এ বছর কমনওয়েলথ গেমসে একের পর এক পদক জিতে চলেছে ভারত। ইতিমধ্যেই সে ঝুলিতে পুরেছে ২০টি সোনা ও ১৫ টি রূপো। বার্মিংহামের এজবাস্টন স্টেডিয়াম থেকে কম করে হলেও ২৩টি ব্রোঞ্জ ঘরে আনতে চলেছে দেশ। সব মিলিয়ে বছরটা মোটেও মন্দ যাচ্ছে না ভারতীয় খেলোয়ারদের জন্য। ইতিমধ্যেই তাঁদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ দুনিয়া। সরকার থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের শুভেচ্ছাবার্তায় ভাসছে তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে অসহোযোগীতার অভিযোগ তুললেন কমনওয়েলথে ব্রোঞ্জ জয়ী এক কুস্তিগির। ঠিক কী অভিযোগ তাঁর? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ঠিকমতো সুযোগ ও প্রশিক্ষণ পেলে যে কোনও আন্তর্জাতিক মঞ্চেই যে সাফল্য পেতে পারে ভারত, তা ফের একবার প্রমাণ করে দিয়েছে ২০২২ সালের কমনওয়েলথের মঞ্চ। ইতিমধ্যেই পদকে ভরে উঠেছে ভারতের ঝুলি। প্রতিদিনই নতুন নতুন পদক আরও যোগ হচ্ছে ভারতের মুকুটে। সম্প্রতি কমনওয়েলথ গেমসে ব্রোঞ্জ জিতেছেন দিল্লির মেয়ে দিব্যা কাকরন। গত শুক্রবার টোঙ্গার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করেছেন দিব্যা। আর তার পরেই শুভেচ্ছাবার্তায় ভরে উঠেছে তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল খোদ শুভেচ্ছাবার্তা জানান দিব্যাকে। টুইটারে দিল্লির অন্যান্য কৃতিদের সঙ্গে তিনি ছবি পোস্ট করেছিলেন দিব্যারও। ‘শাবাশ পহেলওয়ান’ বলে প্রশংসা করতেও ছাড়েননি মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই শুভেচ্ছাবার্তার উত্তরে মুখ্যমন্ত্রীকে পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন দিব্যা।
আরও শুনুন: অদম্য জেদেই সাফল্য, বিশ্বের প্রথম মহিলা হিসাবে এভারেস্টে পা রেখেছিলেন জুনকো
শুভেচ্ছাবার্তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের অভিমানের কথা টুইট করে জানিয়েছেন তিনি। তুলে ধরেছেন গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। তাঁর বক্তব্য, গত কুড়ি বছর ধরে দিল্লিতে থাকেন দিব্যা। কুস্তির প্রশিক্ষণও তিনি নিয়েছেন দিল্লি থেকেই। তবে এতদিন ধরে রাজ্যসরকারের তরফে একটি অর্থপুরস্কার পাননি দিব্যা। সরকারের তরফ থেকে কোনও সাহায্যের আশ্বাসটুকুও মেলেনি কোনওদিন। আর সেই বিষয়টি নিয়েই নিজের অভিমান জানিয়েছেন ব্রোঞ্জজয়ী এই কুস্তিগির। একাধিক বার সাহায্যের দাবি করে দিল্লি সরকারের দ্বারস্থও হয়েছিলেন তিনি। এমনকী গোল্ড কোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে পদক জিতে ফিরেও রাজ্যসরকারের কাছে একই আবেদন জানান তিনি। তবে আজও দিল্লি সরকারের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। আর সে ব্যাপারটি নিয়েই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দিব্যা। টুইটারে জানিয়েছেন, এত পদক এত সম্মান জেতার পরেও কোনও কিছু বদলেছে বলে মনে হয় না। আজও পরিস্থিতি একই রকম কঠিন। আগেও সরকার তাঁর জন্য কিছু করেনি, এখনও কিছু করছে না বলেই ক্ষোভ তাঁর।
তবে দিব্যার অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়েছে দিল্লি সরকার। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, সমস্ত খেলোয়াড়কেই শ্রদ্ধা ও সম্মান জানায় দিল্লি, পাশাপাশি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শুভেচ্ছাও জানাচ্ছে সরকার। তবে দিব্যা আপাতত উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলছেন। দিল্লির হয়ে খেলে থাকলে রাজ্য সরকারি স্পোর্টস প্রকল্পগুলিতে আবেদন করতে পারতেন তিনি। সেক্ষেত্রে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারত বিষয়টিতে। যদিও সরকারের এই দাবি যুক্তিহীন বলেই দাবি করেছেন পদকজয়ী এই কুস্তিগির। কারণ দিল্লির হয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক পদক জিতেছেন তিনি। দিল্লি স্টেট চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ঘরে এনেছেন ১৭টি সোনার পদক। অন্তত আট বার ভারত কেশরীর টাইটেল জিতেছেন তিনি। ২০২০-র এশিয়ার গেমসেও জিতেছিলেন সোনা। এছাড়া ২০১৭ কমনওয়েলথে কুস্তিতে সোনা এবং ২০১৭-র সিনিয়র এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে রূপো ব্যাগস্থ করেছেন দিব্যা। এমনকি হারিয়েছেন কিংবদন্তি কুস্তিগির গীতা ফোগতকেও। তবে ২০১৭ সালে কিডনিতে স্টোন ধরা পড়ে তাঁর। সে সময় সাহায্য চেয়ে দিল্লি সরকারের কাছে আবারও আবেদন জানিয়েছিলেন দিব্যা। তবে তখনও তাঁকে ফিরতে হয় খালি হাতেই। বাধ্য হয়েই উত্তরপ্রদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
আরও শুনুন: জ্ঞানের পথে বাধা নয় ধর্ম, রামায়ণ নিয়ে কুইজে সেরার খেতাব দুই মুসলিম পড়ুয়ার
শুধুই দিব্যারই নয়, দিল্লি সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে বহু কৃতি খেলোয়াড়েরই। ২০১৮ সালে ভারতীয় বক্সার গৌরব বিধুরিও তুলেছিলেন একই রকম অভিযোগ। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নে ব্রোঞ্জজয়ী এই খেলোয়াড়ও দিল্লি সরকারের তরফে কোনও রকম স্বীকৃতি, অর্থসাহায্য বা চাকরির সুযোগ পাননি বলেই অভিযোগ করেছিলেন। টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী আমোজ জেকব ও সার্থক ভামব্রিও সরকারি প্রকল্প থেকে কোনও সুযোগসুবিধা পাননি বলে অভিযোগ তোলেন। খেলোয়াড়দের জন্য কোনও চিন্তাভাবনাই নেই কেজরীওয়াল সরকারের। শুধু প্রশংসাটুকুই সার। আর সেই প্রশ্নই আরও একবার সকলের সামনে তুলে ধরলেন কমনওয়েলথ-জয়ী এই কুস্তিগির।