২০১১ সালে সুনামিতে নিখোঁজ হয়েছেন স্ত্রী। তারপর কেটে গিয়েছে প্রায় এক দশক। এখনও প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে স্ত্রীকে খুঁজে বেড়ান জনৈক প্রৌঢ়। কত না উপায়ে স্ত্রীকে খুঁজে চলেছেন তিনি। হারানো সঙ্গীকে ফিরে পেতে কী কী করেছেন, জানলে অবাকই হতে হয়। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সুনামির তীব্র জলোচ্ছ্বাস কেড়ে নিয়েছে স্ত্রীকে। কিন্তু এই সত্যি যেন মানতে নারাজ স্বামী। বয়স অনেকটাই গড়িয়েছে এই এক দশকে। তবু প্রৌঢ় খুঁজে বেড়ান তাঁর হারানো সঙ্গীকে। এখনও প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে সমুদ্রের নীচে পাড়ি জমান স্ত্রী-র খোঁজে।
আরও শুনুন: খুনের পর নরমাংস ভক্ষণ, বিক্রিও! ‘নরখাদক দম্পতি’কে ধরিয়ে দেয় একটি মোবাইল ফোন
২০১১ সালের সুনামিকে বিশ্বব্যাপী ভয়ঙ্করতম বির্পযয়ের মধ্যে রাখা হয়। সারা বিশ্ব জুড়ে এর প্রভাব দেখা গেলেও, সুনামির প্রধান কেন্দ্রস্থল ছিল জাপান। সরকারি নথি অনুযায়ী সুনামির ফলে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ। একইসঙ্গে নিখোঁজ হয়েছিলেন প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। সেই নিখোঁজের তালিকাতেই ছিলেন ইউকো তাকামাতসু নামে জনৈক মহিলা। জাপানের সুনামি বিধ্বস্ত এলাকাগুলির মধ্যে অন্যতম ‘অনাগাওা’তে শেষ বারের মতো দেখা মিলেছিল তাঁর। তারপর থেকেই স্ত্রীর খোঁজ শুরু করেন স্বামী ইয়াসুও তাকামাতসু। সেই খোঁজ এখনও বজায় রেখেছিন তিনি। দীর্ঘ ১১ বছর পার করে ইয়াসুও-র বয়স এখন ৬৫। তবু স্ত্রীকে খুঁজতে প্রতি সপ্তাহে সমুদ্রের নীচে পাড়ি দেন তিনি।
ইউকো কাজ করতেন জাপানের একটি ব্যাঙ্কে। ২০১১ সালে সুনামি আছড়ে পড়েছিল তাঁর ব্যাঙ্ক সংলগ্ন গোটা এলাকায়। সেদিন স্বামী ইয়াসুকে মেসেজ করে বন্যার ভয়াবহতার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই শেষ। তার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, তিনি কোনক্রমে ব্যাঙ্কের ছাদে উঠে প্রাণে বাঁচতে চেয়েছিলেন। শেষরক্ষা হয়নি। ফুঁসে ওঠা জলের তোড়ে অন্যদের সঙ্গে ভেসে যান তিনিও। পরে অন্যান্যদের দেহ খুঁজে পাওয়া গেলেও ইউকোর দেহ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সেই থেকে নিজের উদ্যোগে স্ত্রীর দেহ খুঁজতে শুরু করেন স্বামী ইয়াসুও। প্রথমে সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। সব জায়গায় উদভ্রান্তের মতো খুঁজে বেড়াতেন স্ত্রীকে। তারপর ২০১৩ সালে পেয়ে যান সমুদ্রের গভীরে ডাইভ দেওয়ার লাইসেন্স। বিগত ৯ বছর ধরেই প্রতি সপ্তাহে সমুদ্রের গভীরে পৌঁছে স্ত্রীকে খুঁজে বেড়ান ইয়াসুও। তাঁর এখনও বিশ্বাস, স্ত্রীর দেহ একদিন ঠিক খুঁজে পাবেনই।
আরও শুনুন: ৩০০ পুরুষের সঙ্গে ৩০০ ভঙ্গিতে যৌনতার রেকর্ড! পর্ন তারকার যুগ শেষ বলে দাবি করলেন সেই অভিনেত্রীই
বিপর্যয় এসে কেড়ে নিয়েছে সঙ্গীকে। এ সত্যি কি জানেন না ইয়াসু! হয়তো জানেন। তবু এই প্রতিনিয়ত খোঁজের মাধ্যমেই এখনও হারানো সঙ্গীকে যেন বাঁচিয়ে রেখেছেন তিনি। এ পৃথিবীতে এ-ও যেন এক অন্যরকম প্রেমের গল্পই, অথবা বলা যায়, গল্প হলেও সত্যি।