বহু গ্রামীণ এলাকাতেই আজও শুধু মিডডে মিলের টানেই স্কুলমুখী হয় পড়ুয়ারা। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা বহু পরিবারের কাছেই স্কুল থেকে দেওয়া ওই খাবারটুকু তাই ভীষণ জরুরি। সারাদিনে ওইটুকুই হয়তো পুষ্টিকর খাবারদাবার খেতে পায় তারা। সেই নিশ্চিত খাবারটুকুর টানেই বাবা-মায়েরা স্কুলে পাঠান তাঁদের সন্তানকে। ভারতবর্ষের বহু জায়গাতেই আজও ছবিটা তেমনই। অথচ তার মধ্যেই থাবা বসায় জাতিবিদ্বেষের বিষ। মিড-ডে মিলের খাবার খেতে অস্বীকার করে পড়ুয়ারা। কারণ তা রেঁধেছেন দলিত কোনও মহিলা। ফের তেমনই ঘটনার সাক্ষী রইল দেশ? কোথায় ঘটেছে সেই ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পড়ুয়াদের সকলেরই বয়স আট থেকে দশের মধ্যে। অথচ এই বয়সেই তাঁদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে জাতিবিদ্বেষের বিষ। সম্প্রতি দলিত রাঁধুনিদের হাতে তৈরি মিডডে মিলের খাবার খেতে আপত্তি জানাল একটি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্যে ফের ঘটল তেমনই ঘটনা।
আরও শুনুন: সনাতন ধর্মের পাঠ এবার আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে, ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষের
এই প্রথম নয়। গত কয়েক মাসে একাধিক বার একাধিক রাজ্য থেকে এই অভিযোগ উঠেছে। উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশের পরে সেই খাতায় নাম লেখাল গুজরাটও। সেখানকার মোরবি জেলার একটি সরকারি স্কুলে সম্প্রতি এমনই অভিযোগ উঠেছে। দেশের সমস্ত প্রাথমিক স্কুলেই মিডডে মিল প্রকল্প চালু করেছে সরকার। বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেপুলেরা আজও সেই মিডডে মিলের টানেই স্কুলমুখী হয়। গুজরাটের এই স্কুলও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিদিনই সেখানে পড়ুয়াদের জন্য তৈরি হয় মিডডে মিলের খাবার। সম্প্রতি যা রান্না করার বরাত পান ধারা মাওকানা নামে স্থানীয় এক মহিলা। ধারা দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ, আর সে কথা জানার পরেই বেঁকে বসেছে স্কুল পড়ুয়ারা। দলিতের হাতে তৈরি খাবার তারা মুখে তুলবে না জানিয়ে কার্যত বয়কট করা হয়েছে মিডডে মিল প্রকল্পই।
গরমের ছুটি কাটিয়ে স্কুল খুলেছে মাত্র কয়েকদিন হল। স্কুল সূত্রের খবর, তার পরেই নাকি মিডডে মিল রান্নার বরাত যায় ধারা ও তাঁর স্বামীর কাছে। আর সে কথা জানাজানি হওয়ার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন অভিভাবকেরা। দলিতের হাতে তৈরি খাবার খেতে বারণ করা হয়েছে বাচ্চাদেরও। জানা গিয়েছে, ১৫৩ জন স্কুল পড়ুয়ার মধ্যে অন্তত ১৪৭ জন ওই খাবার মুখে তুলতে আপত্তি জানিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই নষ্ট হয়েছে স্কুলে রান্না করা মিডডে মিলের খাবার। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক পর্যন্ত করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে তাতেও সুরাহা হয়নি।
আরও শুনুন: ‘হর ঘর তিরঙ্গা’ উদ্যোগে শামিল নয় RSS! আক্রমণ কংগ্রেসের, কী জবাব সঙ্ঘের?
ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্তে ওই স্কুলে পৌঁছয় বিশেষ একটি তদন্তকারী দল। তাদের কাছে অভিভাবকেরা জানান, স্কুলে তৈরি খাবার বাচ্চাদের পছন্দ নয় বলেই তারা ওই খাবার খেতে আপত্তি জানিয়েছে। এমনকী ইদানীং তারা বাড়ি থেকেই খাবারদাবার নিয়ে আসছে বলেও জানান অভিভাবকেরা। এতদিন যে মিডডে মিলের খাবার খেতে কোনও সমস্যা হয়নি পড়ুয়াদের, হঠাৎ করে কেন সেই খাবার মুখে তুলতে নারাজ তারা, স্বাভাবিক ভাবেই উঠেছে প্রশ্ন। ওই দলিত মহিলা রান্নার দায়িত্বে আসার পরেই এই বদল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ।
এ দেশে দলিত নিগ্রহের ঘটনা কোনও নতুন বিষয় নয়। আজও বহু ক্ষেত্রেই নানা সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হন তাঁরা, শুধুমাত্র দলিত হওয়ার ‘অপরাধে’। আর সেই জাতিবিদ্বেষের শিকড় যে সমাজের কোন গহিনে চারিয়ে গিয়েছে, তা আরও একবার মনে করিয়ে দিল গুজরাটের এই ঘটনা।