়। আফ্রিকার অন্যতম জনবহুল শহর লাগোসের একটি অংশ হল এই মাকোকো। পৃথিবীর বৃহত্তম ভাসমান শহর হিসেবেও একেই গণ্য করা হয়। এখানে যাতায়াত করারও প্রধান মাধ্যম হল জলপথ। ক্যানু নামের এক বিশেষ নৌকায় চেপেই যেতে হয় এই শহরের আনাচাকানাচে। স্কুল থেকে শুরু করে অফিস এই শহরে সব কিছুই ভাসমান। সাধারণত একটি করে কাঠের পাটাতনের উপর পিরামিড আকৃতির ঘর বানিয়ে এই শহরের বেশিরভাগ বাড়ি বানানো হয়েছে। তারপর সেই পাটাতনের নীচে কিছু পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ড্রাম জুড়ে দেওয়া হয়। ফলত জলের উপর ভেসে থাকে সেই নির্মানগুলি। উপর থেকে দেখে সম্পূর্ণ ভাসমান শহরে এত মানুষের বসবাস অসম্ভব মনে হলেও, একবার এই শহরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে ভিতরের ছবিটা একেবারেই আলাদা। শহরের রাস্তাঘাটগুলিও বিশেষ উপায়ে তৈরি করা, যা সেগুলিকে জলে ভেসে থাকতে সাহায্য করে।
আরও শুনুন: মাটিতে দাঁড়িয়ে নেই, মেঘের মিনারে ভাসছে এই আশ্চর্য হোটেল
তবে এর সবটাই যে শুধু ভাল আর ভাল, তা নয়। বর্তমানে এই ভাসমান শহরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হতে দেখা যাচ্ছে। আসলে জনসংখ্যা অতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ার দরুন আফ্রিকার এই অঞ্চলের মানুষেরা স্থলভাগে কুলিয়ে উঠতে না পেরে, জলের উপরেই নিজেদের বসতি গড়ে তোলার কথা ভাবেন। পরবর্তীকালে যা এই ভাসমান শহরের জন্ম দেয়। এখন এই ভাসমান শহরেও জনসংখ্যা অতিরিক্ত হয়ে যাওয়ায়, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণও। জলে ঘেরা শহরের, চারপাশের জলে তাই এখন বেড়ে চলেছে, এখানকার বাসিন্দাদেরই ফেলা রোজকার বর্জ্য। স্বাভাবিকভাবেই মাত্রা ছাড়িয়েছে এই অঞ্চলের জলদূষণের পরিমাণ। শুধুমাত্র ওই এলাকার বাসিন্দারাই নন, প্রায়শই পৃথিবীর নানান প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকেরা ভিড় জমান এই ভাসমান শহরে। তাই তাঁদের সামনে এই শহরের এহেন পরিস্থিতি ফুটে ওঠা দেশের জন্য লজ্জাজনক ও ক্ষতিকারক। তাই আফ্রিকার পর্যটন শিল্পের স্বার্থে ও এলাকাবাসীর স্বাস্থ সুরক্ষার জন্য, দূষণ নিয়ন্ত্রণে নানান পদক্ষেপ করেছে সে দেশের সরকার। তবু একথা মানতেই হয়, যেখানে থাকার কথা সাধারণভাবে শুধু আমদের ফ্যান্টাসি হতে পারে, সেখানেই গড়ে উঠেছে পৃথিবীর অন্যতম ঘন জনবসতি।