হিন্দু গণহত্যার উপর নির্মিত ছবির পাশে এবার আরএসএস। ছবিটির বেশ কিছু দৃশ্যকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সেন্সর বোর্ড। আর তার বিরুদ্ধেই সরব হল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের এক নেতা। পাশে দাঁড়ালেন পরিচালকের। ঠিক কী বলেছে আরএসএস? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কিছুদিন আগেই ‘কালী’ তথ্যচিত্রের পোস্টারের বিরোধিতায় সরব হয়ে উঠেছিল একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। শিল্পের অধীকার নিয়ে পাল্টা আওয়াজ তুলেছিলেন অনেকেই। তবে সেই যুক্তি গৃহীত হয়নি। এবার কার্যত শিল্পের অধিকার নিয়েই প্রশ্ন তুলল হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস।
সম্প্রতি মুক্তি পেতে চলেছে মালয়ালম ছবি ‘পুঝা মুথল পুঝা ভারে’। ১৯২১ সালের মালাবার হিন্দু গণহত্যার উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে ছবিটি। খিলাফৎ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সেসময় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে লেগে গিয়েছিল বড়সড় অশান্তি। মোপলাহ তথা মাপ্পিলা বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ গিয়েছিল অন্তত ৩৮ জন হিন্দুর। সেই ইতিহাসকেই তুলে ধরা হয়েছে মালয়ালম এই ছবিটিতে। স্বাভাবিক ভাবেই বেশ কিছু নৃশংস এবং আপত্তিজনক দৃশ্য রয়েছে ছবিটিতে। যার উপরেই সম্প্রতি কাঁচি চালানোর নির্দেশ দেয় সেন্সর বোর্ড। বেশ কিছু দৃশ্য বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বোর্ডের তরফে।
আরও শুনুন: ধর্ষণের এফআইআর নিতে নারাজ পুলিশ, থানাতেই গায়ে আগুন দিলেন তরুণী
আর তা নিয়েই সরব হয়েছে এবার রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ। ছবির পরিচালক আলি আকবরের পাশে থাকার বার্তাও দেওয়া হয়েছে সঙ্ঘের তরফে। আলি আকবর নামে ওই পরিচালক হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করার পরে তাঁর নাম হয় রামাসিমহন আবুবকর। সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্তে গোড়া থেকেই ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। মালাবার গণহত্যার সময়ে হিন্দুরা কী ধরনের অত্যাচার সহ্য করেছেন, তারই ঐতিহাসিক দলিল এই ছবি। এমনটাই দাবি পরিচালকের। আর সে সব দৃশ্য বাদ দেওয়া ঐতিহাসিক নথি নষ্ট করার শামিল, জানান আলি।
আর এ ব্যাপারে আলির পাশেই দাঁড়িয়েছে আরএসএস। সঙ্ঘনেতা জে নন্দকুমার সম্প্রতি টুইটারে ছবির প্রতি তাঁর সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। সেন্সর বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের কেরল শাখার বিরুদ্ধে উগরে দিয়েছেন ক্ষোভ। সাম্প্রদায়িক বিভাজন বা জাতিভেদ নিয়ে তৈরি এমন অনেক ছবিকেই ছাড়পত্র দেয় সেন্সর বোর্ড, যা কার্যত সমাজের ক্ষতিই করে। এমনটাই মত ওই আরএসএস নেতার। তিনি জানান, ‘জনগণমন’ বা ‘পুঝু’-র মতো অসংখ্য ছবিকে ছাড়পত্র দিয়েছে সেন্সর বোর্ড, যা ভারতের গণতন্ত্র এবং হিন্দু সমাজের উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে চেয়েছে ইসলামিক ভাবনাচিন্তা। জাতীয়তাবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক এমন অসংখ্য ছবিই কোনও না কোনও ভাবে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র আদায় করে ফেলছে। তবে কেন একই সেন্সর বোর্ডের বিরোধিতার মুখে পড়েছে মালয়ালম এই ছবিটি? প্রশ্ন সঙ্ঘনেতার। তাঁর মতে, এই ধরনের ঐতিহাসিক ঘটনার উপর নির্মীত ছবি থেকে দৃশ্য মুছে ফেলতে বলা আসলে শিল্প এবং নির্দেশকের সঙ্গে চরম অবিচার।
আরও শুনুন: ইসলামি ছোঁয়ায় আপত্তি! যোগীরাজ্যের ওয়ার্ডে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামও বাতিলের সুপারিশ
একই সঙ্গে সেন্সর বোর্ডের অধিকার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওই সঙ্ঘ নেতা। তাঁর কথায়, সংবিধান কিংবা জাতীয়তা বিরোধী কোনও কিছু দেখানো হয়নি ছবিতে। তাহলে কীসের ভিত্তিতে ছবির দৃশ্য বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিল বোর্ড। পাশাপাশি এই ছবির নেপথ্যে রয়েছে পরিচালক-প্রযোজক ও কুশলীদের অকথ্য পরিশ্রম। তার থেকেও বড় কথা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের সাহায্যে তৈরি হয়েছে ছবিটি। আর জনসাধারণের অর্থ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার সেন্সর বোর্ডের নেই বলেই তোপ দাগেন আরএসএস নেতা নন্দকুমার। পাশাপাশি এটা কোনও কমিউনিস্ট-ইসলামিস্ট ইউটোপিয়া নয়, এটা গণতন্ত্র। সাফ জানান ওই নেতা। সব মিলিয়ে জোর হইচই শুরু হয়েছে নয়া এই মালায়লম ছবিটিকে ঘিরে। যার আঁচ ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও।