দৌড়ে পেরোতে হবে বিশ্বের বৃহত্তম মরুভূমি। যিনি এই দৌড় শেষ করতে পারবেন, তাঁরই মাথায় উঠবে বিজয়ীর তকমা। এহেন ভয়ংকর যাত্রাপথের কারণেই এই দৌড়কে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ম্যারাথন। কোথায় ঘটে এহেন প্রতিযোগিতা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
রণক্ষেত্র থেকে একছুটে অমানুষিক দূরত্ব অতিক্রম করে দেশে জয়ের খবর বয়ে এনেছিলেন যে মানুষটি, তাঁকে মনে রেখেই শুরু হয়েছিল ম্যারাথন। কিন্তু অলিম্পিকের এই বিখ্যাত ইভেন্টটিই অন্য দেশে গিয়ে রূপ বদলেছে। কেবল দৌড়ে বিরাট দূরত্ব পার করাই নয়, তার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে ভয়ানক বাধাবিপত্তিও। আর তেমনই এক বিপজ্জনক ম্যারাথনের নাম ম্যারাথন দে সাব্ল। যেখানে প্রতিযোগীদের পায়ের নিচে সবুজ ঘাসের অস্তিত্ব নেই। কারণ দৌড়নোর গোটা ট্র্যাকটাই ধু-ধু মরুভূমির উপর দিয়ে।
আরও শুনুন: এক দিনের সুলতান… দেশের এইসব হোটেলে এক রাত কাটানোর খরচ প্রায় ৪ লক্ষ টাকা
পায়ে হেঁটে একটা মরুভূমি পেরোনো যে মানুষের পক্ষে প্রায় অসাধ্য, ‘চাঁদের পাহাড়’-এ রয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ। আর কেবল ‘চাঁদের পাহাড়’ নয়, বাস্তবেও স্বেন হেডিন (Sven Hedin)-এর মতো পর্যটকদের বিবরণ জানায়, কীভাবে প্রচুর রসদ, জল এবং লোকজন সঙ্গে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন তাঁরা। অথচ তারপরেও কালান্তক মরুভূমিতে বেঘোরে মরতে বসেছিলেন তাঁদের অনেকেই। আর সেই মরুভূমির উপর দিয়েই নাকি একা একা দৌড়ে যেতে হবে প্রতিযোগীদের। এমনটাই নিয়ম ‘ম্যারাথন দে সাব্ল’-এর। তাও যে কোনও মরুভূমি নয়। এই দৌড়ের পুরো পথটাই গিয়েছে সাহারা মরুভূমির উপর দিয়ে। পৃথিবীর এই বৃহত্তম মরুভূমির ২৫১ কিলোমিটার রাস্তা দৌড়ে পার করতে হয় প্রতিযোগীদের। সময় মেলে ৬ দিন। প্রতি বছর দক্ষিণ মরক্কোয় বসে বিশ্বের কঠিনতম এই ম্যারাথনের আসর।
কিন্তু কেন এমন ম্যারাথনের আয়োজন করা হয়েছিল?
আরও শুনুন: ঘরের ছাদ, দেওয়াল নেই… তবু হোটেল ভাড়া ২৬ হাজার টাকা, কেন জানেন?
আসলে এর পিছনেও রয়েছে আসল ম্যারাথন শুরুর গল্পের মতোই এক ঘটনা। জানা যায়, ১৯৮৪ সালে ফরাসি কনসার্ট প্রোমোটার প্যাট্রিক বওয়ার পায়ে হেঁটে একা সাহারা মরুভূমি পার করেছিলেন। ১২ দিনে ৩৫০ কিলোমিটার পথ হেঁটেছিলেন তিনি। তাঁর অনুপ্রেরণায় ১৯৮৬ সাল থেকে সাহারার বুকে শুরু হয় এই ম্যারাথন। যেখানে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম বালির উপর দিয়ে দৌড়ে যেতে হয় প্রতিযোগীদের। যাওয়ার পথেই উঠতে পারে মরুঝড়। মরীচিকা দেখেও বিভ্রান্ত হয়ে পথ হারাতে পারেন কেউ। যেমনটা হারিয়েছিলেন ১৯৯৪ সালের এক ইতালিয়ান প্রতিযোগী। ন’দিন পর উদ্ধার করা গিয়েছিল মউরো প্রোসপারি নামের ওই প্রতিযোগীকে। মরুভূমির মধ্যে একা অতগুলো দিন তিনি বেঁচেছিলেন নিজের মূত্র আর বাদুড়ের রক্ত পান করে। সত্যি বলতে, এই ভয়ংকর প্রতিযোগিতায় জেতা তো পরের কথা, এই কষ্টকর পথ অতিক্রম করতেই পারেন না অধিকাংশ প্রতিযোগী। তবুও, প্রতি বছর এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মতো মানুষের কিন্তু অভাব হয় না। আসলে মানুষের গোটা জীবনটাই যে একটা বড় ম্যারাথনের মতো। যার পদে পদে হার্ডল পেরিয়ে ছুটতে হয়। তবু ফিনিশিং লাইনে পৌঁছোবার অদম্য জেদ নিয়ে ছুটে চলি আমরা সকলেই। কোথাও গিয়ে ম্যারাথন হয়তো হয়ে দাঁড়ায় জীবনের সেই দৌড়েরই প্রতীক।