যে কোনও পুজোর আগেই পঞ্জিকা মিলিয়ে দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর মাস বা তারিখে কোনও হেরফের সচরাচর চোখে পড়ে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, কেন প্রতি বছর ১৭ সেপ্টেম্বরই বিশ্বকর্মা পুজো পালিত হয়? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সেই উত্তর।
তিনি নির্মাণের দেবতা। সমগ্র বিশ্ব নির্মাণ করেছিলেন বলেই তাঁকে ডাকা হয় বিশ্বকর্মা নামে। বিভিন্ন দেবতাদের অস্ত্র থেকে আরম্ভ করে সোনার লঙ্কাও তাঁরই কীর্তি। এমনকি তিনিই নাকি সর্বপ্রথম উড়ন্ত রথ তৈরি করেছিলেন। তারই প্রতীক হিসেবে তাঁর পুজোর দিনে আকাশে ঘুড়ি ওড়ানো হয় বলে মনে করা হয়। আর এহেন সব অতুল কীর্তির জোরেই মর্তে পুজো পান দেব বিশ্বকর্মা। অদ্ভুত ভাবে তাঁর পুজোর ক্ষেত্রে বিশেষ এক ধারা লক্ষ্য করা যায়। তিথি নক্ষত্রের হিসেব মেনে অন্য দেবদেবীদের পুজোর দিনক্ষণ বছর বছর বদলে গেলেও, প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোর তারিখটি থাকে অপরিবর্তিত। কিন্তু কেন ওই একই দিনে তাঁর পুজো করা হয়, সেই নিয়েই আছে এক বিশেষ ব্যাখ্যা।
আরও শুনুন: মোদক, দূর্বা-সহ আর কী কী উপাচারের রীতি গণেশ আরাধনার?
সাধারণত হিন্দু দেবদেবীদের পুজোর তিথি স্থির করা হয় চন্দ্রের গতির ভিত্তিতে। কিন্তু বিশ্বকর্মা পুজোর তিথি নির্ভর করে সূর্যের গতিপ্রকৃতির ওপর। বিভিন্ন পঞ্জিকামতেই এই ধারাকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে। সূর্যের গতি অনুসরণ করলে দেখা যায় কন্যা রাশিতে সূর্যের গমন হয় সংক্রান্তি তিথিতে। শাস্ত্র মতে বলা হয়, সেই দিনেই জন্ম হয়েছিল দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার। তাই সেই দিনটিতে বিশ্বকর্মার আরাধনায় মেতে ওঠেন মর্তবাসী। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুসারে সেই দিনটি হয় ভাদ্র মাসের শেষ তারিখে। আবার এই ভাদ্র মাসের আগে বাংলা পঞ্জিকায় পাঁচটি মাসের উল্লেখ পাওয়া যায়। যার মোট দিন সংখ্যা ১৫৬। এই নিয়ম মেনে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ১৫৬তম দিনটি ১৭-ই সেপ্টেম্বর। তাই প্রতিবছর এই একই দিনে পালন করা হয় বিশ্বকর্মা পুজো। কখনও যদি পাঁচ মাসের মধ্যে কোন একটি ২৯ বা ৩২ দিনের হয়, তাহলে বিশ্বকর্মা পুজোর তারিখ এগোতে বা পিছোতে পারে। তবে এমন ঘটনা খুবই বিরল।
আরও শুনুন: কৌশিকী অমাবস্যায় আবির্ভূত হন দেবী তারা, কী মাহাত্ম্য এই তিথির?
বাংলায় যে বিশ্বকর্মা পূজা পান, তিনি চিরযুবা। কিন্তু আশ্চর্যের কথা হল, সারা দেশে তাঁর বৃদ্ধ প্রতিরূপ দেখতে পাওয়া যায়। বাংলার চিরযুবা মূর্তিতে বিশ্বকর্মার বাহন হল হাতি। কিন্তু বিশ্বকর্মার বৃদ্ধ প্রতিরূপের বাহন হল হাঁস। এমনকি কোথাও তাঁর মূর্তির ৪টি মাথাও দেখতে পাওয়া যায়। আর সেই সূত্রেই তাঁকে স্বয়ং চতুর্মুখ ব্রহ্মার পুত্র বলেও মনে করেন কেউ কেউ।