প্রাণ ধারণের বার্তা দেয় যে ঋতুচক্র, তা নাকি অশুচি। আর তার জেরেই বৃক্ষরোপণের আয়োজনে থাকা হল না একাধিক ছাত্রীর। যা কিনা এক অর্থে প্রাণকে উদযাপন করারই উৎসব। কোথায় ঘটেছে এমন ঘটনা? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
একুশ শতকে দাঁড়িয়েও ঋতুচক্রের মতো একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের ছুঁতমার্গ রয়েই গিয়েছে। একদিকে সন্তানের জন্ম দিতে না পারা মেয়েদের নিয়ে কুকথার ঝড় বয়ে যায়, আরেকদিকে সেই জন্মের প্রক্রিয়া সূচিত করে যে ঋতুচক্র, তাকেও অশুচি বলেই দেখা হয় সমাজে। এহেন পরস্পরবিরোধী আচরণই ফের দেখা গেল এক সাম্প্রতিক ঘটনায়। যেখানে রজঃস্বলা বলে বৃক্ষরোপণে অংশ নিতে পারলেন না স্কুলের ছাত্রীরা। আর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন খোদ এক শিক্ষকই। সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের নাসিকে এমনই অভিযোগ জানিয়েছেন এক আদিবাসী ছাত্রী।
জানা গিয়েছে, নাসিকের কাছে দেবগাঁও-এর একটি সরকারি আবাসিক স্কুলে ঘটেছে এই বিতর্কিত কাণ্ড। দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে পাঠরতা ওই ছাত্রী জানিয়েছেন, আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি স্কুলে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু ঋতুচক্র চলাকালীন কোনও ছাত্রী ওই আয়োজনে শামিল হতে পারবেন না, এমনই ফতোয়া জারি করেন স্কুলেরই এক শিক্ষক। ওই ছাত্রীর অভিযোগ, ঋতুস্রাব চলছে এমন মেয়েরা চারা লাগালে আগুন লেগে যাবে গাছে, এই মর্মে সরব হয়েছিলেন ওই শিক্ষক। আর তার জেরেই বৃক্ষরোপণ উৎসব থেকে বাদ পড়েন একাধিক ছাত্রী। এমনকি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির কাছে যেতেও বাধা দেওয়া হয় তাঁদের। পাশাপাশি কোনও ছাত্রী অন্তঃসত্ত্বা কি না, তা পরীক্ষা করার জন্যও ছাত্রীদের বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। কোনও রকম প্রতিবাদ করলে পরীক্ষার নম্বরে তার প্রভাব পড়বে, এ কথা বলে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় তাঁদের, এমনটাই জানিয়েছেন অভিযোগকারিণী ছাত্রী। এই আধুনিক যুগে দাঁড়িয়েও এমন অবৈজ্ঞানিক মতের মুখোমুখি পড়ে কার্যত হতবাক ওই পড়ুয়ারা।
আরও শুনুন: জন্ম ১৯৫৬ সালে, একের পর এক ‘কেলেঙ্কারি’র পর্দাফাঁস, কোন বলে এত শক্তিশালী ইডি?
শেষ পর্যন্ত নাসিক শ্রমজীবী সংগঠনের সচিব ভগবান মাধের কাছে এই ইস্যুতে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ছাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসনও। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন আদিবাসী উন্নয়ন পর্ষদের আধিকারিকেরা। স্কুল পরিদর্শন করে এবং পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।