আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন কার না হয়! তবে সকলের পক্ষে সেই স্বপ্নপূরণ ততটা সহজ নয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে তো আরওই কঠিন পথখানা। অর্ধেক আকাশের স্বপ্নটুকই যেখানে আজও অনেকক্ষেত্রে অধরা থেকে যায়, সেখানে আকাশকে ছুঁয়ে দেখা মোটেই চাড্ডিখানি কথা নয়। তবে কেউ কেউ তা পারেন। যেমন পেরেছেন জোয়া। আকাশ তো ছুঁয়েছেনই, তার সঙ্গে ভারতের প্রথম বিমানচালিকা হিসেবে ছুঁয়ে এসেছেন উত্তরমেরু। যার জন্য জোয়া পেয়েছেন বিরলতম সম্মান। আসুন, শুনি তাঁর দুঃসাহসিক কীর্তির গল্প।
উত্তরমেরু অভিযান মুখের কথা নয়। চরম আবহাওয়া, বরফঢাকা সেই উত্তরমেরুতেই বোয়িং বিমান উড়িয়েছেন তিনি। ক্যাপ্টেন জোয়া আগরওয়াল। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা পাইলট যিনি উত্তরমেরুতে ওই দুঃসাহসীক অভিযান সম্পূর্ণ করেছেন। প্রায় ১৬ হাজার কিলোমিটারের রেকর্ড দূরত্ব কভার করেছেন জোয়া ওই অভিযানে। যার জন্য পেয়েছেন বিরল সম্মানও।
আরও শুনুন: রোষ শুধুই সিনেমাকে ঘিরে! ‘বয়কট’ ট্রেন্ড ধর্ষকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় কেন? প্রশ্ন উরফির
সম্প্রতি আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো অ্যাভিয়েশন মিউজিয়ামে জায়গা করে নিয়েছেন জোয়া আগরওয়াল নামে ওই সিনিয়র পাইলট। এয়ার ইন্ডিয়ায় বোয়িং-৭৭৭ বিমানটি চালাতেন তিনি। ২০২১ সালে মহিলাদের একটি দল নিয়ে অভিযানে বেরিয়ে পড়েন জোয়া। সান ফ্রান্সিসকো থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন তাঁরা। সেখান থেকে উত্তরমেরু হয়ে ভারতের বেঙ্গালুরুতে গিয়ে শেষ হয় তাঁদের সফর । এখনও পর্যন্ত এটিই পৃথিবীর দীর্ঘতম আকাশপথ, যেখানে বিমান উড়িয়েছেন জোয়াদের দল। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা, যিনি এই প্রজেক্টের অংশ হতে পেরেছেন।
ব্যক্তিগত স্তরে রেকর্ড ভাঙার প্রাপ্তি তো রয়েইছে। তার সঙ্গেই ওই এভিয়েশন মিউজিয়ামের তরফে বিশেষ সম্মান পেয়েছেন জোয়া। কিন্তু মিউজিয়ামে তো ঠাঁই পায় প্রাচীন সংগ্রহ, ইতিহাসের সব নথি। তবে জোয়াই প্রথম মানুষ, যাঁকে কোনও মিউজিয়ামে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। তিনিই ওই মিউজিয়ামের একমাত্র জীবন্ত সংগ্রহ। অন্যান্য় সংগ্রহের সঙ্গেই যাঁকে দেখতে পাবেন ওই মিউজিয়ামে ঘুরতে আসা সমস্ত দর্শক। তাঁর মুখ থেকে সরাসরি জানতে পারবেন তাঁর দুঃসাহসীক অভিযানের কথা। যা সম্ভবত বিশ্বে প্রথম।
আরও শুনুন: বিলকিস বানোর ধর্ষণকারীদের মুক্তিতে চলল মিষ্টি বিতরণ, কী বলছেন বিলকিসের স্বামী?
হবে নাই বা কেন! জোয়া যে শুধু নিজে রেকর্ডভাঙা কাজ করেছেন তা-ই নয়। অন্য মেয়েদেরও ছক ভাঙতে অনুপ্রাণীত করেছেন ভারতীয় এই পাইলট। অ্যাভিয়েশন মিউজিয়ামের তরফে জানানো হয়েছে, ক্যাপ্টেন আগরওয়ালের এই সাফল্যকে রেকর্ড হিসেবে রাখতে পেরে তারা সম্মানিত। ভবিষ্যত প্রজন্মকে আরও বেশি করে অনুপ্রেরণা দেবে এই ধরণের কাজ। পাশাপাশি বিশ্ব জুড়ে আরও অনেক অনেক মেয়েকে ওড়ার স্বপ্ন দেখাবেন জোয়া। লিঙ্গসাম্যের ধ্বনিকেও একইসঙ্গে আরও জোরালো করে তুলেছেন তিনি। আর সেই সাফল্যকে স্বীকৃতি দিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে জানান মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। এই মর্মে জোয়ার হাতে ইতিমধ্যেই একটি শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে মিউজিয়ামের তরফে। মার্কিন ওই সংগ্রহশালার অংশ হতে পেরে অভিভূত জোয়া। একটি সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন রেকর্ডজয়ী ভারতীয় এই বিমানচালিকা।