কখনও ধর্মস্থানে লাউডস্পিকার বিতর্ক তো কখনও মসজিদ থেকে শিবলিঙ্গ উদ্ধার, কখনও হজরত মহম্মদকে ঘিরে বিতর্কিত মন্তব্য তো কখনও সিনেমার পোস্টারে কালীর ছবি-বিতর্ক, বারবার ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা দানা বেঁধেছে এ দেশের বুকে। কিছু দিন আগেই বুকার জিতে বিশ্বের বুকে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন সাহিত্যিক গীতাঞ্জলি শ্রী। এবার তাঁর সেই বুকারজয়ী উপন্যাস ঘিরেই দানা বাঁধল বিতর্ক। হিন্দু দেবদেবীদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ তুলে তাঁর অনুষ্ঠানও বাতিল হল আগরায়। ঠিক কী অভিযোগ তোলা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে, আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
সাম্প্রতিক কালে ধর্ম নিয়ে বারবার উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ। খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে শিল্প, সংস্কৃতি, সব জায়গাতেই ইদানীং এসে পড়েছে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার ছাপ। আর এবার সেই ছায়া এসে পড়ল বুকারজয়ী উপন্যাস ‘রেত সমাধি’-র উপরেও। সম্প্রতি ভারতবর্ষকে এই বিরল সম্মান এনে দিয়েছেন হিন্দি ভাষার সাহিত্যিক গীতাঞ্জলি শ্রী। এই প্রথম কোনও ভারতীয় ভাষার উপন্যাস পেয়েছে আন্তর্জাতিক বুকার সম্মান। কিন্তু খোদ ভারতেই সেই উপন্যাস নিয়ে উঠল আপত্তি।
আরও শুনুন: গীতাঞ্জলি শ্রী-র হাত ধরে প্রথম বুকার পুরস্কার পেল ভারতীয় ভাষা
গীতাঞ্জলির উপন্যাসটি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে, অভিযোগ এমনটাই। সে কারণেই বাতিল হয়ে গেল তাঁকে সম্মাননা প্রদানের অনুষ্ঠানও। ‘রেত সমাধি’ নামে ওই উপন্যাসে হিন্দু দেবদেবী শিব ও পার্বতীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর কথাবার্তা রয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের বাসিন্দা জনৈক সন্দীপ কুমার পাঠক। সম্প্রতি টুইটারে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ও রাজ্য পুলিশের কাছে বিষয়টি নিয়ে এফআইআর দায়েরের আবেদন জানান তিনি। আর সেই অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। তবে লেখিকার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের আগে পুলিশের তরফে বইটি পড়ে দেখা হবে বলেই জানানো হয়েছে।
এই অসহিষ্ণুতার আবহেই আগরায় গত শনিবার আয়োজন করা হয়েছিল একটি অনুষ্ঠানের। যেখানে বুকারজয়ী লেখিকাকে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আয়োজকরা। তার আগেই এমন অভিযোগ ওঠায় পিছিয়ে আসেন লেখিকা স্বয়ং। বিষয়টিতে তিনি আঘাত পেয়েছেন বলেই জানান গীতাঞ্জলি শ্রী। ওই সংবর্ধনা তিনি গ্রহণ করবেন না বলেও জানিয়ে দেন ব্যথিত লেখিকা। তিনি আরও জানিয়েছেন, তাঁর সৃষ্টিকে জোর করে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে টেনে আনা হচ্ছে। তাঁর সাহিত্যে যা ব্যবহার হয়েছে তা ভারতীয় পুরাণেরই অংশ। গীতাঞ্জলির মতে, তাঁর লেখা নিয়ে যাঁদের আপত্তি রয়েছে, আদালতে গিয়ে হিন্দু পুরাণকেই চ্যালেঞ্জ করা উচিত তাঁদের । এই অসহিষ্ণুতার আবহে কোন রকম অনুষ্ঠানেই অংশ নেবেন না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন বুকারজয়ী সাহিত্যিক।
আরও শুনুন: শ্লোকে ‘ভেজাল আমদানি’ করেই সতীদাহ! শাস্ত্রের পথেই প্রতিরোধ করেছিলেন রামমোহন
শিল্প বা সাহিত্যের উপরে মৌলবাদীদের এমন চোখরাঙানি অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও লেখালিখির জন্য নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন বহু লেখক-সাহিত্যিক। তসলিমা নাসরিন থেকে সলমন রুশদি – বহু খ্য়াতনামা ব্য়ক্তিত্বই এর ভুক্তভোগী। দিন কয়েক আগেই ‘কালী’ নামক একটি তথ্যচিত্রের পোস্টার ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ। এমনকী পরিচালককে প্রাণে মারার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করার অভিযোগ উঠল বুকারজয়ী সাহিত্যিকের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড়। বিশ্বের মঞ্চে সম্মান ছিনিয়ে আনা সাহিত্য নিয়ে এ ধরনের অভিযোগ, দেশের সাংস্কৃতিক পরিসরের উপরই বড়সড় আঘাত বলে মনে করছেন অনেকেই।