বয়সে খুদে হলে কী হবে, বুদ্ধিতে মোটেই খাটো নয় সে। বড় দুর্ঘটনার সামনে পড়েও মাথা ঠান্ডা রেখে মায়ের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করল মাত্র ন-বছর বয়সের ছেলেটি। বিপদের মুখ পড়লে কাণ্ডজ্ঞান না হারিয়ে কীভাবে তার সুরাহা করতে হয়, তারই যেন পাঠ দিল এই খুদে। ঠিক কী করেছে সে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক সে কথা।
আকস্মিক বিপদের মুখে পড়লে সেই মুহূর্তে যে ঠিক কী করা যেতে পারে, অনেক সময়ই সে কথা মাথায় আসে না। আর সেই হতভম্ব অবস্থার মধ্যেই পেরিয়ে যায় খানিক মূল্যবান সময়, যা হয়তো পালটে দিতে পারত সেই পরিস্থিতি। তবে এই খুদে কিন্তু সেদিক দিয়ে ব্যতিক্রম। বয়স মাত্র নয় বছর। কিন্তু উপস্থিত বুদ্ধিতে অনেককেই সে টেক্কা দিতে পারে। সম্প্রতি সে কথারই প্রমাণ দিয়েছে সে। এক বড়োসড়ো দুর্ঘটনার মুখে পড়েও বুদ্ধি হারায়নি সে, বরং মায়ের প্রাণরক্ষার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে ন’বছরের এই ছেলেটি। আর প্রকৃতপক্ষে সেই বুদ্ধি জুগিয়েছে তার টেলিভিশন দেখার অভ্যাস।
আরও শুনুন: দ্রৌপদী নাম হয়েছিল স্কুলে, নিজের ‘আসল’ নাম জানালেন দেশের নয়া রাষ্ট্রপতি
কী ঘটেছে ঠিক? তাহলে খুলেই বলা যাক।
সম্প্রতি নেটমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে, আলুথালুভাবে রাস্তায় পড়ে রয়েছেন এক মহিলা। অনুমান করা যায়, বেহুঁশ হয়ে গিয়েছেন তিনি। আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সিপিআর দিয়ে চলেছে একটি বাচ্চা ছেলে। সিপিআর তথা কার্ডিওপালমোনারি রিসাসাইটেশন হল চিকিৎসার এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে হৃৎপিণ্ডের উপরে বিশেষ কায়দায় চাপ দেওয়া হয়, পাশাপাশি রোগীর মুখ দিয়ে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিয়ে তার শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখারও চেষ্টা করা হয়। আসলে কোনও মানুষের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে এই পদ্ধতিটি তাঁর রক্তসঞ্চালন এবং শ্বাসক্রিয়া চালু রাখে। সেদিন বাইসাইকেলে চড়ে ছেলেকে কোনও জায়গা থেকে আনতে যাচ্ছিলেন তার মা। কিন্তু যাওয়ার পথেই একটি গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান মহিলা। একটি ব্যস্ত যানবহুল রাস্তার মাঝখানেই তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ওই ভিডিওতে। মাথার পিছনের ক্ষত থেকে রক্ত বেরিয়ে ভিজে গিয়েছে স্থানটি। ঘটনাচক্রে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল বাচ্চা ছেলেটি। কিন্তু মায়ের ওই অবস্থা দেখে কান্নাকাটি না জুড়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করার কথাই ভেবেছিল সে। ডাকাডাকি করে মাকে জাগাতে না পেরেই সে সিপিআর দিতে শুরু করে। যদিও ওই খুদেকে কেউ প্রথাগতভাবে সেই পদ্ধতি শেখায়নি বলেই জানিয়েছে তার পরিবার। তার বাবার মতে, টেলিভিশন দেখেই ওই পদ্ধতি এবং তার প্রয়োগের কথা জেনেছে ওই খুদে।
আরও শুনুন: অর্ধেক মানবী অর্ধেক উট, সার্কাসের দুনিয়ায় জনপ্রিয় এই ‘ক্যামেল গার্ল’ আসলে কে?
অবশ্য সিপিআর-এ যতখানি বলপ্রয়োগ করতে হয়, ততখানি শারীরিক শক্তি নেই বলেই হয়তো, মায়ের জ্ঞান ফেরেনি তখনই। তখন ছাতা ধরে মাকে রোদের তাপ থেকে আড়াল করে দাঁড়ায় ছেলেটি, যতক্ষণ না অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছায়। চিনের আনহুই অঞ্চলে ঘটা ওই ঘটনার বিবরণই সম্প্রতি একটি ভিডিওর সূত্র ধরে ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়।
হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছে মায়ের। প্রাণেও বেঁচে গিয়েছেন তিনি। তবে এই পুরো ঘটনা, বলা ভাল দুর্ঘটনাকে যেভাবে সামাল দিয়েছে ছোট্ট ছেলেটি, তা দেখে মুগ্ধ নেটিজেনেরা।