‘অ্যারাকনোফোবিয়া’। এই খটমট শব্দের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে খুব চেনা একটা ভয়। মাকড়সার ভয়। হ্যারি পটারের প্রিয় বন্ধু রন উইজলি মারাত্মক ভয় পেত মাকড়সায়। তার স্বপ্নে-দুঃস্বপ্নে প্রায়শই হানা দিত মাকড়সাদের দল। শুধু রনই নয়, আশপাশের অনেকেরই নাকি রয়েছে এমন ভয়। তা সেই ভয়ঙ্কর ফোবিয়ার চিকিৎসায় নাকি কাজে লাগানো হয় মাকড়সাদেরই। তবে জ্যান্ত মাকড়সা দিয়ে চিকিৎসা করা তো সবসময় সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে দ্বারস্থ হতে হয় রোবটের। আর এবার মৃত মাকড়সাকে কাজে লাগিয়ে আস্ত রোবট বানিয়ে তাক লাগালেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। কেমন সেই রোবট? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
কথায় বলে, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা। আর মাকড়সা-ফোবিয়ায় কাঁটা যাঁরা, তাঁদের ক্ষেত্রে নাকি চিকিৎসকেরা ব্যবহার করেন তেমনই দাওয়াই। মাকড়সা দিয়েই হয় মাকড়সা-ভীতির চিকিৎসা। তবে জ্যান্ত মাকড়সা দেখে অনেক সময়েই মারাত্মত ভাবে প্যানিকড হয়ে যান রোগীরা। কেউ কেউ অসুস্থও হয়ে পড়েন। সে জন্য রোবট ব্যবহার করারই চল। তাছাড়া চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে শিক্ষা, বহু ক্ষেত্রেই কাজে লাগে মাকড়সা-রোবটেরা।
আরও শুনুন: জলের নিচে বিশ্বের বৃহত্তম পোট্রেট, শহিদ বিক্রম বাত্রাকে অভিনব উপায়ে শ্রদ্ধা জানাল সেনা
তবে শুধু রোবট হলেই তো চলবেনা। সেই রোবটকে হতে হবে এক্কেবারে আসল মাকড়সার মতোই। নড়াচড়া থেকে চলাফেরা, সব ক্ষেত্রেই তা হতে এক্কেবারে আসল মাকড়সার কপি-পেস্ট। আর সে ব্যাপারটি নিয়ে গবেষণা করতে করতেই এক নতুন ধরনের পথ খুঁজে বের করেছেন একদল বিজ্ঞানী। মাকড়সা-রোবট বানাতে তাঁরা বেছে নিয়েছেন মৃত মাকড়সাকেই। অবাক হচ্ছেন শুনে। তবে এমন কাজই করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীদের ওই দলটি। যা চিকিৎসা ক্ষেত্রে তো বটেই, ব্যবহার করা যেতে পারে সিনেমার শুটিংয়ের ক্ষেত্রেও।
আরও শুনুন: করতেন জুতো সারাই, তাঁকেও অতিথি হিসাবে ডাক পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি কালাম
টেক্সাসের রাইস ইউনিভার্সিটির পড়ুয়া ফায়ে ইয়াপ এবং ড্যানিয়েল প্রেস্টন নামে এক ইঞ্জিনিয়ার দুজনে মিলে হাত দেন এই কাজে। বড়সড় আকারের উলফ স্পাইডার, যা দেখে প্রায়শই ভয় পাই আমরা, সেই মাকড়সাগুলিকে নিয়ে প্রাথমিক ভাবে এই গবেষণা শুরু করেন তাঁরা। নতুন এই রোবটের তাঁরা নাম দিয়েছেন ‘নেক্রোবোটিকস’। তাঁদের দাবি, মাকড়সার পা বিকল্প যন্ত্র দিয়ে তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। তাই মৃত মাকড়সার পা-গুলিকেই তাঁরা ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁদের তৈরি রোবটে। যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেগুলি যাতে নড়চড়া করে সেই ব্যবস্থা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, মাকড়সার পায়ে একটি বিশেষ ধরনের মাসল থাকার কারণে তারা নিজেদের পা অনেক দূর পর্যন্ত ছড়াতে পারে। সেই বিশেষত্বকেই যন্ত্রের সাহায্যে তাঁদের রোবটে যুক্ত করতে চান বিজ্ঞানীরা। যা রোবটটিকে একেবারে আসল প্রাণীর মতোই করে তুলবে। এই গবেষণা সফল হলে রোবটিকসের জগতে নতুন একটা পথ খুলে যাবে বলেই আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।