দেবী দুর্গার দশ হাতে দশ প্রহরণ। তার মধ্যে প্রধান অস্ত্র ত্রিশূল দিয়ে তিনি বধ করছেন মহিষাসুরকে। এই দশভুজা রূপেই বাংলায় পূজা পান দেবী দুর্গা। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা যায় এই বনেদি পুজোটিতে। যেখানে দেবীর সমগ্র রূপের নয়, কেবল তাঁর মুণ্ডটির আরাধনা করা হয়। কোথায় ঘটে এমন ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
এই দেবী অসুরদলনী নন। ত্রিশূল দূরের কথা, কোনও অস্ত্রই নেই তাঁর হাতে। আসলে হাতই যে নেই এই দেবীর। হ্যাঁ, কেবল দুর্গার মুখাবয়বকেই পুজো করেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রায় পরিবারের সদস্যরা। প্রায় সাড়ে চারশো বছর ধরে এমনই রেওয়াজ চলে আসছে এই পুজোয়।
আরও শুনুন: Durga Puja 2023: অষ্টমীর রাতে আয়োজন, নবমীতে পুজো শুরু… ২৫৩ বছরে পা বেহালার সোনার দুর্গার
কিন্তু কেন এমন অভিনব ভাবে পূজার আয়োজন করে এই পরিবার?
বলা হয়, এই পরিবারের এক পূর্বপুরুষ, ধনী ব্যবসায়ী গোবিন্দ রায়ের উদ্যোগেই এখানে দুর্গাপূজার সূচনা হয়েছিল। কারও কারও মতে, প্রথম বারের দুর্গাপুজোয় দশভুজার মূর্তিই ছিল। তবে পুজো শুরু হতেই সে মূর্তি ভেঙে পড়ে। অবশিষ্ট থাকে কেবল মূর্তির মাথা থেকে গলা পর্যন্ত। আর এরপরেই নাকি দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন গোবিন্দ রায়। ওই রূপেই পূজা হোক তাঁর, দেবী স্বয়ং এমনটাই চেয়েছিলেন বলে কথিত রয়েছে। আর সেই কারণেই এর পর থেকে দেবীর কেবলমাত্র মুণ্ডটিরই পুজো শুরু করে এই পরিবার।
আরও শুনুন: Durga Puja 2023: প্রথম বাঙালি লাখপতির বাড়ির পুজো কেমন ছিল জানেন?
তবে হ্যাঁ, এই মতের বিরুদ্ধ মতও যে নেই তা নয়। আর সেই মত অনুযায়ী, গ্রামের বাইরে ঠাকরুন পুকুরে স্নানের সময় এক অপরূপ সুন্দরী নারীর দেখা পেয়েছিলেন গোবিন্দ রায়। পুকুরে স্নানরত ওই রমণীর মাথা থেকে গলাটুকুই জলের বাইরে ছিল৷ কিন্তু তাঁকে দেখা পাওয়া মাত্রই নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যান ওই নারী। তবে স্বপ্নাদেশের সূত্র কিন্তু রয়েছে এ গল্পেও। আর স্বপ্নাদেশের পর দেবীদর্শনের সেই স্মৃতিকে মনে রেখেই কাটা মুণ্ডের পুজো শুরু হয় রায় পরিবারে।
যে কারণেই এই পুজো শুরু হয়ে থাকুক না কেন, সাড়ে চারশো বছর পার করেও বয়ে চলেছে সেই পরম্পরা। এই পুজোয় অন্নভোগ হয় না। পুজোয় নেই চণ্ডীপাঠের রীতিও। দশমী তিথিতে বিসর্জনের আগে দোলায় চাপিয়ে দুর্গামূর্তিকে ঘোরানো হয় গ্রামে। আর বিসর্জনের পর পুকুরপাড় দিয়ে শঙ্খচিল ওড়া দেখে তবেই বাড়ি ফেরেন পুজোর হোতা এই পরিবারের সদস্যরা।