প্রেমের আবেগে ভেসে যাচ্ছেন ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের দিকে? কিন্তু তার আগে যে ঘনিষ্ঠ মানুষটির সম্মতির প্রয়োজন, সে কথা খেয়াল আছে তো? ভারতীয়দের ক্ষেত্রে কিন্তু পাল্লাটা ‘না’-এর দিকেই বেশি ঝুঁকে। অন্তত এমনটাই জানাচ্ছে সমীক্ষা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সিনেমার পর্দায় অনেক সময়ই দেখা যায়, অনিচ্ছুক নায়িকার প্রতি বিভিন্ন উপায়ে প্রেম নিবেদন করে চলেছে নায়ক। মেয়েটি স্পষ্ট ভাষায় অনীহা প্রকাশ করলেও নায়কের কিন্তু থামার লক্ষণ নেই। রুপোলি দুনিয়া কিন্তু বারেবারেই দেখিয়েছে, নায়কের জোরাজুরিতে হার মেনে শেষমেশ ‘না’ থেকে ‘হ্যাঁ’-এর দিকেই ঝুঁকে পড়েছে নায়িকা। সমস্যা হল, গল্পে যা দেখানো হয়, বাস্তবেও তাকেই ধ্রুব সত্যি বলেই ধরে নেন অনেক মানুষই। আর সে কারণেই, প্রেমের ক্ষেত্রে অন্য মানুষটির সম্মতির বিষয়টিকে ধর্তব্যের মধ্যেই রাখেন না তাঁরা। অথচ দুজন মানুষকে নিয়ে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, সেখানে পারস্পরিক আদানপ্রদানের বিষয়গুলিতে দুজনের মতই গুরুত্ব পাবে, এমনটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সম্পর্কে যে উলটো দিকে থাকা মানুষটিরও সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে, এ দেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের অধিকাংশই সে বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন। বলা ভাল, অন্য মানুষটির ইচ্ছা অনিচ্ছাকে একরকম উপেক্ষাই করেন তাঁরা। সম্প্রতি এমন কথাই জানাল একটি ডেটিং অ্যাপের করা সমীক্ষা।
আরও শুনুন: অপহরণের পর সাত বছর বাক্সবন্দি, ভয়াবহ অভিজ্ঞতা তরুণীর
ওই সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে সঙ্গী কতটা এগোতে চাইছেন, অর্থাৎ মানসিক বা শারীরিকভাবে কতটা ঘনিষ্ঠ হতে চাইছেন তিনি, সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না অনেক ভারতীয়ই। পরিবর্তে ব্যক্তিগত পছন্দকেই প্রাধান্য দিয়ে চলেন তাঁরা। নেটমাধ্যমে বা অন্য কোনওভাবে যোগাযোগ হওয়া মাত্রেই অনেকে উলটো দিকের মানুষটির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। বারবার ফোন করা, সোশ্যাল মিডিয়ায় যোগাযোগের চেষ্টা করার মতো পদক্ষেপ করেন। এতে অপর দিকের মানুষটি অসন্তুষ্ট হচ্ছেন কি না, তা জানতে চাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না তাঁরা। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি ১০০০ জনের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে রিপোর্ট বলছে, এই সম্মতি না নেওয়ার দলে আছেন অন্তত ৬৫ শতাংশ মানুষ।
আরও শুনুন: মুণ্ডচ্ছেদ করতে হবে হজরত মহম্মদের অসম্মানকারীর, তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পাকিস্তান
বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখোমুখি তবু খানিক পারস্পরিক বোঝাপড়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু ভারচুয়াল সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও সমস্যা বাড়ায়। যাঁরা অন্যের মতামতের তোয়াক্কা না করেই নিজের সিদ্ধান্ত অন্যের উপরে চাপিয়ে দেন, সেক্ষেত্রে অন্যজনের থেকে ইতিবাচক প্রত্যুত্তর না পেলে তা সহজভাবে নিতে পারেন না এই মানুষেরা। এর ফলে সাইবার বুলিং, ব্ল্যাকমেলিং, ব্যক্তিগত ছবি ফাঁসের মতো অপরাধ ক্রমশ বেড়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন সাইবার ক্রাইম শাখার আধিকারিকরা। রেকর্ড বলছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধের শিকার মহিলারা। ২০২১ হালের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেমের প্রস্তাবে সম্মত না হওয়ার কারণে বিভিন্ন অপরাধের শিকার হওয়া মহিলাদের সংখ্যা প্রায় ২৮ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে। এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যেই অন্যের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়ার প্রবণতা বেশি। সেই কারণেই ‘লেটস্ টক কনসেন্ট’ বলে একটি কর্মসূচি চালু করেছে ওই ডেটিং অ্যাপ সংস্থা। সম্পর্কের প্রতিটি পদক্ষেপের আগেই যে সঙ্গীর সম্মতি জরুরি, ওই প্রকল্পের মাধ্যমে সে কথাই তুলে ধরতে চাইছে সংস্থাটি।