‘The way to a man’s heart is through his stomach’ – খুব প্রচলিত একটা কথা। পুরুষের মনজয়ের সবচেয়ে সহজ রাস্তা নাকি উদরপূর্তি। তবে এবার সে নিয়েই উত্তাল হয়ে উঠল সোশ্যাল মিডিয়া। সম্প্রতি লুচির ছবি শেয়ার করে বিতর্কের মুখে পড়লেন এক ব্যক্তি। কী লিখেছিলেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ফুলকো লুচির কদর বোধহয় সর্বত্র। রবিবার হোক বা যে কোনও ছুটির দিন, লুচি না হলে জলখাবার জমে না বাঙালির। নাম আলাদা হলেও অবাঙালিদের মধ্যেও কিছু কম জনপ্রিয় নয় খাবারটি। তা সেই খাবারের ছবি টুইট করেই বিপাকে পড়লেন এক ব্যক্তি।
বাঙালি বাড়ির মহিলাদের স্নেহ এবং ভালবাসার প্রকাশ হল লুচি। যা প্রধানত স্বামী, জামাই বা সন্তান, ভাইবোনদের সঞ্চিত করে রাখেন তাঁরা। এমনই একটি ক্যাপশন দিয়ে টুইটারে লুচির ছবি পোস্ট করেছিলেন ওই ব্যক্তি। আর এমন বক্তব্য ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন বক্তব্য আদতে পুরুষতান্ত্রিকতার প্রকাশ বলেই দাবি করেছেন নেটিজেনরা।
আরও শুনুন: কন্যাভ্রূণ হত্যার নিরিখে মুসলিমদের তুলনায় এগিয়ে হিন্দুরা, চাঞ্চল্যকর তথ্য মার্কিন সমীক্ষায়
শ্রমিক মাত্রেই পারিশ্রমিক পান। কিন্তু গৃহবধূ বা হোমমেকাররা সংসারের এমন শ্রমিক, যার না আছে বেতন, না আছে ছুটি, না আছে অন্যান্য সুযোগসুবিধা। কোনও রকম কিছু প্রত্যাশা না করেই তাঁরা সংসারের জন্য দিনপাত করেন। ছোট থেকেই মা-মাসিদের বোধহয় এমন ভাবেই দেখে অভ্যস্ত আমরা। ফলে তাঁদের পরিশ্রমকে অনেক সময় ঠিক মতো সম্মানও করি না আমরা। এমনকী যেসব মহিলা পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাইরে কাজ করেন, চাকরি করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা কিন্তু কিছুমাত্র আলাদা নয়। বাইরের কাজ সামলানোর পরেও তাঁদের সামলাতে হয় সংসারের সমস্তটাই। রান্নাটাও ব্যতিক্রম নয়। হাত পুড়িয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে তাঁরা রান্না করবেন, এমনটাই যেন প্রত্যাশিত। লুচি হোক বা মাংস রান্না হোক বা ঘর পরিষ্কার হোক বা কাপড় কাচা, এসব কাজকে মহিলাদের মৌলিক কর্তব্য বলে ধার্য করে দিয়েছে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ।
আরও শুনুন: সদ্যোজাত কন্যাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হল মাটিতে , ‘বেটি বঁচাও’-এর উল্টো পথেই কি হাঁটছে দেশ?
সিনেমা, সাহিত্য থেকে শুরু করে নানা মাধ্যমে সেই পুরুষতান্ত্রিক ধারা ভাঙার চেষ্টা চলেছে বটে। কিন্তু সমাজ ততটা বদলায়নি। তাই আজও রান্নাবান্নাকে একান্ত ভাবে ‘মেয়েদের কাজ’ বলে দেগে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। আর সেই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতারই প্রতিনিধি ওই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী। তেমনটাই বক্তব্য নেটিজেনদের। তাঁর বক্তব্যের বিরোধিতায় সরব হয়েছে নেটদুনিয়ার একাংশ। এক নেটিজেনের টুইট, ‘শুধু স্ত্রীরাই কেন, কেন স্বামীদের হাত নেই লুচি বানানোর জন্য?’ কেউ আবার বলেছেন, ‘সেই স্নেহ বা আদরের কারণ অনেক সময়ই বিকল্প না থাকা। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ গৃহবধূদের শ্রমকে মর্যাদা দেয় না। ফলে লুচি তৈরি করতে বাধ্য হন তাঁরা।’ কারওর বা বক্তব্য, ‘একবার বাড়ির সকলের জন্য লুচি বানিয়ে দেখাক বাড়ির পুরুষ সদস্যরা।’ সব মিলিয়ে ওই ব্যক্তির টুইট ঘিরে শুরু হয়েছে সমালোচনা। তাঁর বক্তব্য স্থূল চোখে যতই প্রশংসার মতো শোনাক না কেন, কার্যত একে প্রশংসা বলে মানতে নারাজ নেটিজেনরা। তাদের সাফ বক্তব্য, এই পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণা থেকে জেগে ওঠার সময় এসে গিয়েছে।