প্রাণীহত্যার বিরোধী, তাই প্রাণীজ সব উপাদানকেই জীবন থেকে বাদ দিতে চান অনেকে। কিন্তু চাইলেই কি আর তা সম্ভব হয়? লিপস্টিক থেকে চকোলেট থেকে কন্ডোম, একাধিক বস্তুর মধ্যে না অজান্তেই লুকিয়ে রয়েছে প্রাণীজ উপাদান। কীরকম। আসুন, তবে শুনে নেওয়া যাক।
ঠোঁটকে রাঙিয়ে তোলার জন্য রংবাহারি শেডের লিপস্টিক মেয়েদের কাছে থাকবে না, তাও কি হয়! কিন্তু এই লিপস্টিকের মধ্যে দিয়ে যে কোনও প্রাণীর দেহাংশও ছুঁয়ে যাচ্ছে আপনার ঠোঁট, জানেন কি সে কথা? কিংবা ধরুন নির্দোষ চকোলেট। তার মধ্যেও নাকি রয়েছে আমিষ উপাদান! যদি আপনি নিরামিষাশী হন কিংবা ‘ভেগান’, তবে অজান্তেই আমিষের ছোঁয়া পেয়ে যাচ্ছেন আপনি। যাঁরা ‘ভেগান’ চিন্তাধারায় বিশ্বাসী, সাধারণ নিরামিষাশীদের মতো কেবল মাছ মাংস বর্জন করেই তাঁরা খুশি নন। দুধ, মাখন ইত্যাদি খাবার, কিংবা প্রাণীর লোম বা শিং দিয়ে তৈরি কোনও জিনিস, এ সবই তাঁদের দুচক্ষের বিষ। কিন্তু মুশকিল হল, যেসব খাবারে আমিষের ছোঁয়া মাত্র থাকার কথা নয়, সেখানেও নানা কারণে বিভিন্ন প্রাণীজ উপাদানের দেখা মেলে। আবার খাবার ছাড়াও এমন অনেক নিত্য ব্যবহার্য জিনিস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। কী সেই জিনিসগুলি? আসছি সে কথাতেই।
আরও শুনুন: ‘আপনি চাইলে বিকিনি পরুন, আমাদের মেয়েদের হিজাব খুলতে হবে কেন?’- হিজাব বিতর্কে মন্তব্য ওয়েইসির
ধরা যাক কন্ডোমের কথাই। কিছু কিছু কন্ডোমকে অতিরিক্ত মসৃণ করে তুলতে ক্যাসেইন নামের একটি প্রোটিন ব্যবহার করা হয়। এই প্রোটিনটি পাওয়া যায় মূলত দুধ থেকে। যে প্রাণীদুগ্ধকে একেবারেই বর্জন করে চলেন ভেগানরা।
লিপস্টিকের কথা তো আগেই বলা হয়েছে, যেখানে কোনও না কোনও প্রাণীজ উপাদান রয়েছে বলেই ধরে নেওয়া যায়। কোনও লিপস্টিকে থাকে পতঙ্গ থেকে সংগ্রহ করা কারমাইন। কোনোটিতে আবার থাকে মৌচাক থেকে প্রাপ্ত মোম বা ‘বি ওয়াক্স’। এমনকি ভেড়ার শরীর থেকে পাওয়া ল্যানোলিন নামের একটি উপাদানও ব্যবহার করে তৈরি করা হয় কোনও কোনও লিপস্টিক। শুধু লিপস্টিকই নয়, অনেক প্রসাধনীতেই প্রাণীজ উপাদানের ব্যবহার রয়েছে। কেশ পরিচর্যার যে কেরাটিন ট্রিটমেন্টের এত নামডাক, সেই কেরাটিনও কিন্তু আসে প্রাণীদেহ থেকেই।
চকোলেট বা ক্যান্ডির মতো নির্দোষ খাবারেও মেলে প্রাণীজ উপাদানের হদিশ। পশুর পাকস্থলী থেকে পাওয়া রেনেট নামের একটি প্রাণীজ উৎসেচক থাকে অনেক চকোলেট পাউডারেই। আর যেসব খাবারে জেলাটিন থাকে, অর্থাৎ যে চিবোলে রাবারের মতো চটচটে এবং নমনীয় হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে প্রাণীজ উপাদান সগৌরবে হাজির। কোলাজেন প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তৈরি হয় জেলাটিন, যে কোলাজেন পাওয়া যায় গবাদি পশুর চামড়া, লিগামেন্ট ও টেন্ডনের মতো অংশ থেকে। অধিকাংশ বিয়ারেও থাকে ইসিনগ্লাস নামে একটি উপাদান, যা বিয়ারকে স্বচ্ছ ও সোনালি করতে ব্যবহার করা হয়। এই উপাদানটি আসলে মাছের পটকার প্রক্রিয়াজাত রূপ। এমনকি ওষুধের মধ্যেও একইভাবে মেলে প্রাণীজ উপাদান। গ্রাফটিং-এর ক্ষেত্রেই হোক, বা পুড়ে যাওয়ার চিকিৎসায় যেসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তাতে ওই জাতীয় উপাদান থাকে।
আরও শুনুন: মন্দির মেরামতের জন্য ১১ লক্ষ টাকা অনুদান মুসলিমদের, সম্প্রীতির অভিনব নজির গড়ল গুজরাটের গ্রাম
আসলে প্রাণী অপ্রাণী উদ্ভিদ সবকিছুর সমন্বয়েই তো জগতের নির্মাণ। তার থেকে কোনও একটি উপাদানকে একেবারে বাদ দিয়ে চলা তাই সত্যিই বেশ মুশকিল।