মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব কালিমা পরিত্যাগ করলেন দেবী কালী। সেই কালো কোশিকাগুলি থেকেই জন্ম নিলেন দেবী কৌশিকী। বধ করলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ শুম্ভ ও নিশুম্ভকে। দেবীর সেই উৎপত্তি তিথিই কৌশিকী অমাবস্যা। তন্ত্রমতে সিদ্ধ এই অমাবস্যার সঙ্গে বিশেষ যোগ রয়েছে স্বয়ং মা তারার। আসুন শুনে নিই এই অমাবস্যার মাহাত্ম্য।
ঘোর অমানিশি রাত্রি মানেই তন্ত্রমতে মা কালীর আরাধনার পুণ্য লগ্ন। প্রতি মাসেরই অমাবস্যা তিথির রয়েছে কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ব্যতিক্রম নয় কৌশিকী অমাবস্যাও। ভাদ্র মাসের এই তিথিতেই ধরাধামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন দেবী তারা। তাই তন্ত্র মতে এই অমাবস্যার রাতকে তারা রাত্রি-ও বলেন অনেকে। অনেক কঠিন ও গুপ্ত তন্ত্র সাধনা করার জন্য এই দিনটিকে ভীষণভাবে উপযুক্ত মনে করেন সাধকরা। তাঁদের মতে, এই রাত্রির কোনও এক বিশেষ মুহূর্তে একসঙ্গে খুলে যায় স্বর্গ ও নরকের দরজা। ফলত সাধক তাঁর চরমতম গুহ্য সাধনা এই রাতে সম্পন্ন করতে পারেন। মাতৃক্ষেত্র তারাপীঠে এই দিনে স্বয়ং দেবী তারা আবির্ভূত হন বলেও বিশ্বাস ভক্তদের।
আরও শুনুন : টিপু সুলতান ‘মুসলিম গুন্ডা’, বিজেপি বিধায়কের মন্তব্যে জোর বিতর্ক কর্ণাটকে
দেবী কৌশিকীর নাম থেকেই এই অমাবস্যার সূচনা। পুরাণ মতে তিনিই বধ করেছিলেন শুম্ভ নিশুম্ভ নামের দুই পরাক্রমশালী দৈত্যকে। তবে সেই কাহিনি জানতে গেলে জানতে হবে সতীর পুনর্জন্মের কথা। দক্ষযজ্ঞের পর ভরা মঞ্চে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে যজ্ঞাগ্নিতে প্রাণ দেন সতী। পুনর্জন্মে ফিরে এলেন পার্বতী রূপে। অপূর্ব সুন্দরী হলেও সেই দেবীর গাত্রবর্ণ ছিল কালো। স্বামী মহাদেবও তাই কালিকা নামেই সম্বোধন করতেন তাঁকে। এমনই একদিন দেবতাদের সামনে কালিকা বলে সম্বোধন করায় ভয়ানক রেগে যান দেবী। অপমানিত হয়ে মানস সরোবরের ধারে দেবী বসেন এক কঠিন তপস্যায়। তপস্যান্তে শীতল মানস সরোবরের জলে স্নান করে নিজের দেহের সব ‘কালো’ পরিত্যাগ করেন দেবী। সেই কালো কোশিকা থেকেই জন্ম হয় অপূর্ব সুন্দর এক কৃষ্ণবর্ণ দেবীর। তিনিই দেবী কৌশিকী। তাঁর আবির্ভাব তিথিই চিহ্নিত হয় কৌশিকী অমাবস্যা হিসেবে।
আরও শুনুন: হিন্দু দেবতারা কেউই ব্রাহ্মণ নন, স্বয়ং শিবও তফসিলি! জেএনইউ উপাচার্যের মন্তব্যে বিতর্ক
এদিকে ব্রহ্মার প্রদত্ত বরে প্রায় অমরত্ব লাভ করেছিলেন শুম্ভ নিশুম্ভ নামের দুই অসুর। কোনও পুরুষ নাকি তাঁদের বধ করতে পারবেন না। এমনকী সাধারণ কোনও নারীর হাতেও তাঁদের মৃত্যু নেই। যে নারী মাতৃগর্ভ ব্যতীত অন্য কোনও ভাবে জন্মলাভ করবেন, একমাত্র তাঁর হাতেই মৃত্যু হতে পারে এই দুই অসুরের। এমন বর পেয়ে মহা পরাক্রমের সঙ্গে তাঁরা দেবলোক আক্রমণ করে বসেন। অসহায় দেবতাদের রক্ষা করতে তখন আসরে নামেন দেবী কৌশিকী। কোনও জননীর গর্ভ থেকে নয়, দেবী কালীর দেহের অংশ থেকে তাঁর জন্ম। সুতরাং ব্রহ্মার বরের শর্ত অনুযায়ী তিনিই শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করতে সক্ষম। তাই তাঁর হাত ধরেই এই দুই দুর্দান্ত দৈত্যের কবল থেকে মুক্ত হল দেবলোক, মুক্তি পেলেন দেবতারাও। আর মর্তে প্রচারিত হল দেবীর মাহাত্ম্য।