দেশের স্বরূপ জানতে হলে ধর্ম বিষয়ক আকরগ্রন্থগুলি পড়া জরুরি। বিশেষজ্ঞরা এ-কথা প্রায়শই বলে থাকেন। তবু নির্দিষ্ট ধর্ম পরিচয়ের কারণে অনেকেই সে-কথা মানতে চান না। অনেকেই আবার মনে করেন, পৃথক ধর্মের মানুষ হয়ে আলাদা আলাদা ধর্মগ্রন্থ পড়লেই চলে। কিন্তু সে-পথে হাঁটেননি দুই পড়ুয়া। ইসলাম ধর্মাবলম্বী হয়েও তাঁরা মন দিয়ে পড়েছিলেন রামায়ণ। আর সেই রামায়ণ নিয়ে আয়োজিত এক কুইজে অংশ নিয়ে তাঁরাই জিতে নিলেন সেরার শিরোপা। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
জ্ঞানের কোনও সীমানা হয় না। আর তা থাকা উচিতও নয়। তাই ইসলামিক স্টাডির পড়ুয়া হলেই যে বেদ-পুরাণ কিংবা অন্য ধর্মের বই পড়া যায় না, সেই ধারণাকে কার্যত ভেঙে দিয়েছেন মালপ্পুরমের ভালানচেরির কেকেএইচএম ইসলামিক অ্যান্ড আর্টস কলেজের দুই পড়ুয়া। রামায়ণ সংক্রান্ত একটি রাজ্যস্তরের কুইজ প্রতিযোগিতায় জিতে নিয়েছেন তাঁরা প্রথম পুরস্কার।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের আলিগড় ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সনাতন ধর্মের পাঠ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। স্নাতকোত্তর স্তরের জন্য নতুন পাঠ্যক্রমে যেমন থাকছে বেদ, পুরাণ, উপনিষদ-এর মতো ধর্মগ্রন্থগুলি, তেমনই জোর দেওয়া হবে অন্যান্য ধর্মের পাঠের উপরেও। আর কোনও একটি ধর্মকে ভাল করে বুঝতে বা জানতে অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে জানা যে জরুরি, তা-ই প্রমাণ করে দিলেন মহম্মদ জাবির পিকে এবং মহম্মদ বশিথ নামে এই দুই পড়ুয়া। তাঁরা দু’জনেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র।
আরও শুনুন: প্রত্যেক জেলায় হোক ‘সংস্কৃত গ্রাম’, অভিনব উদ্যোগ উত্তরাখণ্ডের
সম্প্রতি একটি প্রকাশনা সংস্থার তরফে ওই বিশেষ প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রায় ১ হাজার জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন সেখানে। যাঁদের মধ্যে থেকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয় মোট পাঁচ জনের নাম। অভিরাম এমপি, নীথু কৃষ্ণান এবং নবনীত গোপনের সঙ্গে ওই প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ নম্বর পান জাবির এবং বশিথও। জাবিরের মতে, সব ধর্মকেই সমান ভাবে জানা এবং বোঝা দরকার। আর তার জন্য চাই পড়াশোনা। জাবির আরও জানান, সব ধর্মের সাহিত্য এবং পুথি পড়েই ইসলাম ধর্মকে সমর্থন করেন তিনি ।
আসলে তাঁদের কলেজের পাঠ্যক্রমেও সব ধর্মের সম্পর্কেই পড়ানো হয়। হিন্দু, শিখ বা জৈন সব ধর্মের বইপত্তরই তাই পড়তে হয়েছে তাঁদের। সমস্ত ধর্ম এবং তাঁর মতাদর্শকে বোঝাটাই সেই শিক্ষার মূল। আর কোনও ধর্মেই অশান্তি বা বিদ্বেষের জায়গা নেই। প্রতিটা ধর্মই মিলেমিশে থাকার কথা বলে। সমস্ত ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা করে সেই সার কথাটাই বুঝেছেন জাবির। কলেজের পড়াশোনার জন্য সিলেবাসে থাকা রামায়ণ পড়তে তো তাঁকে হয়েছিলই। তবে অতিমারী পর্বে সেই আগ্রহ আরও বাড়ে। আসলে লকডাউনের সময় খুব মন দিয়ে রামায়ণ পড়েছিলেন তিনি। সম্প্রতি এ নিয়ে আরও বেশ কিছু লাইব্রেরি ওয়ার্কও করেন জাবির। আর তার পরেই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ। ছোট থেকে রামায়ণ পড়েছেন আরেক বিজয়ী বশিথও। বরাবরই রামায়ণে বর্ণিত ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের প্রেম, দেশের জন্য ভালবাসা ভাল লাগত তাঁর। সেখান থেকেই বিষয়টি নিয়ে আরও জানার আগ্রহ জন্মেছিল বশিথের।
আরও শুনুন: সনাতন ধর্মের পাঠ এবার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের
তবে মুসলিম হয়ে রামায়ণের কুইজ জেতা নিয়ে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি তাঁদের। প্রাথমিক ভাবে খারাপ লাগলেও সেসবকে তোয়াক্কা করেননি দুই বিজয়ী। ভারতবর্ষের সংস্কৃতিকে জানতে রামায়ণ মহাভারতের মতো বই আর নেই বলেই মনে করেন তাঁরা। আর শিক্ষা বা জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভেদাভেদের কোনও জায়গা নেই বলেই মনে করেন এই দুই পড়ুয়া।