বয়স মাত্র ৭। তবু এই বয়সেই কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে পরিবারের দায়িত্ব। সাইকেল চালিয়ে এক বালক করছে খাবার ডেলিভারির কাজ। যদিও এই কাজ করতে গিয়ে পড়াশোনা ছাড়েনি ওই খুদে। সকালে স্কুল আর রাতে সাইকেল চালিয়ে খাবার ডেলিভেরি- তার জীবন এখন এই চক্রেই বাঁধা। আসুন শুনে নেওয়া যাক তার কথা।
এই বয়স আশেপাশের জগতটাকে চেনার বয়স। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে মাঠ দাপিয়ে খেলার বয়স। কিংবা দাদু ঠাকুমার কোলে বসে গল্প শোনার বয়স। কিন্তু এসবের কোনওটাই ভাগ্যে জোটেনি বছর সাতেকের ছেলেটির। সকালে স্কুল তারপর বাড়ি ফিরে সাইকেল নিয়ে খাবার ডেলিভারি করতে বেরোয় সে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে খাবার ডেলিভারি করতে বেজে যায় রাত ১১ টা। তার জীবনসংগ্রামের সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই আবেগে ভাসল নেটদুনিয়া।
আরও শুনুন: পাঁচ বছরে সৎকার একশোর বেশি বেওয়ারিশ শবদেহের, সম্মানিত মহিলা কনস্টেবল
কিছুদিন আগে ছেলেটির বাবা এক মারাত্মক দুর্ঘটনায় আহত হন। তারপর থেকেই কার্যত কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন তিনি। রোজগারের টানে তাই বাধ্য হয়েই বাবার জুতোয় পা গলিয়েছে ছেলে। বয়স ৭, অথচ এতটুকু বিচলিত না হয়ে পথে নেমে পড়েছে সে। সঙ্গী কেবলমাত্র একটি সাইকেল। ছেলেটির একটি ভিডিও নেটদুনিয়ায় প্রকাশ করেছেন এক ব্যক্তি। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে ছেলেটি এক হাতে মোবাইল আরেক হাতে চকোলেটের বাক্স নিয়ে বলছে নিজের জীবনের কথা। পিঠে যথারীতি রয়েছে স্কুল ব্যাগ। রাহুল মিত্তাল নামের ওই ব্যক্তিই সকলকে জানিয়েছেন ছেলেটির অবস্থার কথা। সকালে নিয়মমাফিক স্কুলে যায় সে। তারপর সন্ধ্যে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এক বিশেষ সংস্থার হয়ে খাবার ডেলিভারির কাজ করে।
This 7 year boy is doing his father job as his father met with an accident the boy go to school in the morning and after 6 he work as a delivery boy for @zomato we need to motivate the energy of this boy and help his father to get into feet #zomato pic.twitter.com/5KqBv6OVVG
— RAHUL MITTAL (@therahulmittal) August 1, 2022
ওইটুকু বয়সে যেভাবে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে ছেলেটি, তাতে নেটদুনিয়ায় বহু মানুষ কুর্নিশ জানিয়েছেন তাঁকে। অনেকেই তার বাবার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। আরেক ব্যক্তি অবশ্য ভেবেছেন অন্য ভাবনা। তাঁর বক্তব্য, এই শিশুর ঘটনাটি থেকে কখনই অনুপ্রেরণা নেওয়া উচিত নয়। বরং তিনি প্রশ্ন তুলেছেন সেই সংস্থার প্রতি। তাঁরা কেন নিজেদের কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? একই ভাবে সেই সংস্থার নাম করে বিষয়টির দিকে আলোকপাত করতে বলেছেন আরও এক ব্যক্তি।
আরও শুনুন: স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর কৃষ্ণের ছবি, বিতর্কের মুখে ‘মাসুম সওয়াল’ ছবির পোস্টার
এই ভিডিও নজরে এসেছে খাবার ডেলিভারি সংস্থার কর্তৃপক্ষেরও। তাঁদের তরফ থেকে ছেলেটি ও তার বাবার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে। তাঁরা নিশ্চয়ই বালকটির পরিবারে জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করবে, এমনটাই আশা নেটিজেনদের। তবে এইসব কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে কুর্নিশ জানাতেই হয় ছেলেটির সাহস আর অদম্য মনের জোরকে। তার জীবন সংগ্রামের এই গল্প অনুপ্রেরণা না হলেও সাহস জোগাবে অনেকের মনেই। প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কীভাবে রুখে দাঁড়াতে হয়, ছেলেটির জীবনসংগ্রাম যেন সেই বার্তাই তুলে ধরেছে সকলের সামনে।