একজন কট্টর তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে। অন্যজন বাংলাদেশের রক্ষণশীল হিন্দু পরিবার থেকে উঠে আসা। সেসব পরিচয়কে পিছনে ফেলে জয় হল ভালোবাসার। সমস্ত সামাজিক ট্যাবু সরিয়ে রেখে সম্প্রতি বিয়ে সারলেন দুই তরুণী। সম্পূর্ণ হিন্দু রীতি মেনে এক হল চারহাত। পাশে ছিলেন দুই পরিবারই। তবে সহজ ছিল না এই পথটুকু। আসুন, শুনে নেওয়া যাক অন্য ভালবাসার গল্প।
ভ্রান্ত ধারণা আর রক্ষণশীল সমাজকাঠামোকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিয়ে সারলেন দুই তরুণী। তা-ও আবার সমস্ত নিয়ম-কানুন মেনে। বিয়ের অনুষ্ঠানে মাতল দুই পরিবারই। এমনই নজিরবিহীন বিয়ের সাক্ষী রইল বিশ্ব।
সিদ্ধ হয়েছে আইন। তবে আদৌ কি অন্ধকার কেটেছে? আজও দেশের বহু জায়গাতেই সমকামিতা একটা অসুখ মাত্র। সমকামী কিংবা রূপান্তরকামী মানুষেরা সমাজে নিজের অস্তিত্বের জন্য লড়ে চলেছেন আজও। আর তৃতীয় লিঙ্গের কথা তো বলাই বাহুল্য। সেই ভ্রান্ত ধারণা, ট্যাবু ভাঙতেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এলজিবিটিকিউ কমিউনিটি। শুধু গোষ্ঠী বা সংগঠনের বাইরে বেরিয়ে আজ বিশ্বের কাছে এটা একটা আন্দোলনের নাম। আর সেই লড়াইকেই আরও খানিকটা এগিয়ে নিয়ে গেলেন সুবীক্ষা সুব্রহ্মণী এবং টিনা দাস।
সম্প্রতি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। একজনের জন্ম কট্টর তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারে। অন্য জনের বাংলাদেশের একটি রক্ষণশীল পরিবারে। তবে সেই সব ট্যাবুকে পিছনে ফেলে সমস্ত রকম রীতিরেওয়াজ মেনেই সম্প্রতি গাঁটছড়া বেঁধেছেন সুবীক্ষা ও টিনা। সঙ্গে ছিল দুই পরিবারই।
আরও শুনুন: মুণ্ডচ্ছেদ করতে হবে হজরত মহম্মদের অসম্মানকারীর, তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে পাকিস্তান
না। সহজ ছিল না লড়াইটা। সুবীক্ষার পরিবার কানাডাতেই থিতু। তা সত্ত্বেও যে রক্ষণশীলতাকে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন তা কিন্তু নয়। বাকি পাঁচজনের মতো তাঁদের মেয়ে তথাকথিত সম্পর্কে যেতে চান না। তা জানার পর থেকে সমাজের ভয়, আত্মীয় স্বজনের ভয় সবটাই তাড়া করে ফিরেছে তাঁদের। রীতিমতো পেশাদার কাউন্সিলরের কাছে গিয়ে বিষয়টিকে বোঝার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। অবশেষে স্বপ্নপূরণ হয়েছে সুবীক্ষার। বাবা-মা বুঝেছেন মেয়েকে। শুধু পাশেই দাঁড়াননি, রীতিমতো ধুমধাম করে বিয়ে দিয়েছেন মেয়ের।
টিনার অবস্থাটা ছিল সুবীক্ষার চেয়েও কঠিন। সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়াটাকে অসুখের বাইরে আর কিছু ভাবতেই পারেননি টিনার পরিবার। কারণ এ ধরনের সম্পর্ক জানা বা বোঝার মতো পরিসর তাঁদের ছিল না। জোর করে মেয়ের বিয়েও দেন তাঁরা। টিনা তখন মাত্র ১৯। ভেবেছিলেন, বিয়ে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। তবে স্বাভাবিক ভাবেই তা হয়নি। বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে আসেন টিনা। ২০০৩ সাল নাগাদ কানাডায় চলে আসে তাঁর গোটা পরিবার। সেখানেই ক্যালগারিতে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত টিনা।
আরও শুনুন: মসজিদের সামনে দাঁড়াল গণপতি বিসর্জনের শোভাযাত্রা, ভজন থামিয়ে সম্মান জানালেন ভক্তরা
বছর ছয়েক আগে টিনার সঙ্গে কানাডাতেই আলাপ সুবীক্ষার। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রণয়ে পৌঁছতে সময় লাগল না। তবে তার পরিণতি নিয়ে ভয়ে ছিলেন দু’জনেই। শেষমেশ চার হাত এক হল। মিলল দুই পরিবারও। সম্প্রতি মহা ধুমধাম করে সমস্ত রীতিরেওয়াজ মেনে বিয়ে সম্পন্ন হয় সুবীক্ষা ও টিনার। তাঁদের বিয়েতে পৌরোহিত্য করেন সংস্কৃত শিক্ষক ও গবেষক সৌরভ বন্দ্রে। মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে স্নাতকোত্তর করার পরে বৈদিক সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করছেন সৌরভ। এ নিয়ে চতুর্থবার সমকামী বিয়েতে পৌরোহিত্য করলেন তিনি। যেভাবে সুবীক্ষা ও টিনার বিয়েতে পাশে থেকেছে দুই পরিবার, তা কার্যত নজিরবিহীন বলেই জানান সৌরভ।
দুই পরিবারই রক্ষণশীল হিন্দু। তা সত্ত্বেও যেভাবে এমন একটা সিদ্ধান্তে মেয়েদের পাশে থেকেছেন তাঁরা, তা শিক্ষণীয়। এমনটাই মনে করছে নেটদুনিয়া। টিনা-সুবীক্ষার বিয়েকে এলজিবিটিকিউ আন্দোলনের সাফল্য হিসেবেই দেখছে ওয়াকিবহাল মহল। বিয়ের পরে কানাডাতেই বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নবদম্পতি। তবে তাঁর আগে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় ঘুরে বেড়াতে চান তাঁরা। কাজে যোগ দেওয়ার আগে ছোট্ট করে সেরে ফেলতে চান নিজেদের মধুচন্দ্রিমাটুকু।