টাকা রোজগার মুখের কথা নয়। তা-ও আবার এক কোটি। আর সেই সুযোগটাই সেসময় করে দিয়েছিল একটি টেলিভিশন শো। যেখানে শুধু প্রশ্নের উত্তর দিয়েই জিতে নেওয়া যেত ওই বিপুল পরিমাণ অর্থ। আজও টেলিভিশনের ওই শোয়ের জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। অমিতাভ বচ্চনের উপস্থাপনা তাতে যোগ করেছিল আলাদা মাত্রা। সেই রিয়েলিটি শো-টির প্রথম বিজয়ী ছিলেন যিনি, সেই হর্ষবধন নাওয়াথেকে মনে আছে? ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ জেতার পরে কী করেছিলেন তিনি? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
তখনও রিয়েলিটি শোয়ের এত রমরমা ছিল না। সেই সময় টেলিভিশনে আত্মপ্রকাশ করে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ নামে সেই বিখ্যাত শোটি। যা অল্প দিনেই লাভ করেছিল বিপুল জনপ্রিয়তা। সেই শোয়ের প্রথম বিজয়ী ছিলেন হর্ষবর্ধন নাওয়াথে। জিতে নিয়েছিলেন এক কোটি টাকা।
এক কোটি টাকা জেতার পর ঠিক কেমন ছিল তাঁর জীবন? কী করেছিলেন তিনি সেই টাকা দিয়ে? ভাবছেন তো? কোটি টাকার মালিক হওয়া যে মুখের কথা নয়, তা কিন্তু তিনি হাড়ে হাড়ে বুঝেছেন জীবনে। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে কম নাস্তানাবুদ হতে হয়নি তাঁকে। আর সে গল্পই সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন একটি সাক্ষাৎকারে।
আরও শুনুন: পর্দার বাইরেও সিনেমার কায়দাতেই প্রোপোজ করেছেন এই বলি তারকারা
টেলিভিশনের পর্দায় ইতিমধ্যেই কুড়ি বছর কাটিয়ে ফেলেছে শো-টি। আর সেই শোয়েরই প্রথম বিজয়ী ছিলেন হর্ষ। স্বাভাবিক ভাবেই, সে সময় এক কোটি মানে ছিল বিরাট অঙ্ক। আজকের দিনেও যা নেহাৎ কম নয়। ওই একটা শোই তাঁকে আলাদা একটা পরিচয় এনে দিয়েছিল। প্রথম বিজয়ী বলে কথা। ক্রোড়পতি শো-টি তিনি যখন জেতেন, তখন তিনি সবে পড়ুয়া। পাশাপাশি সিভিল সার্ভিসের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। সেই পরিচয়েই শো-তে গিয়েছিলেন হর্ষ। কেবিসি-তে এক কোটি টাকা জেতার পরে সে বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন তিনি। পরে ব্রিটেনে গিয়ে এমবিএ করেন হর্ষ। সাধারণত বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে এডুকেশন লোন নিতে বাধ্য হন অনেকেই। তবে শো জিতে এই একটা উপকার হয়েছিল তাঁর। খুব বেশির টাকার লোন নিয়ে হয়নি তাঁকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য।
কেবিসি-তে যাওয়াটা হয়েছিল দৈবাৎই। তখন সবে শুরু হয়েছে শো-টি। তার কয়েকটি পর্ব মা-বাবার সঙ্গে বাড়িতে বসে দেখেছিলেন হর্ষ। তখন ফর্যন্ত একজনও সর্বোচ্চ পুরস্কারমূল্য পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। বাড়িতে বসেই অমিতাভ বচ্চনের প্রায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর নির্ভুল দিয়ে দিতেন তিনি। যা দেখে তাঁর মা-বাবা পরামর্শ দিয়েছিলেন, অডিশন দেওয়ার। প্রথম বেশ কয়েকবার ব্যার্থ হন হর্ষ। তবে ৬ বারের বেলা আর খালি হাতে ফিরতে হয়নি তাঁকে। আর তার পরেই ঘটল মিব়্যাকেল। শোয়ে প্রথম বার ১ কোটি টাকা জিতে ফেললেন তিনি। তার উপর অত কাছ থেকে অমিতাভ বচ্চনকে দেখা। সব মিলিয়ে গোটা অভিজ্ঞতাটাই অন্যরকম। মুহূর্তে বদলে গিয়েছিল জীবনটা। এই কেবিসির সৌজন্যেই একবার বাল ঠাকরের সঙ্গেও দেখা করার সুযোগ হয় তাঁর। এমনকী যেখানে তিনি থাকতেন, সেখানকার নামই হয়ে গিয়েছিল ক্রোড়পতি গলি।
আরও শুনুন: লিট্টি চোখা রান্না, নলকূপের জলে স্নান… ছুটি কাটাতে গ্রামে গিয়ে ‘মাটির মানুষ’ পঙ্কজ ত্রিপাঠী
একবার তো একটি চাকরির ইন্টারভিউতে গিয়ে ব্যপক নাস্তানাবুদ হতে হয়েছিল তাঁকে। প্রশ্নকর্তারা তাঁকে জানান, এত টাকা জিতে ফেরার পরে চাকরির আর কী প্রয়োজন তাঁর? এ-ও বলা হয়, এত টাকা পেয়ে গেলে তাঁরা নাকি অবসর নিয়ে গোয়ায় গিয়ে আনন্দ করতেন। সে সময় এ ব্যাপারগুলি মোটেই সুখকর ছিল না হর্ষের জন্য। তবে সে সমস্ত বাধাবিপত্তি কাটিয়েই সফলতা এসেছে জীবনে। আপাতত একটি বড় সংস্থায় উঁচু পদে কর্মরত হর্ষ। না, ক্রোড়পতি হওয়ার পরিচয়ে নয়, কর্মজীবনে সাফল্য পেয়েছেন তিনি নিজের মেধা দিয়েই। আর সে কথাই সাক্ষাৎকারে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন শোয়ের প্রথম বিজয়ী।