ঋতু চলাকালীন শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যা ও অস্বস্তির মধ্যে দিয়ে যেতে হয় প্রত্যেক মেয়েকেই। অফিস-কাছারিতে অনেক সময়েই তেমন ব্যবস্থা থাকে না, যেখানে ঋতুকালীন সময়ের স্বাস্থ্য ও হাইজিন বজায় রাখতে পারেন মহিলাকর্মীরা। অনেক সময়ই প্রচণ্ড শারীরিক কষ্ট নিয়েই তাই অফিস করতে বাধ্য হন অনেকে। অনেকে নানা ধরণের সংক্রমণেরও শিকার হন। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়ার মতো বহু সভ্য দেশেই তাই রয়েছে ঋতুকালীন ছুটির সুবিধা। ভারতের বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থাও ইদানীং সেই ছুটির ব্যবস্থা করেছে। তবে এ নিয়ে তেমন কিছু ভাবছে না এদেশের সরকার। এ দেশের সরকারী কর্মীদের জন্য এমন কোনও প্রস্তাব নেই বলেই সাফ জানিয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানী। ঠিক কী জানালেন তিনি লোকসভায়?আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
ঋতুকালীন স্বাস্থ্য বা হাইজিনের ব্যাপারে আজও তেমন সচেতনতা তৈরি হয়নি দেশের বহু জায়গাতেই। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো বটেই, বহু গ্রামীণ এলাকাতেও আজও ব্যবহৃত হয় না স্যানিটারি ন্যাপকিন। মানা হয় না পরিচ্ছন্নতা বিধিও। ঋতু চলাকালীন মেয়েদের অচ্ছুৎ করে রাখার রীতি চলে আসছে আজও।
শুধু গ্রামাঞ্চল কেন, এই সময়ে মেয়েদের শারীরিক সমস্যা বা সুবিধা-অসুবিধার কথা তেমন করে ভাবতে চায় না শহরাঞ্চলও। অফিস-পত্তরে কর্মরত মেয়েরা পায়না তেমন কোনও সুবিধাও। এমনকি মেয়েদের জন্য ঋতুকালীন ছুটির ব্যবস্থা নেই সরকারি ক্ষেত্রেও।
আরও শুনুন: ‘রাষ্ট্রপতি’র স্ত্রী-লিঙ্গ কি ‘রাষ্ট্রপত্নী’? বিতর্কে অধীর-সম্বোধন, ব্যাকরণ কী বলছে?
সম্প্রতি এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে। ২০১৭ সালের ‘মেনস্ট্রুয়েশন বেনেফিট বিল’ অনুযায়ী ঋতুকালীন ছুটির কথা আইনে থাকলেও তার কোনও প্রয়োগ নেই সরকারি ক্ষেত্রে। সেই সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে লোকসভায় স্মৃতি জানান, সরকারি কর্মচারীদের ঋতুকালীন ছুটির বিষয়ে আপাতত কোনও চিন্তাভাবনা নেই সরকারের। এ সংক্রান্ত কোনও প্রস্তাবও গ্রহণ হয়নি এখনও পর্যন্ত। ওই বিল অনুযায়ী, সরকারি বা বেসরকারি যে সব সংস্থা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের নথিভুক্ত, প্রত্যেককে তাদের মহিলা কর্মীদের জন্য ঋতুকালীন ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিমাসে ঋতুকালীন সময়ে দু’দিন করে ছুটি পাবেন তাঁরা। সব মিলিয়ে বছরে মোট ২৪টি ঋতুকালীন ছুটি নিতে পারবেন মহিলা কর্মীরা। ২০১৭ সালে কংগ্রেস সাংসদ নিনং ইরিং লোকসভায় ওই বিলটি আনেন। যা গৃহীতও হয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত ওই বিলের প্রয়োগ করেনি কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি সরকার।
আরও শুনুন: জন্ম ১৯৫৬ সালে, একের পর এক ‘কেলেঙ্কারি’র পর্দাফাঁস, কোন বলে এত শক্তিশালী ইডি?
এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্মৃতি জানান, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৭২ সালের সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিস (লিভ) রুলই মেনে চলছে। সেখানে মেয়েদের জন্য আলাদা করে আর্নড লিভ, হাফ পে লিভ, চাইল্ড কেয়ার লিভ বা মেটার্নিটি লিভের মতো ছুটির কথা থাকলেও ঋতুকালীন ছুটির মতো কোনও বিষয়ের উল্লেখ নেই বলেই জানিয়ে দেন স্মৃতি।
তবে ঋতুকালীন স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ২০১১ সাল থেকেই বেশ কিছু প্রকল্প নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সচেতনতা বাড়াতে চলছে প্রচারও। তবে সরকারি কর্মীদের ঋতুকালীন ছুটির বিষয়টি যে এখনও বিশ বাঁও জলে তা কার্যত স্পষ্ট করে দিয়েছেন নারী ও শিশুকল্যাণমন্ত্রী। এ নিয়ে এখনও তেমন করে কিছু ভাবছে না কেন্দ্রীয় সরকার।