কথায় বলে, রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী। সে কথা মনে রেখেই হয়তো লক্ষ্মীপ্রতিমার আদলেই ভারতীয় মেয়েদের সাজিয়ে তোলার কথা বলেছিল দেশের প্রথম প্রসাধনী সংস্থা। হ্যাঁ, ‘ল্যাকমে’ নয়, ‘লক্ষ্মী’ নামেই সেই প্রকল্প শুরু করেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এ দেশে মেয়েদের সৌন্দর্যের সঙ্গে তুলনা টানা হয় দেবী লক্ষ্মীর। হিন্দু পুরাণ মতে শ্রী বা লক্ষ্মীই হলেন সৌন্দর্যের দেবী। তাই তাঁর নাম অনুসারেই পথ চলা শুরু করেছিল স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রসাধনী সংস্থা। তার আগে সাজের সাধ থাকলেও তা মেটানোর মতো সাধ্য ছিল না এ দেশের সাধারণ ঘরের মেয়েদের। উচ্চবিত্তদের ভরসা ছিল বিদেশ থেকে আনা প্রসাধনের জিনিস। আর মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মেয়েদের সাজের শখ ঘরে পাতা কাজল, কুমকুমের টিপ কি আলতা দিয়ে ঠোঁট রাঙিয়েই মেটাতে হত। এই অবস্থায় দেশীয় মেয়েদের সাজসজ্জার জোগান দেওয়ার জন্য যে প্রকল্পের কথা ভেবেছিলেন খোদ স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, জওহরলাল নেহরু। আর লক্ষ্মীর নামাঙ্কিত সেইসব প্রসাধনীই রীতিমতো পাল্লা দিয়েছিল বিদেশি প্রসাধনদ্রব্যের সঙ্গে।
আরও শুনুন: বিয়ে করলেই থাকতে হবে ঘরজামাই! অদ্ভুত শর্তের জেরে বর জুটছে না গ্রামের ৩০০ তরুণীর
কীভাবে যাত্রা শুরু হয়েছিল এই স্বদেশি কোম্পানির? আসছি সে কথাতেই।
দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রাথমিক পর্বেই বিদেশি দ্রব্য বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি বিলিতি জিনিসের বিকল্প হিসেবে স্বদেশি শিল্প গড়ে তোলার ভাবনাও ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গতি পেল সেই ভাবনাই। দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যেমন নতুন নতুন শিল্প গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল, তেমনই প্রতিটি প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে দেশকে স্বনির্ভর করে তুলতে হবে, এ কথাও ভেবেছিল নেহরু সরকার। তাই টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার জামশেদজি টাটার উপরে দেওয়া হল দেশীয় বিউটি প্রোডাক্ট তৈরি করার ভার। ‘লক্ষ্মী’ নাম নিয়েই বাজারে এল এই নতুন সংস্থার প্রসাধন। একদিকে বলি-দুনিয়ার নায়িকারা হয়ে উঠলেন এই নয়া ব্র্যান্ডের মুখ। আরেকদিকে তার দাম রইল সাধারণের নাগালেই।
আরও শুনুন: জামা পরলেই হওয়া যাবে অদৃশ্য, নয়া আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীরা
কিন্তু তুমুল ব্যবসায়িক সাফল্য সত্ত্বেও শেষমেশ হাতবদল হয়ে যায় ১৯৫২ সালে তৈরি এই সংস্থাটি। ১৯৬৬ সালে নিলামে ‘লক্ষ্মী’-লাভ হয় আরও এক স্বদেশি সংস্থা হিন্দুস্তান লিভারের। এই ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হন আরও দুই ফরাসি শরিক, রবার্ট পিগুয়েট এবং রেনোয়া। হয়তো সেই কারণেই এবার বদলে যায় সংস্থার নামও। লক্ষ্মী থেকে হয়ে ওঠে ল্যাকমে। তবে নাম বদলালেও অর্থ পালটায়নি। কেউ কেউ মনে করেন সেই সময়ের এক জনপ্রিয় ফরাসি অপেরার নামেই এই নামকরণ, তবে অধিকাংশের মতে, ল্যাকমে আসলে লক্ষ্মী শব্দেরই ফরাসি রূপভেদ। নাম যাই হোক না কেন, জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে এখনও পুরনো আসন ধরে রেখেছে দেশের এই প্রথম প্রসাধনী সংস্থা।