সমুদ্রের নিচে রয়েছে অদ্ভুত এক জলাশয়। সাঁতার কাটতে কাটতে একবার তার আশপাশে চলে গেলেই আর রক্ষা নেই। মুহূর্তে মরে কাঠ হয়ে যাবে সামুদ্রিক প্রাণী। কী এমন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে সমুদ্রের নিচে? আসুন, শুনে নেওয়া যাক।
পৃথিবীর বুকে যে কত রকমের রহস্য দানা বেঁধে আছে, এখনও হয়তো তার বেশিরভাগেরই হদিশ নেই মানুষের কাছে। আর সেই সব রহস্য উদঘাটনের জন্যই বছরের পর পর বছর পরিশ্রম করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। অতলে চলছে তলের খোঁজ। আর এবার তেমন রহস্যেরই খোঁজ পেলেন মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। লোহিত সাগরের নিচে তাঁরা পেয়েছেন আশ্চর্য এক লবণ জলাশয়ের খোঁজ। যার ধারেকাছে এলেই মরে পাথর হয়ে যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী। মানুষের জন্যও কম ক্ষতিকর নয় ওই লবণ-জলাশয়।
আরও শুনুন: ৭ ঘণ্টায় ৭৫ বার গাইলেন জাতীয় সঙ্গীত, দেশকে ভালবেসেই বিশ্বরেকর্ড তরুণীর
নয়া এই তথ্য অবাক করেছে বিশ্ববাসীকে। বিজ্ঞানীরাও কম অবাক হননি। সমদ্রের গভীরে সামুদ্রিক প্রাণের যে বিপুল রাজ্যপাট, তার মধ্যে যে এমন এক বিষ-জলাশয় লুকিয়ে রয়েছে, তা কে জানত! কিন্তু এই বিষ আসলে কী? কেনই বা তার আশেপাশে গেলেই মরে যাচ্ছে প্রাণীরা? মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যাম পুরকিন্সের নেতৃত্বে বিজ্ঞানীদের একটি দল সম্প্রতি সেই রহস্য খুঁজতেই কাজে নেমে পড়েন। রিমোটলি অপারেটেড আন্ডারওয়াটার ভেহিক্যল (ROV)-র মাধ্যমে অতল সমুদ্রে সন্ধান চালান বিজ্ঞানীরা। আর তারপরই জানা যায় প্রকৃত কারণ। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৭৭০ মিটার গভীরে রয়েছে ওই মারণ জলাশয়। জলাশয়টিতে লবণের পরিমাণ এত বেশি, যে, ওখানে কোনও ভাবেই অক্সিজেনের সন্ধান পায় না সামুদ্রিক প্রাণীরা। ফলত সেখানে গেলে মুহূর্তেই মৃত্যু নেমে আসে।
আরও শুনুন: কোথাও প্রসাদে মানা, কোথাও বসে ভূতের মেলা… অদ্ভুত রীতি দেশের এই ব্যতিক্রমী মন্দিরগুলিতে
বিজ্ঞানীদলের নেতৃত্বে থাকা পুরকিন্স অবশ্য জানিয়েছেন যে, সমুদ্রের অত গভীরে সাধারণত কোনও প্রাণী বা মাছ থাকে না। তবে মাঝেমধ্যে সামুদ্রিক প্রাণীরা ঘুরতে ঘুরতে ওই এলাকায় চলে গেলে তাদের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তাঁদের গবেষণা অবশ্য এখানেই থেমে থাকেনি। আশ্চর্যভাবে আর একটি বিষয়ের সন্ধান মেলে যা অবাক করেছে বিজ্ঞানীদের। দেখা যাচ্ছে, ওই লবণ-জলাশয়ের কাছে মাছ বা সামুদ্রিক প্রাণী না বাঁচলেও, সেখানে আনুবীক্ষণিক কিছু প্রাণ কিন্তু বেঁচে থাকতে সক্ষম। ব্যাপারটি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা চলছে বলেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই জলাশয়ের খোঁজ বিজ্ঞানে নতুন দরজা খুলে দিতে পারে বলেই আশাবাদী পুরকিন্স। কেননা এই আবিষ্কার দুটি সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। লক্ষ লক্ষ বছর আগে, কী ভাবে আমাদের গ্রহে সমুদ্র তৈরি হয়েছিল, সে ব্যাপারেও নতুন তথ্য জানা যেতে পারে এই গবেষণা থেকে। আর পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও অন্য কোনও প্রাণী আদৌ বেঁচে থাকতে পারে কি না, সে ব্যাপারেও জানতে সাহায্য করবে এই আবিষ্কার। মারণ-জলাশয়ের খোঁজ মিললেও আসলে যে তা জীবনের সন্ধানেই সহায়ক, এমনটাই বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের।