‘যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই’- রবিঠাকুরের এ কথাটি যেন তাঁর জীবনে মিলে গিয়েছে অক্ষরে অক্ষরে। লটারিতে ৯৪ কোটি টাকা জিতেও এখন হাত কামড়াচ্ছেন ব্যক্তি। এত টাকা না পেলেই বোধহয় ভালো হতো, এমনই দাবি তাঁর? কেন বলছেন তিনি এই কথা? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
বছর পাঁচেক আগে লটারি পেয়েছিলেন এক ব্যক্তি। জিতেছিলেন প্রায় ৯৪ কোটি টাকা। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরেই ভস্মে ঢেলেছেন অর্ধেক টাকাই। আর তাতেই মহা বিপদে পড়েছেন তিনি। এমনকী এখন তাঁর এ-ও মনে হচ্ছে, এত টাকা না পেলেই বোধহয় ভালো হতো।
আরও শুনুন: মেয়ের জন্মদিনে বিলি ১ লক্ষ ফুচকা, ব্যক্তির উদ্যোগকে কুর্নিশ মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর
২০১৭ সালে হঠাৎই খুলে গিয়েছিল ভাগ্যের দরজা। লটারি কেটে বিপুল অঙ্কের জ্যাকপট জিতে ফেলেন মার্ক লিপসাম নামে ওই ব্যক্তি। পেশায় তিনি ছিলেন লরিচালক। তা অত বড় লটারি জেতার পরে কি আর সেই কাজে মন বসে কারওর! অগত্যা কাজকর্ম ছেড়ে বিলাসবহুল জীবনে মেতে ওঠেন মার্ক। দিব্যি ভালই কাটছিল তাঁর। কিন্তু গোলমাল শুরু হয় লটারি জেতার কিছুদিন পর থেকেই।
কী করবেন এত টাকা নিয়ে! সেই চিন্তা কেড়ে নিয়েছিল রাতের ঘুমটুকুও। অথচ এর আগে কখনও এত উদ্বেগে পড়তে হয়নি তাঁকে। আর সেই উদ্বেগ ডিপ্রেশনের রূপ নিতে সময় নেয়নি। কে না জানে, সুখের চেয়ে শান্তি ভাল। তাই বিলাসবহুল জীবনের মোহ ঝেড়ে সাধারণ জীবনে ফিরে আসেন মার্ক। এমনকি দামী জিনিসপত্র কেনা বা উলটোপালটা খরচ করাও একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। এভাবেই চলল বছর দুয়েক। তবে দুশ্চিন্তা যেন পিছুই ছাড়ে না তাঁর।
আরও শুনুন: মহিলাদের ঋতুকালীন সামগ্রী পাওয়া যাবে বিনামূল্যেই, নজির স্কটল্যান্ডের
এই দুশ্চিন্তার কথা সবটাই জানতেন তাঁর এক প্রতিবেশী। তিনিই একদিন মার্ককে নিয়ে যান এক ‘লাইফ কোচ’-এর কাছে। জীবনের সহজপাঠ শেখানোই নাকি তার প্রধান কাজ। টাকা নিয়ে দুশ্চিন্তা নাকি তাড়াতে পারেন একমাত্র তিনিই। তবে বিনি পয়সায় মোটেই মিলবে না পরামর্শ। বরং তার জন্য গুনতে হবে মোটা অঙ্কের দক্ষিণা।
কুছ পরোয়া নেই। একবার চোখের দেখা না দেখেই ওই লাইফ কোচের দক্ষিণা স্বরূপ ৫০ লক্ষ টাকা তাঁকে দিয়ে দেন মার্ক। তবে এখানেই শেষ নয়। মার্ক জানতে পারেন, সেই লাইফ কোচের দেখা পেতে গেলে দিতে হবে আরও টাকা। আর তারপর থেকেই বিভিন্ন ভাবে টাকা চাইতে থাকেন সেই পরামর্শদাতা। জীবনে শান্তি লাভের আশায় তাঁর কথা মতো টাকা দিতেও থাকেন মার্কও। তবে বছর ঘুরলেও হয়নি সাক্ষাৎ। শেষমেশ মার্ক সিদ্ধান্ত নেন, আর নয়। ওই ভণ্ড ‘লাইফ কোচ’-কে আর সিকি অর্থও ব্যয় করবেন না তিনি। কিন্তু ততদিনে জলের মতো টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে তাঁর। ব্যাঙ্কে মেরেকেটে পড়ে রয়েছে ৫০ কোটি মত। অর্থাৎ লটারি জিতে প্রাপ্ত টাকার প্রায় অর্ধেক টাকাই ভস্মে ঢেলে দিয়েছেন তিনি। আইন-আদালত করেও কোনও লাভ হয়নি। আপাতত আফশোষ করা ছাড়া কোনও পথ খোলা নেই তাঁর কাছে।
আগে বিপুল ওই টাকা কীভাবে সদগতি হবে ভেবে বিষন্ন থাকতেন মার্ক। এখন অবসন্ন বোধ করেন, এত টাকা কোথায় গেল ভেবে। আর এত কিছুর পর তাঁর উপলব্ধি, যত নষ্টের গোড়া ওই লটারিই। ওটি না জিতলে কোনও সমস্যাই আসত না তাঁর জীবনে। এখন সে কথা ভাবেন আর মাথা চাপড়ান মার্ক।