ভারতের বাইরেও রয়েছে আরও এক অযোধ্যা। সংবিধানে নিজেকে ‘রামরাজ্য’ বলে ঘোষণা করেছে এই দেশটি। এ দেশের সিংহাসনে অভিষেকের সময় ‘রাম’ উপাধি গ্রহণ করেন দেশের রাজা। এমনকি দেশের জাতীয় গ্রন্থও রামায়ণ। কোথায় ঘটে এমনটা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বাল্মীকি রচিত রামায়ণ অনুযায়ী, রামের শাসনে থাকা অঞ্চলই হল রামরাজ্য। যেখানে সুখে শান্তিতে বাস করেন প্রজারা। যেখানে ন্যায় বিচার মেলে, আর শাস্তি হয় দোষীর। কিন্তু জানেন কি, ধর্মগ্রন্থের বাইরেও খোঁজ মেলে রামের রাজত্বের? খোঁজ মেলে অযোধ্যার?
আরও শুনুন: বিয়ে করলেই থাকতে হবে ঘরজামাই! অদ্ভুত শর্তের জেরে বর জুটছে না গ্রামের ৩০০ তরুণীর
হ্যাঁ, এই বিশ্বেই রয়েছে এমন এক দেশ। রামায়ণের জন্মভূমি ভারত নয়, তার থেকে অনেক দূরে অবস্থিত সেই দেশটি। যার আগেকার নাম ছিল শ্যামদেশ, আর বর্তমান নাম থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ড দেশটির শাসনভার বর্তমানে গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে থাকলেও, রাজার সাম্মানিক পদটি এখনও বজায় রয়েছে সে দেশে। আর সেই রাজার অভিষেক হয় রাম উপাধি নিয়েই। সে দেশে আজও ‘রাম’ রাজারা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী। আর তাঁদেরই রাজধানীর নাম ছিল অযোধ্যা, স্থানীয় ভাষায় ‘অয়ুৎথ্য’। এখন দেশের রাজধানী পালটে গেলেও ওই অযোধ্যাতেই এখনও বংশপরম্পরায় বাস করে আসছেন ‘রাম’ উপাধিধারী সেই রাজবংশ। জানা যায়, ১৭৮২ সালে থাইল্যান্ডে শুরু হয়েছিল চক্রী রাজবংশের শাসন। সেই বংশের প্রথম রাজা বুদ্ধ য়োতফা চুলালোক সিংহাসনে বসার সময় ‘রাম’ উপাধিটি বেছে নিয়েছিলেন। সেই থেকে আজ অবধি, দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে, ‘রাম’ উপাধি নিয়েই সিংহাসনে বসেন থাইল্যান্ডের চক্রী বংশীয় রাজারা৷ বর্তমানে থাইল্যান্ডে রাজত্ব করছেন দশম রাম তথা রাজা মহা ভজীরালঙ্গকর্ণ। ‘রাম’ রাজাদের নাম ধরা বা তাঁদের নিয়ে কোনোরকম সমালোচনা করা থাইল্যান্ডে সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ। ব্যাঙ্ককে ‘প্রাসাত ফ্রা দেবিদোর্ন’ নামে এক মন্দিরে সসম্মানে রাখা হয়েছে ন’জন ‘রাম’ রাজার মূর্তিও।
আরও শুনুন: যানজটে রোগীর মৃত্যু দেখে পেশাবদল চিকিৎসকের, ডাক্তারির পাশাপাশি সামলান ট্রাফিকও
কিন্তু আশ্চর্যের কথা হল, হিন্দু ধর্ম নয়, থাইল্যান্ডের অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। তাহলে এদেশের রাজাদের মধ্যে রাম উপাধি আসার কারণ কী? আসলে জাতকের কাহিনি অনুযায়ী, বুদ্ধ একবার রামচন্দ্রের রূপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বৌদ্ধধর্মে রামচন্দ্রকে পরম ধার্মিক এবং আদর্শ নৃপতি বলা হয়েছে। আর জাতকের উল্লেখ থেকেই রাম উপাধি গ্রহণ করেছেন এই রাজারা। ‘রামাকিয়েন’ নামে রামায়ণ কাব্যেরও প্রচলন রয়েছে থাইল্যান্ডে। দেশের জাতীয় গ্রন্থ হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এই রামায়ণকেই। সব মিলিয়ে, থাইল্যান্ডকে রামরাজ্য বললে খুব ভুল হয় কি?