চুরি হয়ে গিয়েছিল খোদ ব্রহ্মার চোখ। কিন্তু ব্রহ্মার অভিশাপের কারণেই নাকি, তাকে কাছে রাখতে পারেননি কেউই। উলটে এর সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে একাধিক অপঘাত মৃত্যুর ঘটনাও। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
‘ব্রহ্মার চোখ’ বা ব্ল্যাক ওরলভ আসলে বিশ্বের বৃহত্তম কালো হিরেগুলির মধ্যে সাত নম্বর স্থানে রয়েছে। মনে করা হয়, ভারত থেকেই চুরি হয়ে গিয়েছিল এই দুর্লভ হিরে। কিন্তু চোরাই এই রত্নের মালিকানা বেশিদিন কেউই ভোগ করতে পারেননি বলে শোনা যায়। উলটে একাধিক অপঘাত মৃত্যুর কাহিনি জুড়ে গিয়ে আরও কালো হয়ে উঠেছে এই হিরের রং।
আরও শুনুন: ‘নরকের দ্বার’ থেকে জীবিত ফেরেনি কোনও প্রাণী, কী রহস্য রয়েছে নেপথ্যে?
কারও কারও মতে, দক্ষিণ ভারতের কোনও একটি মন্দিরে থাকা ব্রহ্মার মূর্তির চোখ থেকেই এই পাথর চুরি করা হয়েছিল। কোনও এক জেসুইট পাদরির হাত ধরেই ১৯৫ ক্যারেটের এই কালো হিরে দেশের বাইরে পাচার হয়ে যায় বলে মনে করা হয়। এরপর প্রথমবার তার খোঁজ মেলে প্রায় একশো বছরেরও বেশি সময় পর। ১৯৩২ সালে এই হিরেটি বিক্রি করার উদ্দেশ্য নিয়ে আমেরিকায় এসেছিলেন জে ডব্লিউ প্যারিস নামে একজন ইউরোপীয় হিরে ব্যবসায়ী। হিরে বিক্রিও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই ম্যানহাটন শহরের এক বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন ওই ব্যক্তি। জানা গিয়েছিল, হিরেটি হাতে আসার পর থেকেই নাকি প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় ভুগতেন প্যারিস সাহেব, তাঁর ব্যবসাতেও পড়েছিল মন্দার ছায়া।
এর বছর পনেরো পর, ১৯৪৭ সালে হিরেটিকে জড়িয়ে আবার দু-দুটো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। জানা যায়, সেসময় হিরেটি ছিল রাশিয়ার রাজপরিবারের এক মহিলা লিওনিলার কাছে। কিন্তু হিরেটি পাওয়ার পর কেমন যেন পালটে গিয়েছিলেন তিনি। মুছে গিয়েছিল তাঁর মুখের হাসিও। শেষমেশ জ্ঞাতি বোন নাদিয়া ওরলভকে হিরেটি দিয়ে দেন তিনি। আর তার এক মাসের মধ্যেই নাকি প্রাসাদ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিলেন লিওনিলা। অভিশপ্ত হিরে কপালে সয়নি তাঁর বোনেরও। ক্রমশ নিজেকে ঘরে বন্দি করে ফেলেছিলেন নাদিয়া। আর বোনের মৃত্যুর এক মাসের মধ্যেই, একইভাবে আত্মহত্যা করেছিলেন তিনিও। নাদিয়া ওরলভ-এর নামেই হিরেটির নাম বদলে ব্ল্যাক ওরলভ রাখা হয়েছিল।
শেষমেশ হিরেটি হাতে আসে চার্লস এফ উইলসন নামে এক ব্যক্তির। হিরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অভিশাপের কথাও কানে এসেছিল তাঁর। তাই ওই হিরেটিকে তিন খণ্ডে টুকরো করে ফেলেছিলেন তিনি। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় খণ্ডটিই ‘ব্ল্যাক ওরলভ’ নামে পরিচিতি পায়। আশ্চর্যের কথা, এর পর ওই হিরের মালিকানা বদল হলেও, আর কোনও অপমৃত্যুর ঘটনা শোনা যায়নি।