সশরীরে উপস্থিত নেই পাত্র পাত্রী কেউ-ই। তবু সাড়ম্বরে আসর বসেছে বিয়ের। শুনতে অবাক লাগলেও এমনটাই হচ্ছে কর্ণাটকের এক গ্রামে। কোথায় গেলেন পাত্র-পাত্রী? আসুন শুনে নেওয়া যাক।
৩০ বছর আগেই মারা গিয়েছেন পাত্র এবং পাত্রী। তাঁদেরই বিয়ের আসরে এক হয়েছে গোটা গ্রাম। মৃত মানুষদের নিয়ে অনুষ্ঠান বলে কেউ দুঃখ করছেন, তাও নয়। সাধারণ বিয়েবাড়ির মতোই ব্যস্ততা সবার মধ্যে। সাজগোজও করেছেন সবাই। কথা বলছি, কর্ণাটক ও কেরলের কয়েকটি গ্রামের প্রচলিত এক রীতি নিয়ে। এই রীতি অনুযায়ী এমন দু’জনের বিয়ে দেওয়া হয়, যাঁরা জন্মের সময়ই মারা গিয়েছেন। স্থানীয় ভাষা অনুযায়ী এর নাম ‘প্রেত কল্যাণম’। মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা এবং তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা অর্পণ করার উদ্দ্যেশ্যেই এমন আয়োজন করেন পরিবারের বাকি সদস্যরা। কীভাবে হয় এই বিয়ে?
আরও শুনুন: জন্ম ১৯৫৬ সালে, একের পর এক ‘কেলেঙ্কারি’র পর্দাফাঁস, কোন বলে এত শক্তিশালী ইডি?
একেবারেই সাধারণ বিয়ের মতোই করা হয় আয়জন। প্রথমে পাত্রের বাড়ি থেকে লোক আসে পাত্রী পছন্দ করার জন্য। এমনকি পাত্রীর বয়স যদি পাত্রের থেকে বেশি হয় তাহলে আর সেই বিয়ে দেওয়াও হয় না। সাধারণ ভাবে যাকে পাকা দেখা বলে, সেই পর্ব মিটলে আয়োজন করা হয় বাগদানের। তার জন্য দুই পরিবার একে অপরের বাড়িতে যান। মূল অনুষ্ঠানের শুরু হয় আশীর্বাদের মাধ্যমে। এরপর বিয়ের দিন ঠিক করা হয় সেখানে বসেই। বিয়ের দিন সকাল থেকেই লেগে থাকে আচার অনুষ্ঠানের ধুম। প্রথমেই পাত্রের বাড়ি থেকে আসে পাত্রীর জন্য নতুন কাপড়। পাত্রীকে সেই কাপড় পরে সাজার জন্য যথেষ্ট সময়ও দেওয়া হয়। হঠাৎ করে কেউ সেই অনুষ্ঠানের মাঝে গিয়ে পড়লে বুঝতেই পারবেন না এখানে আসল বিয়ে হচ্ছে না। অন্তত চারিদিকের পরিবেশ সেকথা বুঝতে দেবে না। পাত্রীর সাজগোজ সম্পূর্ণ হলে শুরু হয় বিয়ের মূল অনুষ্ঠান। দক্ষিণী বিয়ের যাবতীয় সব রীতি-ই মানা হয় সেখানে। কন্যাদান থেকে আরম্ভ করে মঙ্গলসূত্র পরানো সবই করা হয় এই বিয়েতে। এমনকি সাত পাকে ঘোরার রীতি-ও পালন করা হয় এমন বিয়েতে। সব শেষে অবশ্যই থাকে ভুরিভোজের আয়োজন। যদিও এই বিয়ের আরও এক অদ্ভুত নিয়ম আছে। শিশু এবং অবিবাহিতরা নাকি এই বিয়ে দেখারই সুযোগ পায় না।
Bride and groom do the ‘Saptapadhi’ 7 rounds before sit for the marriage. pic.twitter.com/IMnSEb4rio
— AnnyArun (@anny_arun) July 28, 2022
আরও শুনুন: ‘রাষ্ট্রপতি’র স্ত্রী-লিঙ্গ কি ‘রাষ্ট্রপত্নী’? বিতর্কে অধীর-সম্বোধন, ব্যাকরণ কী বলছে?
সম্প্রতি এমন ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছে অ্যানি অরুন নামের এক ব্লগার। কর্ণাটকের এক গ্রামে এমন বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন তিনি। নিজের টুইটারে প্রকাশ করেছেন সেই বিয়ের বেশ কিছু মুহূর্তের ভিডিও। তিনি নিজেও বেশ অবাক মৃত মানুষের এমন বিয়ে দেখে। মজা করে বলেছেন বিয়ের শেষে আত্মীয়রা নবদম্পতিকে টাকা উপহার দেয়, আর সব মিলিয়ে কে কত টাকা পেল, সেকথা সবার মাঝে ঘোষণাও করা হয়। আসলে স্থানীয়দের বিশ্বাস বিবাহ ছাড়া নাকি জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আর যাঁদের জন্মের পরেই মৃত্যু হয়, তাঁরা সেই সুযোগটুকুও পান না। তাই তাঁদের আত্মার শান্তি বা মোক্ষলাভের উদ্দেশ্যেই পালন করা হয় এমন রীতি।