অতিমারী সময়ে অনেকেই নানা রকম জিনিসপত্র বানানোয় হাত পাকিয়েছিলেন। পুরনো ফেলনা জিনিস থেকে ঘর সাজানোর উপকরণ হোক বা অন্য কিছু। তবে এই ব্যক্তি নিজের সৃজনীক্ষমতাকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য স্তরে। তিনি বানিয়ে ফেলেছেন আস্ত একটা উড়োজাহাজ। পরিবারকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য টাকা জমিয়ে লোকে বিমানের টিকিট কেনেন। তবে এই ব্যক্তি গোটা বিমানটাই বানিয়ে ফেলেছেন একার চেষ্টায়। আসুন, শুনে নিই কেরলের এই ব্যক্তির কথা।
বেড়াতে যেতে কার না ভাল লাগে বলুন তো! আর তা যদি বিদেশ-বিভুঁই হয়, তো কথাই নেই। তবে শুধু যেতে চাইলেই তো হবে না, পকেটে রেস্তর পাশাপাশি পেতে হবে বিমানের টিকিট, ভাড়া করতে হবে গাড়ি। সে হাজারও হুজ্জুতি। আর সেই সব ঝামেলা এড়াতে তাই নিজের ইঞ্জিনিয়ারিং বুদ্ধির উপরেই ভরসা রেখেছিলেন এই ব্যক্তি। ঘরে বসে বসেই তিনি বানিয়ে ফেলেছেন আস্ত একটা উড়োজাহাজ। উদ্দেশ্য একটাই, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে যাওয়া।
কেরলের বাসিন্দা অশোক আলিসেরিল থামারাক্ষন। বাবা কেরলের একজন বিখ্যাত বিধায়ক। তবে পেশার কারণে অশোক থাকেন ব্রিটেনে। পালক্কড় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি-টেক শেষ করার পরে ২০০৬ সাল নাগাদ ব্রিটেন থেকে মাস্টার ডিগ্রি করেন অশোক। তার পর চাকরিবাকরি নিয়ে থিতু হয়েছেন সেখানেই।
আরও শুনুন: আজব পেশা! চুইংগাম ফুলিয়ে মাসে বিপুল অর্থ আয় করেন এই তরুণী
করোনা অতিমারী চলে এসে জীবনটাকে এক লহমায় থামিয়ে দিয়েছিল। আন্তর্জাতিক বা আন্তর্দেশীয়, কোনওরকম যাতায়াতেরই অনুমতি দিচ্ছিল রাষ্ট্র। অন্তত বেসরকারি পরিবহণে তো নয়ই। বাধ্য হয়েই নিজেদের বিমান তৈরির সিদ্ধান্ত নেন অশোক। করোনার দাপটে গোটা বিশ্ব জুড়ে যখন লকডাউন শুরু হয়, সেসময়েই বিমান তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে তাঁর। মোট দেড়হাজার ঘণ্টা সময় লেগেছে তাঁর উড়োজাহাজটি তৈরি করতে। খরচ হয়েছে মোটামুটি ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। অশোকের কাছে সে সময় এটা ছিল নতুন একটা খেলার মতো। দিব্যি সময় কেটে যাচ্ছিল বিমান তৈরির কাজে। প্রথম লকডাউনের সময় থেকেই টাকা জমাতে শুরু করেছিলেন অশোক এবং তাঁর পরিবার। বরাবরের শখ ছিল নিজেদের একটি বিমানের। তবে তা কেনার পথে না গিয়ে নিজের কারিগরী দক্ষতার উপরেই ভরসা রেখেছিলেন অশোকেরা। গত দুবছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেই স্বপ্নপূরণ করেছেন অশোক এবং তাঁর স্ত্রী অভিলাষা। আপাতত একটি চার আসন-যুক্ত এয়ারক্র্যাফ্টের মালিক তাঁরা। এর আগে বেড়ানোর জন্য দুই আসনের এয়ারক্র্যাফট ভাড়া করতেন তাঁরা। তবে ছেলেমেয়েদের নিয়ে ইদানীং সেই বিমানে স্থান সংকুলান করা মুশকিল হয়ে পড়ছে বেশ।
আরও শুনুন: একই গাছে ফলে ৩০০ প্রজাতির আম, আশ্চর্য গাছের মালিক লখনউয়ের বৃদ্ধ
ইতিমধ্যেই নতুন উড়োজাহাজটি নিয়ে জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া এবং চেক রিপাবলিক থেকে ঘুরে এসেছেন অশোক। শুধু পরিবার নয়, বেরিয়ে এসেছেন বন্ধুবান্ধবদের নিয়েও। আপাতত নিজের হাতে তৈরি বিমানে চড়ে নিজের বাড়ি, কেরলে আসতে চান তাঁরা। তবে ভারতীয় সরকার এবং এদেশের আইন ঘরে তৈরি বিমানকে ওড়ার অনুমতি দেবে কিনা, তা নিয়েই একটু সংশয়ে রয়েছেন তাঁরা। আর সেই জটিলতা কাটলেই নিজেদের বিমান নিয়ে উড়ে আসতে চান তাঁরা ভারতীয় মাটিতে। বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্যদেরও নিজের বিমানে করে ঘোরাতে চান বিভিন্ন দেশে। আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছে অশোকের গোটা পরিবার।