মথুরার ৪০০ বছরের পুরনো মন্দিরে এবার পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত হলেন এক মহিলা। কিন্তু এই ছকভাঙা কাজ করতে যাওয়ার আগেই এল আইনি বাধা। তাও খোদ পরিবারের তরফ থেকেই। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
যুগ যুগ ধরে চলে আসা নিয়মে বদল ঘটিয়ে এবার যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের পথে হাঁটতে চলেছিল মথুরার এক প্রাচীন মন্দির। বাঁকেবিহারী মন্দিরের পর মথুরার দ্বিতীয় বিখ্যাত মন্দির, রাধারানি মন্দিরে গত ৪০০ বছর ধরে পুজো করে আসছেন পুরুষরাই। এত শত বছরের পুরনো এই মন্দিরে এই প্রথমবার নিয়োগ করা হয়েছিল মহিলা পুরোহিত। ৮০ বছর বয়সি মায়া দেবীর হাত ধরেই সৃষ্টি হতে চলেছিল নয়া ইতিহাস। কিন্তু তার আগেই এল বড়সড় বাধা। সরাসরি আইনি পথেই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলেন ওই মহিলার পরিবারের সদস্যরা। মন্দিরের প্রথম মহিলা পুরোহিত হিসেবে মায়া দেবী পুজো করতে যাওয়ার আগেই তাঁর পুরোহিত হওয়ার বিরোধিতা করে আদালতে গেলেন তাঁরা।
আরও শুনুন: স্কুলে বন্ধ হোক ভজন, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগে সোচ্চার কাশ্মীরের মুসলিম সংগঠন
সমাজে যুগ যুগ ধরে পৌরোহিত্য ও শাস্ত্রীয় আচার পুরুষরাই করে এসেছেন। কিন্তু বৈদিক যুগেও মেয়েদের বেদ অধ্যয়ন, স্তোত্র রচনা কিংবা শাস্ত্র পাঠের হদিশ মিলেছে। সেই সূত্র ধরেই বর্তমানে পুজো-আর্চা বা অন্যান্য শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠানে পৌরোহিত্য করতে এগিয়ে এসেছেন মহিলারা। একইভাবে, গত মে মাসে রাধারানি মন্দিরের পুরোহিত হিসাবে উঠে আসেন মায়া দেবী। জানা গিয়েছে, তাঁর স্বামী হরিবংশ লাল গোস্বামী ছিলেন রাধারানি মন্দিরের পুরোহিত। তাঁদের কোনও সন্তান না থাকায় হরিবংশের অবর্তমানে মন্দিরের পুরোহিত হিসাবে দায়িত্ব বর্তায় মায়া দেবীর উপর। কিন্তু তারপরেই শুরু হয় বিতর্ক। যদিও মহিলার পৌরোহিত্যের অধিকার নিয়ে নয়, বরং পারিবারিক সমস্যা থেকেই বিবাদের শুরু বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও শুনুন: যৌনতায় হরতাল! মাংস খায় এমন পুরুষের সঙ্গে সঙ্গম বন্ধ করুক নারীরা, ডাক দিল PETA
আসলে হরিবংশের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মায়া দেবী। তাঁর পুরোহিত হতে বাধা এসেছে স্বামীর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর পরিবারের তরফে। তাঁরা মায়া দেবীকে ‘প্রতারক’ বলে অভিযোগ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। মন্দিরের বাইরে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন তাঁরা। এদিকে মায়া দেবীর বক্তব্য, তাঁর নিজের কোনও আত্মীয় নেই বলেই তাঁকে নিশানা করা সহজ। তাঁর দাবি, তিনি গত ৬০ বছর ধরে রাধারানির সেবা করে আসছেন। সুতরাং তিনিই এই পদের প্রকৃত অধিকারী। আর এখন যখন আরাধ্য দেবতার আরও কাছে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, সেই সুযোগ ছাড়তে নিতান্তই নারাজ মায়া দেবী। পাশাপাশি তাঁর হাত ধরে মন্দিরে কিছু ইতিবাচক বদল এসেছে বলেও জানিয়েছেন ভক্তরা। উত্তরের মন্দিরগুলিতে যেখানে পুরুষপ্রাধান্যই বেশি চোখে পড়ে, সেখানে এই মন্দিরে বর্তমানে কাজ করছেন বেশ কিছু মহিলা সেবায়েত। তা ছাড়া প্রথমবারের জন্য প্রতিমার কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ মিলছে ভক্তদেরও। এমনকি মহিলা পুরোহিতের পূজা করায় সমস্যা নেই বলেই জানিয়েছেন মথুরার আরেক পুরোহিতও। তবে আইন শেষমেশ কী রায় দেয়, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন রাধারানি মন্দিরের মহিলা পুরোহিত।