পেশায় ডাক্তার, কিন্তু একইসঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বও সামলান এই ব্যক্তি। তাও কিনা বিনা পারিশ্রমিকে। কেন এই কাজ করেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
চিকিৎসার পাশাপাশি ব্যস্ত রাস্তার যানজট সামলানোর দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন এই ব্যক্তি। যদিও এই দ্বিতীয় কাজের জন্য কোনোরকম পারিশ্রমিকের পরোয়া করেন না তিনি। তা ছাড়া ট্রাফিক পুলিশের সরকারি পোশাকও তাঁর নেই, সুতরাং এই কাজ করতে গিয়ে কখনও কখনও রীতিমতো অসুবিধার মধ্যেও পড়তে হয় তাঁকে। তবুও এই বাড়তি দায়িত্ব হাসিমুখেই সামলে চলেছেন কৃষ্ণ যাদব নামের ওই চিকিৎসক। চলতি বছর থেকেই ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাস্তায় যানজট সামলানোর কাজ করে আসছেন তিনি।
আরও শুনুন: বিয়ে করলেই থাকতে হবে ঘরজামাই! অদ্ভুত শর্তের জেরে বর জুটছে না গ্রামের ৩০০ তরুণীর
কিন্তু কেন এমন বাড়তি দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিয়েছেন ওই ব্যক্তি? কৃষ্ণ যাদব জানিয়েছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। যার জেরেই তাঁর জীবন বেশ খানিকটা পালটে গিয়েছে। ২০১১ সালে অক্টোবর মাসের এক দিনে প্রতিদিনের মতোই রোগী দেখে বাড়ি ফিরছিলেন ওই চিকিৎসক। ফেরার পথে যানজটের মধ্যে পড়েন তিনি। গাড়িতে বসে থাকতে থাকতেই অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের আওয়াজ শুনতে পান তিনি। রোগী নিয়ে সেই যানজটে আটকে পড়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সটিও। অথচ যানবাহনের ভিড় সরিয়ে যাওয়ার উপায় ছিল না। একজন চিকিৎসক হিসেবে এহেন পরিস্থিতিতে চুপ করে বসে থাকতে পারেননি ওই ব্যক্তি। অন্যান্য গাড়ির চালকদের অনুরোধ করে কোনোভাবে অ্যাম্বুল্যান্সটিকে পথ করে দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছতে না পেরে সেদিন ওই অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। পরের দিন খবরের কাগজ থেকে সেই দুঃসংবাদ জানতে পেরেছিলেন কৃষ্ণ যাদব। আর এই ঘটনাই অনেকখানি পালটে দিয়েছিল তাঁকে। এরপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, অসুস্থ মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য যেমন চিকিৎসকের বৃত্তি গ্রহণ করেছেন তিনি, একইভাবে ট্রাফিক কন্ট্রোলারেরও কাজ করবেন তিনি। চেষ্টা করবেন যাতে ভিড়ের চাপে আর কোনও মানুষের ওইভাবে অসহায় মৃত্যু না ঘটে।
আরও শুনুন: সহকর্মীর সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েই মৃত্যু ব্যক্তির, কবরে ‘লম্পট’ লিখে দিলেন স্ত্রী
যদিও এই কাজ করা সহজ ছিল না তাঁর পক্ষে। পেশার কারণে সময়ের অভাব তো ছিলই। পরিবারে তরফ থেকেও ঘোরতর আপত্তির মুখে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও কিছুই তাঁকে তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারেনি। সেই ঘটনার ঠিক ১১ বছর পর অবশেষে নিজের সিদ্ধান্তকে কাজে পরিণত করেন কৃষ্ণ যাদব। উত্তরপ্রদেশের নয়ডায় প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে ট্রাফিক সামলান এই চিকিৎসক। আর এইভাবেই অসুস্থ, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আরও একটি পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।