ধর্মীয় বিধি হিসেবেই শিখ ধর্মাবলম্বীরা সবসময় নিজের কাছে একটি কৃপাণ রাখেন। কিন্তু সেই কারণেই সম্প্রতি এক শিখ পড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করেছে মার্কিন পুলিশ। ঘটনার জেরে উত্তাল নেটদুনিয়া। ঠিক কী ঘটেছে ওই পড়ুয়ার সঙ্গে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
নিজের সঙ্গে কৃপাণ রাখার অপরাধে সম্প্রতি এক শিখ পড়ুয়াকে গ্রেপ্তার করল মার্কিন পুলিশ। পুলিশ তাঁর কৃপাণ কেড়ে নিতে গেলে ওই পড়ুয়া বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ। কিন্তু তাঁকে আটক করার সেই ভিডিও প্রকাশ পেতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে নেটদুনিয়ার এক অংশ।
আরও শুনুন: মথুরার ৪০০ বছরের পুরনো মন্দিরে প্রথম মহিলা পুরোহিত, বিরোধিতায় আদালতের দ্বারস্থ পরিবার
শিখ ধর্মে পঞ্চ ‘ক’ ধারণ করার এক বিশেষ নিয়ম আছে। কেশ, কড়া, কঙ্গণ, কচ্ছ, কৃপাণ- এই পাঁচটি জিনিস সর্বদা সঙ্গে রাখতে হয় শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষদের। ভারতীয় সংবিধানও যেহেতু সব ধর্মের মানুষকে নিজের নিজের ধর্ম পালনের অধিকার দেয়, তাই এই বিশেষ ধর্মীয় বিধি পালনে কোনও বাধা নেই শিখদের। কিন্তু সেই কারণেই এবার মার্কিন মুলুকে রীতিমতো বিপাকে পড়লেন এক শিখ ছাত্র। নিজের কাছে কৃপাণ রাখার অপরাধে একেবারে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছে আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। জানা গিয়েছে, ওই ছাত্রের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন কেউ। স্বাভাবিকভাবেই অন্য দেশের, বিশেষ করে অন্য ধর্মের নিয়ম সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না ওই ব্যক্তি বা পুলিশ কেউই। কৃপাণটিকে সাধারণ ছুরির মতোই একটি অস্ত্র বলে মনে করেছিলেন তাঁরা। একটি ভিডিও নেটমাধ্যমে ভাগ করে নিজেই ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন ওই শিখ ছাত্র। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন মার্কিন পুলিশ অফিসার তাঁর কাছ থেকে বারবার কৃপাণ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শিখ ধর্মের মানুষেরা ওই পঞ্চ ‘ক’-এর কোনোটিই তাঁদের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা পাপ বলে মনে করেন। তাই ওই পুলিশকর্মীকে বারবার বাধা দিচ্ছিলেন ওই পড়ুয়া। অবশেষে তাঁর হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরিয়ে দেন ওই পুলিশকর্মী।
আরও শুনুন: যৌনতায় হরতাল! মাংস খায় এমন পুরুষের সঙ্গে সঙ্গম বন্ধ করুক নারীরা, ডাক দিল PETA
নেটমাধ্যমে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই সারা বিশ্বের নানান প্রান্তে থাকা শিখ-রা ক্ষোভ উগরে দিতে থাকেন। ঘটনাটি নজরে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও। তারপরই কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে ক্ষমা চাওয়া হয় ছাত্রটির কাছে। একইসঙ্গে তাঁরা জানান, প্রাথমিক ভাবে কৃপাণ-কে সাধারণ ছুরি হিসেবেই ভেবেছিল সবাই। তাই নিরাপত্তার স্বার্থেই তা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু পরবর্তীকালে যখন তাঁরা জানতে পারেন কৃপাণ আসলে শিখ ধর্মের এক প্রতীক মাত্র, তখনই ছাত্রটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই মর্মে নিজেদের ওয়েবসাইটে একটি বার্তা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যেখানে ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি শিখ ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সৌহার্দ্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা।