সিনেমা কিংবা রহস্য রোমাঞ্চ উপন্যাসে প্রায়শই ছুরি হামলার কথা শুনতে পাওয়া যায়। সিনেমার প্রয়োজনে অনেক বার ছুরি খেতে হয় অভিনেতাদের। তাই বলে বাস্তবেও যে আচমকা নেমে আসতে পারে ছুরিকাঘাত, তা বোধহয় আঁচ করা কঠিন। তবে তেমনটাই হয়েছিল অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের সঙ্গে। রেস্তরাঁর ভিতরে তাঁকে ছুরি মেরে বসে এক সহ-অভিনেতা। কেন? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সম্প্রতি প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে মৌলবাদীদের ছুরির মুখে পড়েছেন বুকারজয়ী সাহিত্যিক সলমন রুশদি। তাঁর লেখা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আপত্তি রয়েছে মৌলবাদীদের। তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন ইরানের তৎকালীন সর্বেসর্বা খোমেইনি। কিন্তু এ তো গেল মৌলবাদীদের হামলা। রেস্তরাঁর মধ্যে ছুরি হামলার শিকার হয়েছিলেন বলিউড তারকা নাসিরুদ্দিন শাহ। এর সঙ্গে কোনও গ্যাংস্টার যোগ আছে ভাবলে কিন্তু ভুল করবেন। নিজের সহ-অভিনেতার হাতেই ছুরিবিদ্ধ হয়েছিলেন অভিনেতা। সেসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা ওম পুরীও। তাঁর দৌলতেই সে যাত্রায় রক্ষা পান নাসিরুদ্দিন।
আরও শুনুন: ‘বন্ধু’ হওয়ার টোপ দিয়ে যৌনতার হাতছানি, বলিউডের কাস্টিং কাউচ নিয়ে বিস্ফোরক অভিনেত্রী
সেটা ১৯৭৭ সালের ঘটনা। ‘ভূমিকা’ ছবিটির শুটিং চলছিল তখন। একদিন একটি রেস্তরাঁয় ডিনার সারছিলেন নাসিরুদ্দিন আর ওম। সেখানে এসে হাজির হন যশপাল নামে এক অভিনেতা। তাঁদের টেবিল থেকে সামান্য দূরেই বসেছিলেন যশপাল। নাসিরুদ্দিনরা দেখেছিলেন। তবে গুরুত্ব দেননি। যশপাল অবশ্য ঠায় তাকিয়ে ছিলেন তাঁদের দিকে। একটু পরে তিনি উঠে নাসিরুদ্দিনের ঠিক পিছনের একটি টেবিলে চলে আসেন। তখনও কিছু বুঝতে পারেননি নাসিরুদ্দিন। হঠাৎ করেই পিঠের মাঝখানে ধারালো কোনও অস্ত্রের উপস্থিতি টের পান তিনি। তার সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা।
আরও শুনুন: ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনাদের মাথাব্যথা কেন?’ খোলামেলা পোশাকেই ট্রোলের সপাট জবাব উরফির
সহকর্মী যশপালের ছুরিতে ততক্ষণে কেটে গিয়েছে নাসিরুদ্দিনের পিঠের অনেকখানি। আরও একবার ছুরি চালাতে যাবেন, চেপে ধরে কোনও মতে আটকান ওম। যশপালের সঙ্গে তাঁর ধ্বস্তাধস্তিও হয় খানিক। কোনও মতে যশপালকে রান্নাঘরে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। এদিকে ততক্ষণে রক্তে ভেসে যাচ্ছে নাসিরুদ্দিনের পিঠ। অথচ পুলিশ না আসা পর্যন্ত হোটেলের কর্মীরা কিছুতেই বেরোতে দেবেন না তাঁদের। অবশেষে পুলিশ আসে। অ্যাম্বুল্যান্সে খবর দেওয়া হয়। তবে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে পুলিশি জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছিল অভিনেতাকে। যন্ত্রণা তখন বেশ বেশি। সেই অবস্থাতেই তাঁদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শেষমেশ পুলিশের হাতে পায়ে ধরে বন্ধুকে হাসপাতালে পাঠানোর অনুরোধ করেন ওম। শেষ পর্যন্ত জুহুর কুপার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অভিনেতাকে। সেখানেই প্রাথমিক চিকিৎসা হয় তাঁর। সে সময় শ্যাম বেনেগালের ছবির শুটিং করছিলেন নাসিরুদ্দিন। খবর দেওয়া হয় তাঁকেও। যশপালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সৈয়দ আখতার মির্জা নামে আর এক অভিনেতার দৌলতে জামিন পান যশপাল।
তবে এত কিছুর পরেও যশপাল নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। দরজা খুলে মারাত্মক ভয় পেয়েছিলেন নাসির সাব। অবশ্য যশপালের ব্যবহার ছিল একেবারে স্বাভাবিক। এমনকী ক্ষমা চাওয়া বা নাসিরুদ্দিনের কুশল জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজনবোধটুকুও করেননি তিনি। শুধু জানিয়েছিলেন, সেদিন রাতে যা ঘটেছিল, তার নেপথ্যে কোনও ব্যক্তিগত কারণ নেই। মিনিট দশেক বাদে যশপালকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন নাসিরুদ্দিন। উচ্চবাচ্য না করে বেরিয়েও যান যশপাল। কোনও মতে হাফ ছেড়ে বাঁচেন নাসিরুদ্দিন। পরে অবশ্য আদালতে ফের দেখা হয়েছিল দুজনের। তবে মামলা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাননি নাসির সাব। দুজনে একসঙ্গে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেছেন একই ব্যাচে। সেসব কথা মনে রেখেই সম্ভবত মামলায় ইতি টেনেছিলেন অভিনেতা। ইতি পড়েছিল যশপালের অভিনয় জীবনেও। তবে সিনেমার মতো এমন ঘটনা যে খোদ অভিনেতার জীবনে ঘটতে পারে, তা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি নাসিরুদ্দিন বা ওম- কেউই।