বিতর্ক যেন লেগেই রয়েছে কর্ণাটকে। এবার সাভারকর আর জিন্নাকে ‘নাস্তিক’ বলে তোপ দাগলেন রাজ্যের বিরোধী নেতা। যা নিয়ে রাজ্য জুড়ে উসকে উঠেছে নয়া বিতর্ক। ঠিক কী বলেছেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
বীর সাভারকর এবং মহম্মদ আলি জিন্না, দুজনেই আদতে নাস্তিক ছিলেন। দেশের ক্ষতিও কিছু কম করেননি এই দুই ব্যক্তি। এমনই মত কর্ণাটকের বিরোধী নেতা বিকে হরিপ্রসাদের।
দিন কয়েক ধরেই টিপু সুলতান আর সাভারকর প্রসঙ্গে উত্তাল কর্ণাটক। স্বাধীনতা দিবসের উদযাপনে এই দুই ঐতিহাসিক চরিত্রের ছবি একই ব্যানারে পাশাপাশি রাখা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়েছিল কর্ণাটকের শিবমোগ্গাতে। জারি করতে হয় ১৪৪ ধারাও। সেই অশান্তির আবহেই টিপু সুলতানকে মুসলিম গুণ্ডা বলে বিতর্ক বাড়ান রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা কে এস ঈশ্বরাপ্পা। আর তার পরেই রাজ্যের বিরোধী নেতার মুখে শোনা গেল নয়া উবাচ। এবার বীর সাভারকর ও মহম্মদ আলি জিন্নাকে ‘নাস্তিক’ বলে দাবি করলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, এই দুই ব্যক্তি আখেরে দেশের ক্ষতিসাধনই করেছেন।
আরও শুনুন: টিপু সুলতান ‘মুসলিম গুন্ডা’, বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যে জোর বিতর্ক কর্ণাটকে
কর্ণাটকে অশান্তি আর বিতর্কের যেন বিরাম নেই। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। হিজাব বিতর্ক এবং লাউডস্পিকার বিতর্ককে ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ। সম্প্রতি লাউডস্পিকার বিতর্কে নিজেদের পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট। হজরৎ মহম্মদকে নিয়ে বিজেপি মুখপাত্র নূপুর সর্মার আপত্তিজনক মন্তব্য ঘিরে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভের আঁচ পৌঁছতে দেরি হয় বিজেপি শাসিত এই রাজ্যেতেও। দেশ জুড়ে যখন পালিত হচ্ছে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান, তখন ব্যানারে টিপু সুলতানের সঙ্গে সাভারকরের ছবি ঘিরে দ্বন্দ্ব বেঁধে গিয়েছিল কর্ণাটকরে শিবমোগ্গায়। সেই থেকে যেন নয়া বিতর্কের মুখ হয়ে দাড়িয়েছেন সাভারকর আর টিপু সুলতান।
একদিন আগেই টিপু নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করে বসেন রাজ্যের বিজেপি বিধায়ক। শুরু হয় বিতর্ক। এমনকী জিভ কেটে দেওয়ার হুমকি-চিঠিও পান ওই বিধায়ক। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বিতর্ক কর্ণাটকে। সাভারকর ও জিন্নাকে ‘নাস্তিক’ বলে আখ্যা দিলেন রাজ্যের বিরোধী নেতা বিকে হরিপ্রসাদ। এই দুই ব্যক্তি কার্যত দেশের সর্বনাশই করেছেন বলে তোপ দাগলেন কংগ্রেস নেতা। পাশাপাশি তিনি আরও জানান, যাঁরা বীর সাভারকরকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছেন, তাঁরা আসলে সাভারকরকে নিয়ে পড়াশোনা করেননি। তাঁর জীবন, এমনকী তাঁর আত্মজীবনীটুকুও পড়েননি তাঁরা, এমনই মত হরিপ্রসাদের।
আরও শুনুন: লাউডস্পিকারে আজান অন্য ধর্মের মৌলিক অধিকারের আঘাত করে না, জানাল কর্ণাটক হাই কোর্ট
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী ও বিজেপি নেতা বিএস ইয়াদুরাপ্পা সম্প্রতি বীর সাভারকরকে নিয়ে একটি বিশেষ উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেন। সাভারকর নিয়ে জনমানসে সচেতনতা বাড়াতে মাইসুরুতে ‘সাভারকর রথ যাত্রা’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গোড়া থেকেই সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছে বিরোধী দল কংগ্রেস। এ নিয়ে দিন কয়েক আগে মুখ খুলেছিলেন কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়াও। তাঁর বক্তব্যের সমালোচনা করে ইয়াদুরাপ্পা জানান, “বীর সাভরকারকে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে দেখানো একেবারেই ঠিক নয়। তাঁর মতে, যাঁদের দেশ এবং ধর্ম নিয়ে কোনও ঠিকঠাক ধারণা নেই, তাঁরাই এ ধরনের মন্তব্য় করতে পারেন। সিদ্দারামাইয়ার মতো নেতার মুখে এ ধরণের বক্তব্য় শোভা পায়না বলেই তোপ দাগেন তিনি।” সেই থেকে সাভারকর প্রসঙ্গে সরকার ও বিরোধী পক্ষের নেতাদের কথার লড়াই চলছে। আর সেই বাকযুদ্ধেই ফের হাতিয়ার শানালেন এবার কংগ্রেস নেতা বিকে হরিপ্রসাদ। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর এই বক্তব্যের পরেই ফের একবার বিতর্কের নিরিখে শিরোনামে উঠে এসেছে দক্ষিণের এই রাজ্যটি।