‘কালী’ তথ্যচিত্রের পোস্টার ঘিরে দিনকয়েক আগেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ। এমনকী পরিচালককে খুনের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়। ফের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগে কাঠগড়ায় উঠল একটি হিন্দি সিনেমা। এবার অভিযোগ আরও গুরুতর। ছবির পোস্টারে স্যানিটারি ন্যাপকিনের সঙ্গে দেখা গিয়েছে কৃষ্ণমূর্তির ছবি। তা নিয়েই ঘনিয়েছে বিতর্ক। আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কখনও ‘কালী’ ছবির পোস্টার তো কখনও বুকারজয়ী উপন্যাস। কখনও লাউডস্পিকার বিতর্ক তো কখনও নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্য, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বারবার কোনও না কোনও ভাবে উসকে উঠেছে এ দেশে। তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ। ফের একটি হিন্দি ছবির পোস্টার ঘিরে দানা বাঁধল বিতর্ক। দু-এক দিন আগেই শিববন্দনা গেয়ে মুসলিম ধর্মগুরুদের রোষের মুখে পড়েছিলেন এক গায়িকা। অন্য ধর্মের ভজন গাওয়া ইসলাম ধর্মের বিরোধী বলেও অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁরা। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার নিশানায় একটি হিন্দি ছবির পোস্টার। ‘মাসুম সওয়াল’ নামে ওই ছবির পোস্টারে হিন্দু দেবতার ছবি আপত্তিজনক ভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বলেই অভিযোগ।
আরও শুনুন: মহিলা সরকারী কর্মীদের জন্য ঋতুকালীন ছুটির কথা ভাবছে না সরকার, জানালেন স্মৃতি ইরানি
কী এই ছবির বিষয়? ছবিতে কথা বলা হয়েছে ঋতুস্রাব নিয়ে। আর এই বিষয়টি নিয়ে এখনও ট্যাবুর শেষ নেই সমাজে। এখনও এ বিষয়ে লোকসমাজে কথা বলতেও অস্বস্তিবোধ করেন অনেকেই। মাসের ওই কটা দিনকে ‘অপবিত্র’ ধরে নিয়ে নানা রকমের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় মেয়েদের উপরে। আজ থেকে নয়, দীর্ঘকাল ধরেই চলে আসছে ওই প্রথা। আজও বহু জায়গাতেই ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধিটুকু পর্যন্ত মানা হয় না। কুসংস্কার আর ট্যাবুর অন্ধকারে আজও স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত হন অসংখ্য মেয়ে। আর সেই ট্যাবুর বিরুদ্ধেই সওয়াল করছে এই সিনেমাটি।
পরিবারের বড়দের হাত থেকে একটি ছোট বালগোপালের মূর্তি উপহার পেয়েছিল ছোট্ট মেয়েটি। যা তার হাতে দিয়ে বলা হয়েছিল, কৃষ্ণই তার ভাই। খুদে মন অতশত না বুঝেই সেই ছোট্ট বালগোপালের মূর্তির সঙ্গেই পাতিয়ে ফেলেছিল সখ্য। রাতে শোয়ার আগে গল্প শোনানো থেকে ব্যাগে করে লুকিয়ে তাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া- সেই খুদে মেয়ের সবসময়ের সঙ্গী ছিল কৃষ্ণমূর্তিটি। তবে সেই সখ্যের মাঝে এসে দাঁড়ায় বয়ঃসন্ধি। বয়সের নিয়মে শরীর পরিবর্তিত হয়। ঋতুমতী হয় মেয়েটি। আর সঙ্গে সঙ্গেই তার উপর এসে চেপে বসে একগাদা সামাজিক ট্যাবু। যার বিরুদ্ধেই শেষমেশ প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মেয়েটি। দ্বারস্থ হয় আদালতেরও। এই হল ছবির বিষয়বস্তু। আর সেই ‘মাসুম সওয়াল’ ছবির পোস্টার নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। পোস্টারে একটি স্যানিটারি ন্যাপকিনের আদল ফুটে উঠেছে, আর তার উপরে ছবির কলাকুশলীদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে একটি কৃষ্ণমূর্তিও। যা ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে বলেই দাবি করেছেন একদল ব্যক্তি।
আরও শুনুন: শিবের বন্দনা গাওয়া ‘পাপ’, এবার মুসলিম ধর্মগুরুদের রোষের মুখে শিল্পী
যদিও ছবির নির্মাতারা জানান, কারওর ভাবাবেগে আঘাত করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। ঋতুস্রাব নিয়ে সমাজের এই কুসংস্কারের শিকড়ে আঘাত করাই ছিল ছবির একমাত্র উদ্দেশ্য। ছবিতে আইনজীবীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে যে অভিনেত্রীকে, সেই একাবলী খান্নার কথায়, “নতুন প্রজন্মের কাছে এ ধরনের কুসংস্কারের কোনও জায়গা নেই। সেই বার্তাটুকু দেওয়াই ছিল এই ছবির প্রধান উদ্দেশ্য। পাশাপাশি মেয়েদের উপর যুগ যুগ ধরে যে অন্ধকার বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া হয়ে এসেছে, সেই ট্যাবুকেই ভাঙতে চাওয়াটুকুই খালি রয়েছে এই ছবিতে।” ছবির পরিচালক সন্তোষ উপাধ্যায় জানান, “অনেক সময় দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণেই ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। যেহেতু ঋতুস্রাবের উপরে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি, ফলে ছবির প্রয়োজনেই স্যানিটারি ন্যাপকিনের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। কারওর ধর্মীয় ভাবনাকে আঘাত করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না ছবিটির।”
ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর চর্চা শুরু হয়েছে ছবিটির পোস্টার ঘিরে। ছবিটির মুক্তি নিয়ে বেশ কিছু সমস্যার মধ্যে দিয়েও যেতে হয় নির্মাতাদের। তবে সেই সব বাধার মুখে জবাব দিতেই আগামী ৫ অগস্ট প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে ছবিটি। ঋতুস্রাব নিয়ে সমাজের এত এত ট্যাবুর মুখে কতটা সওয়াল তুলতে পারে এই ছবি, সেটাই এখন দেখার।